( জাগো কুমিল্লা.কম)
আমরা কি করবো, পুলিশ, ডিবি, র্যাব সেনাবাহিনী সবার কাছে ধর্ণা দিতে দিতে সময় পার করছি কিছুই হয় না। এখন শুধু আমার মেয়ের চলে যাওয়ার থেকে প্রতিটি দিনগুনি। খুনিদের ব্যাপারে বিচারে বিষয়ে কোন অগ্রগতি নেই। কথাগুলো বলছিলেন আর ভারী হয়ে উঠা চোখ কাপড়ের আঁচলে মুছছিলেন দুর্বৃত্তের হাতে খুন হওয়া কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাজান তনুর মা আনোয়ারা বেগম। পাশে বসে থাকা বাবা আনোয়ার হোসেন সন্তান হারানোর দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। কষ্ট সহ্য করতে না পেরে ভাইটাও চলে যায় বাড়ীর বাইরে।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যার ২৮মাস ২০জুলাই। দীর্ঘ সময়েও তনুর খুনিরা শনাক্ত হয়নি। খুনিরা চিহ্নিত না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন তনুর পরিবার এবং কুমিল্লার বিশিষ্টজনরা। তনুর পরিবার সন্দেহভাজন আসামিদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানিয়েছেন। তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেছেন,আমরা শুধু এখন বসে বসে মেয়ে তনু হত্যাকাণ্ডের মাস গুনি। কোথাও কোন আশার বাণী শুনতে পারছি না।
তনুর পরিবারের সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে একটি বাসায় টিউশনি করতে গিয়ে আর বাসায় ফিরেনি তনু। পরে তার স্বজনরা খোঁজাখুঁজি করে রাতে বাসার অদূরে সেনানিবাসের ভেতর একটি জঙ্গলে তনুর মরদেহ পায়। পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতয়ালী মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ ও ডিবি’র পর ২০১৬ সালের পয়লা এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি কুমিল্লা। তনুর দুই দফা ময়নাতদন্তে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফরেনসিক বিভাগ মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করেনি।
শেষ ভরসা ছিল ডিএনএ রিপোর্ট। গত বছরের মে মাসে সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিনজন পুরুষের শুক্রানু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। পরে সন্দেহভাজনদের ডিএনএ ম্যাচিং করার কথা থাকলেও তা করা হয়েছে কিনা- এ নিয়েও সিআইডি বিস্তারিত কিছু বলছে না। সর্বশেষ সন্দেহভাজন হিসেবে তিনজনকে ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সিআইডির একটি দল ঢাকা সেনানিবাসে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদ করা ব্যক্তিরা তনুর মায়ের সন্দেহ করা আসামি বলেও সিআইডি জানায়। তবে তাদের নাম জানানো হয়নি।
নারী নেত্রী মায়মুনা আক্তার রুবী বলেন, ‘তনুকে একটি সুরক্ষিত স্থানে হত্যা করা হয়েছে। ২৮মাসেও কোন আসামি শনাক্ত করা যায়নি। যা কোনো ভাবে মেনে নেয়া যায়না। হত্যাকারীদের দ্রুত শনাক্ত করার দাবি করছি।’
সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লার সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন,‘আইনের গতি এতো প্রলম্বিত হলে সঠিক বিচার নিয়ে মানুষের সন্দেহ সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিনেও তনুর হত্যার কোনে ক্লু উদ্ধার না হওয়া দুঃখজনক।’ কতদিন এই তদন্ত চলবে ?
তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘সার্জেন্ট জাহিদ ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকারী কে বেরিয়ে আসবে। কারণ সার্জেন্ট জাহিদের বাসায় টিউশনি করতে যাওয়ার পর জঙ্গলে তনুর মরদেহ পাওয়া যায়। দেখছি দেখছি বলে সিআইডি ২৮মাস পার করেছে। আমরা এখন বসে তনু হত্যাকা-ের মাস গুনি।কোথাও কোন আশার বাণী শুনতে পারছি না।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘সন্দেভাজন কয়েকজনের ডিএনও রিপোর্ট চলতি মাসে পাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু পাইনি। ডিএনএ পরীক্ষার সরঞ্জাম আমেরিকা থেকে আনতে হয়। তাই সময় লাগছে। আশা করছি দ্রুত রিপোর্ট হাতে পাবো।’
Leave a Reply