অনলাইন ডেস্ক:
কুমিল্লার দেবিদ্বারে যৌথ ব্যবসার টাকা লেনদেনের জেরে আবু সায়েম (৩৯) নামের এক যুবককে প্রথমে অপহরণর পরে নির্যাতন করে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যান ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় নিহত সায়েমের ছোট ভাই মো. আবু কাউছার বাদি হয়ে চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম ও তার ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুনসহ চারজনের নাম উল্লেখপুর্বক আরও অজ্ঞাত ৭/৮জনের নামে দেবিদ্বার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার দিবাগত রাত ১টার দিকে বাঙ্গুরী গ্রামে। ওই দিন রাত ২টার দিকে উপজেলার গুনাইঘর উত্তর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো.খোরশেদ আলমকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। তবে তাঁর ছেলে মামুন পলাতক রয়েছে বলে জানা গেছে। নিহত সায়েম উপজেলার গুনাইঘর উত্তর ইউনিয়নের চাষারপাড় গ্রামের আবদুর রহিম সরকারের ছেলে। আবু সায়েমের দুই বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। এ ঘটনার পর অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ গেইটের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী ।
নিহত আবু সায়েমের শ্বশুর স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মো. ছিদ্দিকুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, সোমবার (৮এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টায় দিকে ঢাকার যাত্রাবাড়ি এলাকা থেকে আমার মেয়ের জামাই সায়েমকে অপহরণ করে চেয়ারম্যান খোরশেদ আলমের ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে ৭/৮জন সন্ত্রাসী। অপহরণের খবর পেয়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে আমরা তাকে খোঁজাখুঁজি করি। এক পর্যায়ে বিকাল ৫টায় খোরশেদ চেয়ারম্যান আমাকে ফোনে জানায়, সায়েম তার ছেলে মামুনের সাথে কাছে আছে। মামুন আমার জামাইর নিকট যৌথ ব্যবসার যে টাকা পাবে সে টাকা ফেরত দিলে ছেড়ে দেয়া হবে। পরে রাত সাড়ে ৭টায় চেয়ারম্যান খোরশেদ আমাকে যাত্রাবাড়ির বাবু বাজার এলাকার একটি বাসায় সায়েমের সাথে দেখা করায়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় আজ মঙ্গলবার সকালে চেয়ারম্যানের বাড়িতে লেনদেনের বিষয়টি মিমাংসা করা হবে। আমি সায়েমকে আমার সাথে নিতে চাইলে চেয়ারম্যান বলে ‘সায়েম তার জিম্মায় থাকবে’। সেখান থেকে তাঁরা রাতেই সায়েমকে নিয়ে প্রাইভেটকারে দেবিদ্বার চলে আসে। প্রাইভেটকারে জায়গা না থাকায় আমি বাসে করে দেবিদ্বারে রওয়ানা হই। আমি কুমিল্লা ময়নামতি এলাকায় আসার পর রাত সাড়ে ১০টায় চেয়ারম্যান আমাকে ফোন দিয়ে জানায়, সায়েম চা খাওয়ার কথা বলে তাদের নিকট থেকে পালিয়ে গেছে। পরে রাত সোয়া ১টায় চেয়ারম্যান আবার ফোনে জানায় সায়েম খুবই অসুস্থ তাকে আমি ও আমার স্ত্রী দেবিদ্বার সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি, তুমি দ্রæত হাসপাতালে আসো। পরে আমি হাসপাতালে গিয়ে দেখি সায়েমের মরদেহ নিচে পড়ে আছে। মরদেহের চোখ-মুখ ফোলা, গলায় ও পিঠে অসংখ্য দাগ। পরে আমি থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে খোরশেদ চেয়ারম্যানকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
সায়েমের ছোট ভাই আবু কাউছার সরকার জানান, গত কয়েক বছর আগে আমার বড় ভাই ব্যবসায়ী কাজে টাকার প্রয়োজন হলে সাবেক চেয়ারম্যান খোরশেদ আলমের ছেলে মামুনের নিকট থেকে ১৫ লক্ষ টাকা নিয়ে যৌথ ব্যবসায় পার্টনার করে। বর্তমানে ব্যবসার অবস্থা কিছুটা অবনতি হলে ওই টাকার জন্য মামুন আমার ভাইকে চাপ সৃষ্টি করলে তাকে ৭ লক্ষ টাকা পরিশোধ করা হয় এবং বাকি টাকার জন্য একটি খালি চেক দেয়া হয়। পরে মামুন ওই চেক দিয়ে আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে আদালতে দুটি মামলা করে। ওই মামলা চলমান থাকাবস্থায় মামুন ও তার বাবা আমার ভাইকে সন্ত্রাসী নিয়ে অপহরণ করে। রাতে সায়েম ভাই আমাকে ফোন দিয়ে বলেন আমার পিকাপভ্যানটি (যার নম্বার ১২-০৯৯৭) মামুনকে দিয়ে দিলে তাকে ছেড়ে দিবে। এই কথা শুনে আমি পিকআপ ভ্যানটি মামুনকে দিয়ে দেই। এরপরও আমার ভাইকে চেয়ারম্যান ও তার ছেলে সন্ত্রাসী নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। আমরা এ ঘটনায় খোরশেদ চেয়ারম্যান ও তার ছেলের ফাঁসি দাবি করছি।
নিহত সায়েমের আইনজীবি এ্যাডভোকেট আলী আজম খান বলেন, আমাকে ফোনে জানায়, তাকে মামলার বাদি মামুন অপহরণ করেছে। আমি তাকে ৯৯৯ ফোন দিতে বলি। সে তার লোকেশন যাত্রাবাড়ি বউ বাজার এলাকার তরমুজ পট্টিতে আছে জানিয়ে লাইন কেটে দেয়। পরে আমি ৯৯৯ ফোন করে যাত্রাবাড়ী থানায় অপহরণের বিষয়টি জানাই।
এ বিষয়ে দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নয়ন মিয়া বলেন, সায়েম নিহতের ঘটনায় তার ছোট কাউছার সরকার বাদী হয়ে দেবিদ্বার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। (মামলা নং ১২ তারিখ- ০৯-০৪-২৪)। অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সায়েমের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে, মামলার তদন্ত চলছে।
Leave a Reply