( জাগো কুমিল্লা.কম)
কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট মহাসড়কে অতিরিক্ত জিবি ও চাঁদা আদায়কারীদের হাতে প্রতিনিয়ত লাঞ্ছিত হচ্ছে যাত্রী সহ সাধারণ পরিবহন শ্রমিকরা এরই প্রতিবাদে বুধবার বুড়িচং উপজেলার কংশনগর সড়কে পরিবহণ শ্রমিক ও মালিকরা গাড়ী বন্ধ রেখে মিছিল ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। এসময় প্রতিবাদকারী আন্দোলনরতরা জানায় ক্যান্টনমেন্ট বাসষ্টান্ড থেকে ছোট এই লোকাল পরিবহন থেকে প্রতিট্রিপে ৬০ টাকা এবং প্রথম ট্রিপে ৯০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। যা কয়েকদিন আগেও ৩০টাকা করে নেয়া হতো।
শুধু তাই নয় অনেক সময় টাকা না থাকলে পরে দেয়ার কথা বললেই অকথ্য ভাষায় গালাগাল সহ মারধর করা হয়। প্রভাবশালী এ মহল ইজারার টোল আদায়ের নামে কোন রশিদ না দিয়ে নিজেদের ইচ্ছে মত জোর জুলুম করে চাদা আদায় করছে বলে অভিযোগ করেন লেগুনা চালক ও মালিকরা। কংশনগর এলাকার চালক কামাল মিয়া (৪০) অভিযোগ করে বলেন টোল আদায়কারী আজাদ নামের জনৈক ব্যক্তি তাকে বেদম মারধর করে।
আরেক চালক সুমন মিয়া (৩০) জানায় নামাজের জন্য যাওয়ায় গাড়ী সরাতে একটু দেরী হওয়ায় তাকে মারতে উদ্যত হয় নামাজ পড়া নিয়ে বাজে গালাগাল সহ মা বাবাকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে চাদা আদায়কারী এই আজাদ। এছাড়া উপস্থিত আরো অনেকেই অভিযোগ করে বলেন কোন কথা বা অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হতে হয় চালক ও শ্রমিকদের। যাত্রীর সাথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ে বাক বিতন্ডা হলেও চাঁদা আদায়কারী সেন্ডিকেটের কাছে অপমানের শিকার হওয়ার কথা জানান অনেক যাত্রী। এই সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী ময়নামতি চানসার এলাকার মিঠু মিয়া প্রতিবেদক কে জানান অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে প্রতিদিনই
যাত্রীদের সাথে ঝগরা হয় এ সড়কে। গত ৬/৭ আগেও ১০টাকা ছিলো ক্যান্টনমেন্ট টু দেবপুরের ভাড়া এখন নেয়া হয় ডাবল মানে ২০টাকা। ২/৩কি.মি এর রাস্তায় এটা কি রাম রাজত্ব নাকি ? প্রশ্ন রাখেন তিনি।
সারদিন ৫/৬ট্রিপ গাড়ী চালিয়ে অসহায় দরিদ্র চালক শ্রমিকরা পরিবার পরিজনের অন্ন জোগাতে কষ্ট হচ্ছে জানিয়ে তারা অভিযোগ করেন। “সারাদিন যদি মোট ইনকামের অর্ধেকের বেশী চাদা আর জিবি দিতে হয়। এরপর মালিক জমা, তৈল মবিল, গাড়ীর খরচ দিয়ে নিজেরা কি পাই? কাজ করে খেতে না পারলে তবে কি চুরি ডাকাতি করবো আমরা। আমরা কি পরিশ্রম করে পরিবার পরিজন নিয়ে বেচে থাকতে পারবো না। ”
সড়ক মহাসড়কে চাঁদা, জিবি, টোকেন মানি’র যাঁতাকলে নির্যাতিত অসহায় হয়ে পরেছেন শ্রমিকারা।এ নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ শেষে কংশনগর থেকে ফেরার পথে ক্যান্টনমেন্ট জেনারেল হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকের পথরোধ করেন চাঁদাআদায়কারী আজাদের ভাতিজা আমতলী এলাকার মহিউদ্দিন। অকথ্য ভাষায় গালাগাল সহ হুমকি ধমকি দিতে থাকেন ঐ ব্যাক্তি সহ তার সঙ্গীরা।
