অনলাইন ডেস্ক:
রোববার, বেলা ২টা। রাজধানীর নিউ মার্কেটের ৪ নম্বর গেটের অদূরে গোলচক্করের মাটিতে সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে অসংখ্য ফাস্টফুড। মুখরোচক এ খাবারের তালিকায় কি নেই- চিকেন বার্গার, পিৎজা, শর্মা, লাচ্ছি, চিকেন ফ্রাই, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ফ্রাইড রাইস, চিকেন ফ্রাই, কাটলেট, পাউরুটি, নান, বিফ মিট, চিকেন ভেজিটেবলস, স্যুপ, কাবাব, খিচুরি, মাংস, সস, তেল, ঘি, দই, লাচ্ছি, আপেল, কমলা আরও কি কত কি? মাটিতে পড়ে থাকা এ ফাস্টফুডের সামনে নাক চেপে দাঁড়িয়ে অসংখ্য উৎসুক জনতা।
তাদেরই একজন রাজধানীর কলাবাগানের বাসিন্দা সেলিমা হোসেনের কলেজপড়ুয়া মেয়ে ছন্দা পারভীন। মায়ের সঙ্গে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন। মানুষের ভিড় দেখে কৌতূহলবশত পচাবাসি দুর্গন্ধযুক্ত কথিত ফাস্টফুড দেখে ওয়াক থু, ওয়াক থু করতে লাগলেন। মায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, পয়সা দিয়ে কিনে এই ফাস্টফুড খাচ্ছি?
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে সেলিমা হোসেন বলেন, মেয়েটা ফাস্টফুড খেতে ভালোবাসে। নিউ মার্কেট আসলেই খায়। কিন্তু আজ চোখে যা দেখলাম, এত টাকা খরচ করে ‘বিষ’ কিনে খাওয়া একই কথা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)-এর উদ্যোগে আজ দুপুর ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত পচাবাসি, দুর্গন্ধযুক্ত খাবার বিক্রির অভিযোগে নিউ মার্কেটের আটটি ফাস্টফুড দোকানকে ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অভিযানের শুরুতেই ক্যাপিটাল ফাস্টফুড নামে একটি দোকানে অভিযানকালে ম্যাজিস্ট্রেট মো. মসিউর রহমান তেলাপোকায় খাওয়া আপেল ফ্রিজে রক্ষিত দেখতে পান। একই দোকান থেকে ফাঙ্গাস পড়ে থাকা কাবাব উদ্ধার করা হয়। এরপর একে একে সৈকত, আল আমিন, ক্যাপরি, প্যানজি, ফুড পার্ক, অ্যারোমা কিংস ও ওয়েস্টার্ন ফুড নামক দোকান থেকে বাসি খাবার জব্দ করা হয়। দোকানিরা স্বীকার করেন তারা সুকৌশলে ক্রেতাদের পুরনো বাসি খাবার খাইয়ে থাকেন।
ফুড পার্ক নামক একটি দোকানে প্রবেশ করে ম্যাজিস্ট্রেট দেখতে পান দোকানের সামনের কাচের সেলফে হাতেগোনা কয়েকটি চিকেন বন সাজানো। কাউন্টারের ভেতর প্রবেশ করে দুটি ফ্রিজ খুলে দেখেন ফ্রিজ খালি। এ অবস্থা দেখে মিডিয়াকর্মীদের ডেকে বলেন, আসেন যাদু দেখেন, এ দোকানেই সবচেয়ে বেশি পচা-বাসি খাবার মিলবে। এ সময় তিনি ডিবি পুলিশের একজন সদস্যকে ডেকে আশপাশে তল্লাশি চালানোর নির্দেশ দেন। হঠাৎ করে ম্যাজিস্ট্রেটের চোখ পড়ে এক কোনার উপরে জলছাদে পর্দা টানানো। পর্দা সরাতেই বেরিয়ে আসে একের পর এক পচাবাসি খাবার।
এ সময় ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, তিন বছরের দায়িত্বপালনকালে পচা-বাসি খাবার নিয়ে এমন লুকোচুরি আগে দেখেননি। পাশের আরেক ফাস্টফুডের দোকান থেকে তেলের গ্যালন উদ্ধার করা হয়। তেলের গ্যালনে রাখা পদার্থ কি মবিল নাকি তেল জানতে চাইলে কর্মচারীরা তেল বলে জানান। এ সময় তিনি তেল বোলে ঢালতে থাকলে আলকাতরা মতো কালো গাঢ় বস্তু পড়তে থাকে।
তিনি জানান, দিনের পর দিন বাসি তেল নতুন তেলের সঙ্গে মিশিয়া ফাস্টফুড ভাজা হয়।
অভিযানে নেতৃত্বদানকারী ম্যাজিস্ট্রেট মো.মসিউর রহমান জানান, নিউ মার্কেটের মতো অভিজাত এ মার্কেটে ফাস্টফুডের নামে এ ধরনের পচা-বাসি , দুর্গন্ধময় ও দীর্ঘদিন ফ্রিজে রাখা খাবার বিক্রি জঘন্য অপরাধের শামিল। এ কারণে ৮টি প্রতিষ্ঠানকে ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
Leave a Reply