অনলাইন ডেস্ক:
দেশের আমের বাজার এখন বিষাক্ত। দেশের প্রধান শহরগুলোর আমের বাজার কার্যত বিষের বাজারে পরিণত হয়েছে। পবিত্র রমজান মাসে অতিরিক্ত মুনাফার জন্য শক্তিশালী বিষাক্ত সিন্ডিকেট ভীষণ সক্রিয়। রোজার ইফতারে ফলের মেন্যুতে আম নামের বিষের পেয়ালা তুলে দিতে সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে। জনস্বাস্থ্য উপেক্ষা করে সিন্ডিকেট সাধারণ মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এমন কয়েকটি বিষাক্ত আমের বাজারের খবর পেয়ে তা ধ্বংস করেছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছে, রোজার বাজারে বিষমুক্ত আম পাওয়াটা এবার কঠিন হয়ে পড়বে। মাত্র ১০০ গ্রাম ক্যালসিয়াম কার্বাইড প্রায় ১০০ কেজি আম পাকাতে পারে। এই রাসায়নিক ক্যানসার, কিডনি ও লিভার সমস্যায় মানুষের মৃত্যু ঘটাতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমের বোঁটা শুষ্ক থাকলেই নিশ্চিত যে, এতে রাসায়নিক মেশানো হয়েছে। মারাত্মক ক্ষতিকর ক্যালসিয়াম কার্বাইডের পাশাপাশি ইথাফোন গ্রীষ্মকালীন ফলে ব্যবহার করা হয়ে থাকে ফল রাতারাতি পাকানো ও আকর্ষণীয় রঙের জন্য এবং ফরমালিন ব্যবহার করা হয় ফল সংরক্ষণের জন্য। জানা যায়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আম নগদ অর্থ আয়কারী প্রধান মৌসুমি ফল এবং এই সুস্বাদু ফলের জন্য বিখ্যাত রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অর্থনীতিতে আমের প্রাধান্য রয়েছে। রাজশাহী ফল গবেষণা সূত্র জানায়, ব্যবসায়ীরা তিনটি পর্যায়ে রাসায়নিক মেশাচ্ছে।
আমের ভালো রং তৈরি, পাকানো ও আম না পচার জন্য এখানে রাতদিন শত শত মণ আমে স্প্রে করে মেশানো হচ্ছে ভারত থেকে চোরাই পথে আমদানি করা রাইস মিথানল, কারবাইট সালফেট, ফরমালিনসহ বিভিন্ন প্রকারের বিষাক্ত কেমিক্যাল। যা দেহের বিভিন্ন কোষ ধ্বংস করে মানুষকে দ্রুত মৃত্যুর দিকে পতিত করে। আম ব্যবসায়ীরা জানান, যশোর, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ অন্যতম আমের বাজারে প্রত্যেক মৌসুমে হাজার হাজার মণ বিভিন্ন প্রজাতির আম এখান থেকে ঢাকা-খুলনাসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে চলে যায়। এই বাজারে প্রায় ৪ শতাধিক আমের আড়ত রয়েছে।
এসব আড়তেরও আছে এক বা একাধিক গুদাম ঘর। তাছাড়া বাজারের আশপাশে প্রায় শতাধিক বাড়ি নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে প্রতি মৌসুমে স্প্রেসহ আম রাখার কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। প্রতিদিন এখানে হাজার হাজার মণ আম কেনাবেচা হয়ে থাকে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত ব্যাপারী এই বাজারে আসেন। আড়তে আম বিক্রি হওয়ার পর চলে যায় আগে থেকে নির্দিষ্ট করা গুদামঘর বা বাসাবাড়িতে। এরপর ঘরের মেঝেতে আম সুন্দর করে বিছিয়ে রাইস মিথানল, কারবাইট সালফেট, ফরমালিন একত্রে মিশ্রিত করে আমের ওপর স্প্রে করা হয়। ফ্যানের বাতাসে কিছুক্ষণ শুকানোর পর প্লাস্টিক কার্টন অথবা ক্যারেটে পুরাতন খবরের কাগজ মুড়িয়ে প্যাকিং করা হয়।
এরপর ট্রাকে লোড দিয়ে পাঠানো হয়ে থাকে ঢাকা-খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে। এ ক্ষেত্রে যারা আম স্প্রে করাসহ প্যাকিং করে থাকে তাদেরও স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন রাইস মিথানল, কারবাইট সালফেট, ফরমালিনসহ বিষাক্ত কেমিক্যাল একত্রে মিশিয়ে স্প্রে করা আম খেলে মানুষের পেটের ব্যথা, লিভার সিরোসিস, কিডনি নষ্ট, হৃদযন্ত্রের ক্ষতিসহ দেহের কোষকলা ধ্বংস হয়ে শারীরিক বিপর্যয় ঘটতে পারে। এমনকি অধিক মাত্রায় এই আম খেলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। গত মঙ্গলবার রাজধানীর সবচেয়ে বড় ফল আড়ত বাদামতলীতে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতে শত শত মণ ফল ধ্বংসের পর এবার কারওয়ান বাজারের ফল আড়তে অভিযান চালায় র্যাব, বিএসটিআই ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের যৌথ টিম।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম ভ্রাম্যমাণ আদালতের নেতৃত্ব দেন। এ সময় ফলে ইথোফেন থাকার অভিযোগে ৪০০ মণ আম ধ্বংস করা হয়। কারওয়ান বাজারের মতো ফল বাজারে ভেজালচক্র ক্ষতিকর কেমিক্যাল মিশিয়ে বাজারজাত করছে। রমজান মাসে এসব খেয়ে সবাই অসুস্থ হয়ে পড়বে। তা ছাড়া এটি মারাত্মক অপরাধ। র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম বলেন, ‘অসাধু ব্যবসায়ীরা ফল পাকাতে এখন ব্যবহার করছেন ইথোফেন। ইথোফেন একটি হরমোন স্প্রে। এটি জমিতে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তাড়াতাড়ি লাভের আশায় ব্যবসায়ীরা সরাসরি এখন আমে ব্যবহার করছে।
এই আম খেলে ডায়রিয়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া মাত্রাতিরিক্ত ইথোফেন মানবদেহে প্রবেশ করলে ক্যানসার ও কিডনি নষ্টসহ মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে।’ তিনি বলেন, প্রত্যেকটি ফলই প্রাকৃতিকভাবে পাকবে এটিই স্বাভাবিক, কিন্তু আমাদের কিছু ব্যবসায়ী সেটি মানতে নারাজ। তারা বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করে অপরিপক্ব ফল জোর করে পাকিয়ে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য সমূহ বিপদ ডেকে আনছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ফলের আড়তে ইথোফেন দিয়ে অপরিপক্ব ফল পাকানোর দায়ে র্যাব, বিএসটিআই ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের যৌথ সহযোগিতায় পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন এবং জব্দ করেন এক হাজার মণ আম, ৪০ মণ নষ্ট খেজুর যা ধ্বংস করা হয়েছে।
Leave a Reply