সড়কের অনিয়ম ও লুটপাট নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলে ভয়ংকর পরিণতি হবে বলে সাংবাদিককে মহাসড়কেই হুমকি দেয় জনসম্মুখে । রেকিডিং করা হচ্ছে ভেবে প্রকাশ্যে ক্যান্টনমেন্ট সড়কে সাংবাদিকের মোবাইল ও ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টাও করেন এসময় মহিউদ্দিন ও তার সাথের কয়েকজন। এবিষয়ে সাংবাদিক মাহফুজ বাবু পেশাগত কাজে বাধা সহ প্রাণ নাশের আশংকায় ভীত সন্তস্ত্র এবং ছিনতাই চেষ্টার অভিযোগে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় জিডি করার প্রক্রিয়া করছেন বলে জানান।
ইজারার অজুহাতে নেতা, পুলিশ, লাইনম্যান ও জনপ্রতিনিধিদের নাম ভাঙ্গিয়ে চলছে লুটের মহোৎসব।দিনের আলোতে খোদ সড়ক ও রাজপথে প্রকাশ্যে এমন চিত্র দিনের পর দিন যেন বেড়েই চলেছে। সেই সাথে বেড়ে চলেছে দৈনিক নিত্যনতুন হয়রানী আর যাত্রীদের সীমাহীন বিরম্বনা। ৫টাকা গাড়ী ভাড়ার জায়গায় যাত্রী থেকে নেয়া হচ্ছে ২০টাকা! প্রতিবাদ করলেই অপমান এবং লাঞ্ছিত হতে হয় ছাত্রছাত্রী, নারীসহ ও অসহায় যাত্রীদের। নিরুপায় যাত্রীসহ সাধারণ মানুষ যেন জিম্মি হয়ে পরেছে পরিবহণ ও সড়ক মহাসড়কের এই চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের হাতে। ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে, দেখছি, ঠিক হয়ে যাবে, তদন্ত করা হবে এমন সব গা ভাসানো জবাব দিয়েই এড়িয়ে যাওয়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলায় দিনদিন বেড়েই চলেছে ডিজিটালাইজড এ দেশে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি।
ডিজিটাল বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী একটি জেলা কুমিল্লা। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গোট জেলার বিভিন্ন উপজেলার সড়কগুলোতো রয়েছেই মহাসড়কেও চলছে লুটপাট আর চাঁদাবাজির মহোৎসব। মহাসড়ক ইজারা দেয়ার কোন বিধান রয়েছে কি না তা জানেন না সংশ্লিষ্টদের অনেকেই।
নাম মাত্র রাজস্ব আদায়ে মহাসড়কে ইজারা নিয়ে ১০/২০ গুন থেকে ৫০গুন বেশী অর্থ আদায় করা হচ্ছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের কাছ থেকে। এতে করে দেশের রাজস্ব খাত যতটা না লাভবাণ হচ্ছে তার চেয়ে বেশী সমালোচিত এবং নীন্দিত হচ্ছে জনগনের কাছে গণতান্ত্রীক এ সরকার। সাধারণ মানুষের কাছে এটি শোষন হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে। তবে আবার বেশকিছু ক্ষেত্রে এসবের জন্য দায়ী ইজারাদার এবং দাতা প্রতিষ্ঠান মহলগুলোও। ইজারাদাতা প্রতিষ্ঠানের টোল আদায়ের হার ধার্য না করায় এবং অদৃশ্য কারনে তদারকি এবং দেখভাল না করায় ইচ্ছামত আদায় করা হয় টোল বা জিবি নামক জাঁতাকল।
আর এই জুলুমের শিকার কেবল পরিবহণ মালিক, শ্রমিক বা চালকরা নয় এর অন্যতম ভুক্তভোগী সাধারণ যাত্রীরা। আবার অনেক স্থানে ইজারা গ্রহণকারী সিন্ডিকেটের রেষারেষি এবং প্রতিযোগীতার কারনে সরকার নির্ধারিত মূল্যের ২/৩গুন বেশী টাকা দিয়ে নেয়া হয় ইজারা। এক্ষেত্রেও এই টাকা আবার ৪/৫গুন বাড়িয়ে আদায় করা হয় সাধারণ শ্রমিক ও জনগনের কাছ থেকেই।
আর এসব জিবি, টোল, টোকেন, লাইনম্যান, হপ্তা, মান্তি, সংগঠনের চাঁদা, পুলিশ, নেতা ইত্যাদি ইত্যাদি নামে চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে পরেছেন পরিবহন শ্রমিক সহ যাত্রী ও জনগন। এসব অনিয়ম আর এই অরাজকতা বন্ধ হবে কি? দেশ উন্নত হয়েছে আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যেতে চলেছি তবুও যেন অনিয়ম আর অরাজকতা লুটপাটের এই চিত্র পিছু ছাড়ছে না আমাদের।
Leave a Reply