কুমিল্লা প্রতিনিধি।।
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বালিনা আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা অলিউল্লাহ মাদানীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ মাদরাসার বিভিন্ন ফান্ড ও অনুদান থেকে ২০ লাখ ৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ, প্রতিষ্ঠানের টাকায় ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য মোবাইল-ফ্যান ক্রয়, সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের অনুদানের টাকা ও ফরম ফিলাপের টাকা আত্মসাৎ করেন এই অধ্যক্ষ। দুর্নীতির খবরে স্থানীয়রা প্রতিবাদ জানালে দোষ স্মীকার করে রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) নিজ পদ থেকে অব্যাহতি দেন মাওলানা অলিউল্লাহ মাদানী৷ এছাড়া মাদরাসা অনুদানের টাকা আত্মসাতের দায় স্মীকার করে একটি লিখিত অঙ্গীকার নামায় স্বাক্ষর করেন অধ্যক্ষ।
লিখিত অঙ্গীকার নামায় অধ্যক্ষ অলিউল্লাহ বলেন, ‘২০২৩ সালের মাদ্রাসার অনুকূলে শিক্ষা অধিদপ্তর হতে বরাদ্দকৃত পাঁচ লাখ টাকা উত্তোলন করেছি। শিক্ষক এবং গভর্নিং বডি সদস্যদের সাথে পরামর্শ না করে উক্ত টাকা আত্মসাৎ করেছি। তবে শিক্ষকদের মাঝে আমি নব্বই হাজার টাকা বিতরণ করেছি। সুবিধা বঞ্চিত অত্র মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ৭৫ হাজার টাকা আমি নিজে বিভিন্ন নামে স্বাক্ষর করে আত্মসাৎ করেছি’।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, মাওলানা অলিউল্লাহ মাদানী বালিনা ইসলামিয়া আলিম মাদরাসার জনতা ব্যাংক একাউন্ট থেকে সাত বারে ৪ লাখ ৭৫ হাজার, সোনালী ব্যাংক থেকে দুই বারে ৫ লাখ ২০ হাজার, অগ্রণী ব্যাংক থেকে পাঁচ বারে ২ লাখ ৫৯ হাজার টাকাসহ মোট ১২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা চেক জালিয়াতি করে উত্তোলন করেন।
এই বিষয়ে মাদরাসা সাবেক সভাপতি তফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘ব্যাংকে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে আমাকে কিছুই জানায়নি অধ্যক্ষ। আমার সিঙ্গনেচার নকল করে তিনি ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। বিষয়টি এখন প্রকাশ হওয়ায় আমি জানতে পেরেছি’।
২০২৩ সালে সুবিধা বঞ্চিত ১৫ শিক্ষার্থীর অনুদানের ৭৫ হাজার টাকা আত্মসাত করেন অধ্যক্ষ। শিক্ষার্থীদের সহায়তা বিবরণীতে দেখা যায়, শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকের স্বাক্ষরের মাধ্যমে অনুদানের টাকা বিতরণ করা হয়েছে৷ অনুদানের বিবরণীতে নাম থাকা মাদরাসার শিক্ষার্থী মানসুরা আক্তার জুমা ও মাহিনুর আক্তার জানান, ‘অনুদানের টাকা এসেছে সে বিষয়ে তারা জানেন না৷ টাকাও পায়নি। অনুদানের বিবরণীতে তারা স্বাক্ষর করেনি। স্বাক্ষর নকল করে অধ্যক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
স্থানীয় অন্তত ৩০জন ব্যক্তি জানান, ‘দুর্নীতির কথা অধ্যক্ষ সবার সামনে স্বীকার করেছেন ও সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। একটা দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এতিম ও শিক্ষার্থীদের টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন। আমরা তার বিচার চাই।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বালিনা আলিম মাদরাসার একাধিক শিক্ষক জানান, ‘অধ্যক্ষ হুজুর স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাব দেখিয়ে যা ইচ্ছা তাই করতেন। এসব অনিয়মের কেউ প্রতিবাদ করলে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিতেন’।
মাদরাসার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মায়মুনা আক্তার ও সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গরমে ক্লাস করি। আমাদের অনেক রুমে ফ্যান নাই৷ আমাদের অনেক কষ্ট হয়। অধ্যক্ষ হুজুর মাদরাসার অনুদানের ফ্যান বাসায় নিয়ে গেছেন। এমন অধ্যক্ষ চাই না’।
অভিযোগের বিষয়ে বালিনা আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা অলিউল্লাহ মাদানী বলেন, ‘ শিক্ষার্থীদের অনুদানের টাকা, ফ্যান ও মোবাইল ফিরিয়ে দিবো। ইতিমধ্যে কিছু দিয়েছি। সভাপতি সিঙ্গনেচার করা খালি চেক রেখে যেতেন। তিনি নানা জায়গায় থাকতেন ব্যবসায়ী কারনে। তাই জরুরী প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করতে হয়েছে। অন্যান্য টাকার যে অভিযোগ আছে, সেসব টাকা মাদরাসার কল্যাণে খরচ করা হয়েছে’।
অব্যাহতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ চাপে পড়ে অব্যাহতি ও অঙ্গিকার নামা দিয়েছি। আমি নির্দোষ’।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল করিম বলেন, ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে উল্লেখিত অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হবে। সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স ম আজহারুল ইসলাম বলেন, ২৩ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ সংক্রান্ত একটি সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সভায় উভয় পক্ষকে ডাকা হয়েছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে
Leave a Reply