অনলাইন ডেস্ক:
রাশিয়ায় বিশ্বকাপ ফুটবলের একবিংশতম আসরে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে না পারলেও সেখানে নানাভাবে উপস্থিত থাকতে পারছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে অন্যতম উপস্থিতি চোখে পড়বে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক জার্সির মাধ্যমে। এর বাইরেও ফুটবলের আরও নানা অনুষঙ্গ যেমন জ্যাকেট, টুপি, মোজা, গ্লাভস ইত্যাদিও থাকবে। নিঃসন্দেহে এটি দেশের জন্য গৌরবের, পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের অন্যতম হাতিয়ারও বটে।
বাংলাদেশ থাকছে এবারের ফিফা বিশ্বকাপে। মাঠের লড়াইয়ে লাল-সবুজদের থাকার কথা এখনও কল্পনাতীত। তবে বাংলাদেশের নামটি এবার থাকছে ফুটবলের মহাযজ্ঞে। ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জার্সি তৈরি করে সরবরাহ করছে বাংলাদেশের পোশাক কারখানা। আর পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হলুদ জার্সির নিচে লেখা থাকবে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’। জার্সির মাধ্যমে লুইজ ফেলিপ্পে স্কলারির দল এবার জানবে বাংলাদেশের নাম। ব্রাজিল বিশ্বকাপে স্বাগতিক ব্রাজিলসহ বেশ কয়েকটি দেশের জার্সি প্রস্তুতের দায়িত্ব পেয়েছে বাংলাদেশের প্রায় শতাধিক পোশাক কারখানা। তবে ব্রাজিল ছাড়া বাংলাদেশের তৈরি পোশাক অন্য সব দেশ পরে মাঠে নামবে কিনা সেটা পরিষ্কার করে এখনই বলা যাচ্ছে না। ডেনমার্ক ও ফ্রান্স বাংলাদেশের তৈরি জার্সি পরে খেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত বছর বাংলাদেশের রানা প্লাজা এবং তাজরীন গার্মেন্টস ট্র্যাজেডিতে সহস্রাধিক পোশাককর্মীর মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছিলো ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশন (সিবিএফ)কে। এসব বিবেচনা করে তারা বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের প্রতি সম্মান জানিয়ে জার্সির নিচে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ না থাকলেও আমাদের দেশের নামটি বিশ্বসেরা ফুটবল দলের সঙ্গে যুক্ত থাকছে।
প্রতিবছর বিশ্বের সেরা স্পোর্টস ব্রান্ড এডিড্যাস, নাইকি, পুমা বাংলাদেশের প্রায় শতাধিক গার্মেন্ট থেকে জার্সি শটস নিয়ে থাকে। ব্রাজিল বিশ্বকাপ উপলক্ষে চলতি বছরও নিয়েছে। মাঠজুড়ে দর্শক-সমর্থকদেরও অনেকেরই গায়ে থাকবে বাংলাদেশে তৈরি জার্সি ও টি-শার্ট। শুধু মাঠ নয়, এই মহাযজ্ঞের সময়ে বিশ্বজুড়ে ফুটবলপ্রেমীরা মেতে উঠবেন নানান ফ্যাশনে, যার বড় অনুষঙ্গ পোশাক।
বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড় এবং দর্শক-সমর্থকদের জন্য অন্তত ১৫ আইটেমের এক কোটি পিসের বেশি পোশাক সরবরাহ করেছে বাংলাদেশ। এসব পোশাকের বেশিরভাগই নিট বা গেঞ্জি জাতীয়।
বিশ্বকাপ উপলক্ষে গত তিনি মাসে নিটপণ্যের রফতানি আদেশ বেড়েছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩৫ শতাংশ। তবে প্রদীপের নিচে অন্ধকারের মতো এর একটি নেতিবাচক দিকও রয়েছে। ইংল্যান্ডের প্রভাবশালী জনপ্রিয় সংবাদপত্র ডেইলি টেলিগ্রাফের বরাতে জানা যায়, বিশ্বখ্যাত খেলাধুলার সরঞ্জামাদি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ‘নাইকি’ ইংল্যান্ড জাতীয় দলের জার্সি স্পন্সর করেছে। তারা নামমাত্র মজুরিতে সেই জার্সি বানিয়ে নিচ্ছে ঢাকার সাভারের পোশাক কারখানা থেকে। বাংলাদেশী পোশাক শ্রমিকদের পারিশ্রমিক প্রতি ঘণ্টার জন্য মাত্র ২১ পেন্স। সেই হিসেবে পুরো মাসের পারিশ্রমিক মাত্র ৪৭ ইউরো। অথচ প্রতিটি জার্সি বিক্রি করা হয় ১৬০ ইউরোতে।
রাশিয়া বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী কয়েকটি দেশের অফিশিয়াল জার্সি এবার তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের পোশাক কারখানায়। যার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রীয় ইংল্যান্ডের জার্সি। থ্রি লায়ন্সদের সাদা রঙের জার্সিতে রয়েছে বঙ্গযোগ। মার্কিন মিডিয়ায় প্রকাশিত খবর অনুয়ায়ী নাইকির এই জার্সি তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের ইপিজেড এলাকার বস্ত্র কারখানায়। সেখানকার শ্রমিকদের বেশিরভাগই মহিলা। ঘণ্টায় ২১ পয়সার বিনিময়ে হ্যারি কেন-মার্কাস র্যাশফোর্ডদের বিশ্বকাপের পোশাক তৈরি করেছে তারা।
একটি রিপোর্টে উঠে এসেছে, দৈনিক ১৫০ টাকার বিনিময়ে ইংল্যান্ড দলের জার্সি প্রস্তুত করেছে তাঁরা। শ্রমিকরা প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৬০ ঘণ্টা ধরে জার্সি প্রস্তুতির কাজ চালিয়ে গিয়েছে। রিপোর্টে এও উঠে এসেছে, ইংল্যান্ডের বাজারে সেই পোশাকই ১৪ হাজারের কিছু বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ফুটবলারদের পোশাক ছাড়াও সমর্থকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখেও তৈরি হয়েছে পোশাক। আন্তর্জাতিক বাজারে সেই সব পোশাক চড়া দামে বিক্রি হলেও শ্রমিকরা পাচ্ছেন ঘণ্টা পিছু মাত্র ২১ পয়সা।
কেন এত কম টাকা দেওয়া হয় তাঁদের, সেই নিয়ে ইতোমধ্যেই বিশ্ব জুড়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তারপরেও খুশির বিষয় বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকরা বিশ্বকাপ ফুটবল সূত্রে পরিচিতি পেয়েছে বিশ্বজুড়ে এতে দেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হয়েছে।
লেখক: পরিচালক, এফবিসিসিআই, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড
Leave a Reply