নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লা।।
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় মাতব্বর হাজী নুরুল হককে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে একই উদ্দেশ্যে খুন করার অপরাধে ৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড; সেই সাথে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড এবং আসামি মোঃ নান্নু মিয়াসহ অপর ১০জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড; সেই সাথে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড, অনাদায়ে আরও ৬ (ছয়) মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন কুমিল্লার আদালত।
২৬ জুন বুধবার দুপুর ১২টায় কুমিল্লার বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক জাহাঙ্গীর হোসেন এ রায় দেন।
মৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- কুমিল্লা ব্রাহ্মণ পাড়া উপজেলার ছোট ধুশিয়া গ্রামের মৃত আঃ আজিজ এর ছেলে মোঃ মাছুম (৩৫), মৃত আঃ লতিফ এর ছেলে তাজুল ইসলাম (৩২), আবদুল কাশেম এর ছেলে মোঃ মোস্তফা (২৪), ডাঃ মনু মিয়ার ছেলে মোঃ কাইয়ুম (২৫), আবদুল ছাত্তার এর ছেলে মোঃ কাইয়ুম (২৮), মৃত আব্দুল মালেক এর ছেলে মোঃ তবদুল হোসেন (৪০)।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত আসামিরা হলেন- কুমিল্লা ব্রাহ্মণ পাড়া উপজেলার ছোট ধুশিয়া গ্রামের মৃত ওয়াব আলীর ছেলে মোঃ নান্নু মিয়া (৪০), মৃত আলী মিয়ার ছেলে আঃ মতিন মিয়া (৪০), মৃত আঃ খালেক সাইদুল ইসলাম (২৪), সিদ্দিকুর রহমান এর ছেলে বাবুল মিয়া (২৫), মৃত আঃ লতিফ এর ছেলে সফিকুল ইসলাম (৩৫), মৃত নায়েব আলীর ছেলে মোঃ মোসলেম মিয়া (৪৫), নান্নু মিয়ার ছেলে মোঃ সফিকুল ইসলাম (২৮), মৃত আঃ বাতেন এর ছেলে মোঃ হেলাল মিয়া (২৫), সরু মিয়ার ছেলে মোঃ আউয়াল মিয়া (৩০) ও মৃত আঃ মতিন মিয়ার ছেলে বিল্লাল হোসেন (৩০)।
মামলার বিবরণে জানাযায়- স্থানীয় ফরিদ মিয়ার সহিত আসামি মাছুম মিয়ার বসত বাড়ীর জায়গা সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ বিরোধী চলিয়া আসাবস্থায় এক সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সালিসে আসামি মোঃ মাছুম মিয়ার বিরুদ্ধে রায় প্রদান করেন ভিকটিম হাজী নুরুল হক। এতে আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে ২০১১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী ভিকটিম কুমিল্লা থেকে বাড়ীতে যাওয়া পথে ছোট ধুশিয়া তবদুল মিয়া বসত ঘরের দক্ষিণ পাশে রাস্তার উপর আসামাত্র পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ভিকটিম মোঃ নুরুল হকের উপর হামলা করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করিলে নুরুল হক ঘটনাস্থলে মৃত্যু বরণ করেন। এ ঘটনায় পরদিন নিহতের ছেলে কুমিল্লা ব্রাহ্মণ পাড়া উপজেলার ছোট ধুশিয়া গ্রামের মোঃ শরীফুল ইসলাম (২৪) বাদী হয়ে একই গ্রামের মৃত আঃ আজিজ এর ছেলে আসামি মোঃ মাছুম মিয়াসহ ২২জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১২জনকে আসামি করে ব্রাহ্মণ পাড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করিলে তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ ইকতার মিয়া তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসামিদেরকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করেন। পরবর্তীতে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ইকতার মিয়া ও এএসপি ইৎতুত মিস ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আসামি মোঃ মাছুম মিয়াসহ ২০জনের নাম উল্লেখপূর্বক বিজ্ঞ আদালতে পৃথক দুটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরবর্তীতে মামলাটি বিচারে আসিলে ২০১৬ সালের ৪ জানুয়ারি সকল আসামিদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় অভিযোগ গঠনক্রমে রাষ্ট্র পক্ষে ৯জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে যুক্তিতর্ক শুনানি অন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আসামি মোঃ মাছুম মিয়াসহ ৬জনকে মৃত্যুদণ্ড; সেই সাথে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং আসামি মোঃ নান্নু মিয়াসহ অপর ১০জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড; সেই সাথে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড, অনাদায়ে আরও ৬ (ছয়) মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেন আদালত। এছাড়াও আসামি মোঃ মনিরুল ইসলাম ও হিরণ মিয়ার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন এবং আসামি মোঃ ফুল মিয়া ও মোঃ সেলিম রায়ের পূর্বে মৃত্যু বরণ করায় তাদেরকে মামলার দায় হইতে অব্যাহতি প্রদান করেন।
রায় ঘোষণাকালে আসামি মোঃ কাইয়ুম, মোঃ তবদুল হোসেন, নান্নু মিয়া, মতিন মিয়া, বাবুল মিয়া, সফিকুল ইসলাম, মোসলেম মিয়া, সফিকুল ইসলাম, মোঃ হেলাল মিয়া ও মোঃ আঃ আউয়াল আদালত কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন বাকী আসামিরা পলাতক রয়েছেন।
এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষে নিযুক্তীয় বিজ্ঞ কৌশলী এপিপি এডভোকেট মোঃ জাকির হোসেন বলেন আমরা আশা করছি উচ্চ আদালত উক্ত রায় বহাল রেখে দ্রুত কার্যকর করবেন।
আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এডভোকেট আবদুল মমিন ফেরদৌস।
Leave a Reply