সাদিক মামুন :
সারা বছরই কেনার সামর্থ্য রয়েছে এমন পরিবারে গরুর দুধের চাহিদা থাকে। বিশেষ করে রোজায় এসব পরিবারে গরুর দুধের চাহিদা কয়েকগুন বেড়ে যায়। খাঁটি গরুর দুধের আশায় এক বাজার থেকে আরেক বাজার ঘুরে বেড়ান ক্রেতারা। কিন্তু খাঁটি ও ভেজালমুক্ত গরুর দুধ কি ক্রেতাদের হাতে মিলে।
একবাক্যে বলা যায় মিলে না। আর যা মিলে তাতে পানি মেশানোই বেশি থাকে। কেবল রোজাই নয়, বছরের প্রতিদিনই কুমিল্লা নগরীর রাজগঞ্জের রাজবাড়ী কম্পাউন্ড, চকবাজার তেরিপট্টি মোড়, শাসনগাছা বাদশা মিয়ার বাজার, পদুয়ার বাজার এলাকায় খাঁটি গরুর দুধের নামে ক্রেতাদের কাছে পানিমিশ্রিত দুধ বিক্রি করে আসছে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা। এধরণের ভেজাল দুধ বিক্রির প্রতিযোগিতায় প্রতারণার শিকার ও শারীরিক অসুস্থতার মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে ক্রেতাদের।
কুমিল্লা নগরীর ওইসব স্থানে গরুর দুধ খাঁটি বলে বিক্রি করলেও বেশিরভাগ বিক্রেতাই অসাধু প্রকৃতির। তারা প্রতি কেজি দুধে আড়াইশ গ্রাম পানি মিশিয়ে বিক্রি করে থাকে। কুমিল্লার সোয়াগঞ্জ, চৌয়ারা, বরুড়া, বাগমারা, সদরের পাঁচথুবি, আমড়াতলি এলাকা থেকে খাঁটি গরুর দুধ সংগ্রহ করে বেপারীরা। তারপর দুধে পরিমাণমত পানি মিশিয়ে তা বিক্রি করে পেশাদার দুধ বিক্রেতাদের কাছে।
এসব বিক্রেতারা আবার ওই পানি মেশানো দুধে ফের পানি মিশিয়ে বাজারে এনে বিক্রি করে। ক্রেতারা দুধে আঙ্গুল চুবিয়ে বা দুধ হাতের তালুর উপরিঅংশে নিয়ে ঘষে দেখেন খাঁটি কিনা। ঘর্ষনে ফেনা না উঠলেও বিক্রেতাদের কিড়াকসমের পাল্লায় পড়ে পানিমিশ্রিত দুধই খাঁটি ভেবে কিনে নিচ্ছেন ক্রেতারা। এভাবে কুমিল্লায় গরুর দুধ বিক্রির স্থানগুলোতে চলছে ক্রেতা ঠকানোর প্রতিযোগিতা।
নগরীতে পানিমিশ্রিত ভোজাল দুধের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে মোবাইলকোর্ট পরিচালনার পর আর হয়নি। ওই সময়ে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও এসিল্যান্ড বর্তমানে সদর দক্ষিণ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রূপালী মন্ডল মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করে নগরীতে ভেজাল দুধ বিক্রেতাদের অর্থদন্ড দেন।
ওই অভিযানে বেরিয়ে আসে বেপারী ও খুচরা বিক্রেতারা কিভাবে দুধে পানি মেশায়। বর্তমানে প্রতিনিয়ত ছোট ড্রাম, কলস, প্লাষ্টিকের বোতলে রেখে পানি মেশানে দুধ বিক্রি হচ্ছে উল্লেখিত স্থানসমূহে। ল্যাকটোমিটারের সাহায্যে দুধের ঘনত্ব নির্ণয় বা দুধ খাঁটি কিনা তার অস্তিত্ব পরীক্ষা করার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থাকলেও এব্যাপারে সিটি করপোরেশনের সেনিটেশন বিভাগ যেমন উদাসিন তেমনি জেলা প্রশাসনের মোবাইলকোর্টেরও পা পড়েনা দুধ বাজারে। খোলা এলাকার দুধে ভেজাল থাকার কারণে বর্তমানে ফ্রিজে রক্ষিত বিভিন্ন ডেইরিফার্মের প্যাকেট বা বোতলজাত দুধ কিনে নিচ্ছেন অনেকেই।
তবে বেশিরভাগ ক্রেতাই ওইসব খোলা এলাকা থেকে দুধ কিনে থাকেন। মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় ও স্পর্শকাতর তরল খাবার গরুর দুধে যাতে পানি মিশিয়ে ভেজাল সৃষ্টি করতে না পারে এজন্য ক্রেতারা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন। সূত্র: ইনকিলাব
Leave a Reply