(নাজিম উদ্দিন, মুরাদনগর)
কলেজশিক্ষিকা রোকসান আরা পারভিন (৩৫) সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। আশায় ছিলেন কিছু দিন পর ঘর আলো করে আসবে প্রথম সন্তান। কিন্তু সেই আশা পূরণের আগেই করোনার কাছে হেরে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) রাত ২টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
রোকসান আরা পারভিন কুমিল্লার মুরাদনগরের হায়দরাবাদ বেগম জাহানারা হক ডিগ্রি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার কসবা থানার কাউতলি গ্রামের আমানুল্লাহর মেয়ে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, হঠাৎ রোকসান আরা পারভিন লিপির শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। তাকে কুমিল্লার একটি বেসরকারি হাসপাতালে গাইনি চিকিৎসককে দেখানো হয়। কিন্তু সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। করোনা পজিটিভ হওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তার অবস্থার অবনতি হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে আইসিইউতে থাকা অবস্থায় মঙ্গলবার রাত ২টায় মারা যান তিনি।
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সোহেল রানা বলেন, ম্যামকে আর জীবনেও দেখতে পারব না। এটা ভাবতেই চোখে পানি চলে আসে। আল্লাহ আপনি আমাদের ম্যামকে জান্নাতবাসী করেন।
রোকসান আরা পারভিন লিপির সহকর্মী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, অফিসের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে তিনি বসতেন নিয়মিত। এখনো চোখে ভাসছে ম্যাডামকে। তিনি না ফেরার দেশে চলে গেছে ভাবতে অবাক লাগছে। সারা দিন খুব খারাপ গেছে। করোনায় আমাদের এক সহকর্মীকে হারালাম। দোয়া করি, আল্লাহ যেন তাকে মাফ করে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন।
হায়দরাবাদ বেগম জাহানারা হক ডিগ্রি কলেজের প্রিন্সিপাল (ভারপ্রাপ্ত) সৈয়দা ইয়াছমিন আক্তার বেগম জাগো কুমিল্লাকে বলেন, রোকসান পারভিন পাঁচ বছর ধরে এই কলেজে শিক্ষকতা করছে। প্রথম সন্তানের মুখটাও দেখতে পারল না। তার মৃত্যুর খবরটি আমাদের জন্য খুবই বেদনাদায়ক। তার অসুস্থতার খবর শুনে আট আগস্ট কলেজে দোয়ার আয়োজন করা হয়েছিল।
ভেবেছিলাম, তিনি আমাদের মাঝে আবারো ফিরে আসবেন। কিন্তু আর ফিরে আসেনি। অক্সিজেন লেভেল বাড়ানো যাচ্ছিল না। সংকটাপন্ন অবস্থায় মারা যায় তিনি। মঙ্গলবার দুপুরে শ্বশুরবাড়ি কসবা উপজেলার বাদুইড় গ্রামে জানাজা শেষে পরিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
Leave a Reply