(অমিত মজুমদার , কুমিল্লা)
করোনার ভারতীয় ধরন রোধে ভারতফেরতদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে চাচ্ছেন না অনেকেই, তবে পুলিশি পাহারাসহ জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের কঠোর নজরদারি কারণে কোনো অনিয়মের সুযোগ পাচ্ছেন না তারা। এ সুযোগে অনেকেই অপ্রয়োজনীয় দাবি করছেন যা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
কুমিল্লার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, যারা কোয়ারেন্টাইনে আছেন তারা মনে করছেন আমরা তাদের আটকে রাখছি। তারা মধ্যরাতে ফোন করে বলেন, তাদের বাথরুমে লো কমোড, দ্রুত হাই কমোডের ব্যবস্থা করুন। রাত ১০টায় ফোন করে বলেন, আমার স্যুপ খেতে হবে। প্রথমে এসি রুমে থাকতে চাইলে পরে আবার বলে এত টাকা ভাড়া দিতে পারব না, কম টাকার রুমে দেন। ১৪ দিনে দুই বার করোনা টেস্ট করাতে তারা সরকারি নির্ধারিত মূল্যের টাকাও দিতে রাজি নয়।
তিনি আরও বলেন, রাত দুইটা, তিনটা, নিশিরাতে ফোন করে ঘুম ভাঙায়। আমরা তাদের ফোনে পাগল হয়ে যাচ্ছি, এমন দিন গেছে আমি এক দিনে ৯৬টি কল ধরেছি। যার বেশির ভাগ ছিল অন্যায় আবদার। দেশ ও নিজের পরিবারের স্বার্থে তারা ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে চাচ্ছে না যা দুঃখজনক। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়েছে বিভিন্ন জেলায়। সেক্ষেত্রে কুমিল্লায় ভারত থেকে আসা কেউ এখনো পর্যন্ত করোনা পজিটিভ শনাক্ত হননি। বর্তমানে ৯টি হোটেলে ২৯৪ জন কোয়ারেন্টাইন আছেন। সকলের সহযোগিতা না পেলে আমার করোনা প্রতিরোধে সফল হতে পারব না।
আবাসিক হোটেল ভিক্টোরির কর্মকর্তা আশিকুর রহমান বলেন, কোয়ারেন্টাইনে ১০-১২ দিন হলে তারা নানা অজুহাতে বের হতে চায়। মূলত একটি রুমে বসে থাকতে থাকতে অনেকে বিরক্ত হয়ে বাড়ি চলে যাওয়ার দাবি জানান। তবে পুলিশ ও প্রশাসনের কড়া নজরদারির কারণে তারা অনিয়মের সুযোগ পাচ্ছেন না। তবে অনেকে হোটেল ভাড়া দিতে চাচ্ছে না, ছোট-খাট সমস্যা হলে প্রশাসনকে জানালে তারা সমাধান করে দেন।
রাতে হাই কমোড চাওয়া ভারতফেরত তমা ভৌমিক জানান, আমার বাবা-মা দুইজনই খুব অসুস্থ। তাদের চিকিৎসা শেষে বাংলাদেশ এসেছি। আমার মা বয়স্ক মানুষ, হাই কমোড ছাড়া টয়লেটে যেতে পারে না। আমরা যে হোটেলে উঠেছি সেখানে হাই কমোড ছিল না। আমরা যেহেতু বের হতে পারছি না তাই তাদের অনুরোধ করেছি। বয়স্ক মায়ের জন্য হাই কমোড চাওয়া কী আমার অপরাধ?
তিনি আরও বলেন, অন্যান্য জেলাতে শুনেছি হোটেল ভাড়া ডিসকাউন্ট দিচ্ছে, কিন্তু আমরা এক টাকাও ডিসকাউন্ট পাইনি। ভারতে চিকিৎসার খরচ বহন করে এত টাকা হোটেল ভাড়া ও খাবার খরচ আমাদের জন্য কষ্টকর ছিল। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোয়ারেন্টাইনে থাকা এক ব্যক্তি বলেন, আমি ঋণ করে ভারত গিয়েছি চিকিৎসা করার জন্য। এখন বাংলাদেশে ফিরে ১৪ দিন হোটেলে কোয়ারেন্টাইন থাকার ব্যয় ভার বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও আত্মীয় স্বজন থেকে বিকাশ-রকেটের মাধ্যমে টাকা এনে হোটেল ভাড়া পরিশোধ করছি। আগে তো প্রবাসফেরতরা বাড়িতে কোয়ারেন্টাইন করতেন, আমরা করলে সমস্যা কোথায়?
কুমিল্লার সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসেন জানান, তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর হয়ে ভারত থেকে দেশে ফিরেছেন। কোয়ারেন্টাইন অমান্য করার কোনো সুযোগ নেই। তাদের পুলিশ প্রশাসন ২৪ ঘণ্টা নজরদারিতে রেখেছেন। ভারতীয় সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই কুমিল্লার পাঁচটি সীমান্তবর্তী উপজেলায় জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, বিজিবির যৌথ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
Leave a Reply