(মোঃ নাজিম উদ্দিন, মুরাদনগর)
‘সেভেন স্টার’ সাত তারকা। সাধারণত আমরা তারকা বলতে আলোকিত বা খুব ভাল অর্থে কিছুর বর্ণনা করতে গিয়েই উদাহরণ স্বরূপ তা বলে থাকি। আর তা যদি ভঙ্কংকর অর্থে ব্যবহার করা হয়, তা হলে একটু আতকে উঠাই স্বাভাবিক। সাম্প্রতিক কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার স্থানীয়দের মধ্যে আতংঙ্কের প্রধান উপলক্ষ ‘সেভেন স্টার’ গ্রুপ। প্রথমত এই গ্রুপটি বিভিন্ন দেয়ালে চিকা মেরে ও ফেসবুকে এই গ্রুপের নাম ও ছবি পোস্ট করে এলাকায় আতংঙ্ক ছড়ায়।
পরে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করা, পথচারির কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে চাঁদা আদায় এবং চাঁদা না পেয়ে মারধর করে আহত করাসহ অসংখ্য অভিযোগ আছে এই গ্রুপটির বিরুদ্ধে। সর্বশেষ এক মুক্তিযোদ্ধার নবম শ্রেণীতে পড়–য়া ছেলেকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে গ্রুপটির সদস্যরা। এ ঘটনায় তার পরিবার থানায় অভিযোগ দায়ের করলে উল্টো প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে গ্রুপটির সদস্যরা।
‘সেভেন স্টার’ গ্রুপটির অধিকাংশ সদস্য উপজেলা সদরের প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান হওয়ায় আশেপাশের ২০ গ্রামের বাসিন্দারা ভয়ে আতস্থ।
গ্রুপটির প্রধান শাওন (২২) রহিমপুর গ্রামের জসিমের ছেলে। অপর সদস্য রাব্বি (২১) উপজেলা সদরের বিএনপি নেতা তকদিরের ছেলে। মফিজের ছেলে শাহজালাল (২৩)সহ বেশ কয়েকজন এই গ্রুপের সক্রিয় সদস্য বলে, অভিযোগের আলোকে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়।
থানায় অভিযোগ কারী মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান বলেন, ‘আমার ছেলে মুরাদনগর ডি আর সরকারী স্কুলে নবম শ্রেনীতে পড়ে। রহিমপুর গ্রামের কয়েকজন ছেলের সাথে তাদের (সেভেন স্টার গ্রুপ) মেয়ে সংক্রন্ত বিরোধ ছিল। আমার ছেলের বাড়ি রহিমপুর মনে করে তাকে মারাত্মভাবে পিটিয়ে আহত করে তারা। আজ তিনদিন সে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। এ ঘটনায় গত সোমবার থানায় অভিযোগ দায়ের করলে উল্টো গ্রুপটির সদস্যরা আমাকে ও আমার পরিবারের লোকজনকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাদিক ব্যাক্তি এই প্রতিবেদককে বলেন, ধামঘর ইউপির ভুবনঘর গ্রামের নবম শ্রেণীর ছাত্রী সুমি (ছদ্ম নাম) এই সেভেন স্টার গ্রুপের উত্ত্যক্ত কারণে স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। বাখরাবাদ গ্রামের জামালের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও তার পকেট থেকে তিনশ টাকা এবং মুরাদনগরের বাবুর কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও দুই হাজার পাঁচশ টাকা ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া মধ্যনগর গ্রামের এক হিন্দু পরিবার থেকে ত্রিশ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করে তারা। এবং গ্রুপটি করিমপুর গ্রামের ব্যবসায়ী মতিনের ছেলের কাছ থেকে ৪৮ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় বলে তার পরিবার সূত্র জানায়।
এই গ্রুপের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ রয়েছে, যদি কেউ জমি কেনা বেচা করে অথবা জমিতে মাটি ভরাট বা বাড়িতে বিল্ডিং তৈরি করে তাহলে তারা গিয়ে চাঁদা দাবি করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, উর্তি বয়সের বকে যাওয়া এই ছেলেরা প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান হওয়ায় ভয়ে অনেকেই মুখ খোলার সাহস পায় না। তবে দিন দিন তারা বেপরোয়া হয়ে এলাকাবাসির আতংঙ্কের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।
সেভেন স্টার গ্রুপটির প্রধান, শাওনের এক নিকট আত্মীয় বলেন, পরিবারের আয়ত্তের বাহিরে চলে গেছে সে। বাড়ি থেকে বাহির হয়ে গেলে কয়েকদিন তার কোন হদিশ থাকে না। গ্রুপের অপর সদস্য রাব্বি নেশায় আশক্ত হয়ে নানান অপকর্মের সাথে জড়িয়ে গেলে পরিবার তাকে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়। কিন্ত রাব্বি দুমাসের মাথায় বিদেশ থেকে ফিরে এসে সেভেন স্টার গ্রুপের সক্রিয় সদস্য হয়ে যায়।
মুরাদনগর থানার ওসি একেএম মনজুরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এই গ্রুপটির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply