(আক্কাস আল মাহমুদ হৃদয়,বুড়িচং )
কুমিল্লার জেলার বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নে জীবিকা নির্বাহ ও অর্থ উপর্জনের জন্য পাইভ ফিল্টার এর কাজ করতে গিয়ে পঙ্গুত্ব হয়ে বাড়ি ফিরে এলেন সোনার বাংলা কলেজের কৃতকার্য ছাত্র মো: রাজিব হোসেন (২২) ও সহযোগী মিস্ত্রি মো:শাকিল( ১৭)।
বাবা অসুস্থ, নিজের এবং ভাই বোনের লেখাপড়া খরচ, সংসারে অভাব অনাটন দূর করতে জীবিকা নিবার্হ ও অর্থ উপর্জন করতে জীবন যোদ্ধে ধাপিত হোন রাজিব ও শাকিল। মা-বাবার বড় পোলা ওরা দুজনেই তাই তারা লেখা পড়ার পাশা-পাশি মামার সাথে থেকে ফাইভ ফিল্টারের কাজ শিখে ফেলেন রাজিব হোসেন। তার সহযোগী হিসেবে সাথে নেন মো:শাকিল’কে। মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই কাজ করে বাবার ঔষধ খরচ, নিজের লেখা পড়া, ভাই বোনের লেখাপড়া এবং যাবতীয় খরচ চালাতেন।
অন্যজনের বসতভিটা থেকে বোনের বিয়ে, বাবার ঔষধ খরচ সংসারে অভাব অনটান ও পরিবারের দূর্ভোগ বেড়ে যাওয়াতে লেখাপড়া ছেড়ে দেন শাকিল। এ দিকে রাজিবের বাবা কৃষক আবার দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ চিকিৎসার খরচ চালাতে হয় তবুও জীবন যোদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য নিজেকে উচ্চ শিক্ষায় সু প্রতিষ্ঠিত করতে স্বপ্ন আশা নিয়ে পরিশ্রমের মাত্র বাড়িয়ে দেন। এই ভাবে পরিশ্রম করে খাড়াতাইয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস এস সি পাস এবং সোনার বাংলা কলেজ থেকে ২০১৬ সালে ভালো রেজাল্টে এইচ এস সি পাস করে মেধা তালিকাভুক্ত হোন।
সকলের উৎসাহ অনুপ্রাণিত হয়ে অনার্সে ভর্তি হয় এবং পাশাপাশি চাকরির জন্য বিভিন্ন সরকারি -বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেন এবং কয়েক বার পুলিশের চাকরি পাওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ান। চাকরিও হয়েছিল টাকাও প্রয়োজন তাই রাজিব গত ৯ ফেব্রুয়ারী একই এলাকায় খাড়াতাইয়া গাজীপুর নতুন বাজার সংলগ্নে আব্দুল হক ঠিকাদার বাড়ির টিউবওয়েল থেকে বৈদ্যুতিক মটর সংযোগের কাজ করে দেওয়ার জন্য রাজিব ও শাকিল যায়।
ঘরের ভিতরে টিউবওয়েল আর এই ঘরের উপর দিয়েই ১১হাজার বোল্টের বৈদ্যুতিক তারের লাইন টানা ছিল। ঘরের ভিতর থেকে টিউবওলের রড খোলার সময় ওই ১১হাজার বোল্টের সাথে লেগে যায় এই সময় রাজিব ও শাকিল অজ্ঞান হয়ে যায়। আর ততক্ষণে রাজিবের হাত, পা পুড়ে ছাই হয়ে যায় এবং শাকিলের হাত,পা দেহে পুড়ে যায়। এর মাঝেই বিদ্যুৎ চলে যায় তখন স্থানীয়রা তাদের দু’জনকে উদ্ধার করে কুমিল্লার মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাদের অবস্থা দেখে কর্তব্যরত ডাক্তারা উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা না হয় বিদেশ নিয়ে যেতে বলেন।
তখন ঢাকা একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার রাজিবের পুড়ে ছাই হওয়া দুইটি হাত, দুইটি পা কেটে ফেলে এবং শাকিলের হাত কাটার পরর্মশ দেন। হাত না কেটে শাকিলের পরিবার কয়েকদিন চিকিৎসার চালিয়ে টাকার অভাবে বাড়িতে নিয়ে আসে। এর মধ্য তাদের চিকিৎসার বাবদ খরচ হয় ১৫ লক্ষাধিক টাকা।
রাজিব ও শাকিল কেমন আছেন তাদের বাড়িতে দেখতে গেলে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়াতে রাজিবের মা সাহিনা আক্তার ও বাবা মো: মোসলেম উদ্দিন চোখের জল ফেলে হাউ মাউ করে কেঁদে উঠে। তাদের কাছ থেকে জানা যায়, এ দূর্ঘটনায় এ পর্যন্ত রাজিবের পেছনে চিকিৎসা খরচ বাবদ প্রায় নয়/দশ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। আরো ৭/৮ লক্ষ টাকা লাগবে বলে ডাক্তার জানিয়েছেন।
এতো টাকা দিয়ে রাজিবের চিকিৎসা চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এর আগের চিকিৎসার টাকা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, এলাকার বিভিন্ন মহলের লোকজন, ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ উত্তোলন এবং আত্মীয় স্বজনরা সহযোগীতা করেছেন। এখন প্রতিদিনে ব্যাংক ও এনজিও এর কর্মকর্তারা বাড়িতে এসে পাওনা টাকার জন্য বসে থাকেন। তা আমাদের জন্য অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে। এখনো পুরোপুরিভাবে সুস্থ হতে রাজিবের জন্য ৭/৮ লক্ষ টাকা লাগবে। যা আমাদের বসত বাড়ি বিক্রি করলেও হবে না। রাজীব আমাদের সংসারের উপার্জনের একমাত্র কর্ণদ্বার ছিলেন। রাজীবের এমন অবস্থায় আমাদের দুর্ভোগ দিন দিন বেড়েই চলছে।
এদিকে শাকিলের বাড়িতে দেখতে গেলে তার মা রেখা আক্তার কান্নাকাটি শুরু করেন। ছোট্ট একটি ঘরে ৬ জন সদস্য নিয়ে শাকিলদের বসবাস তাও এ বসতভিটা অন্য জনের । ৪০ হাজার টাকা দিলে বসতভিটা তাদের হবে বলে জানিয়েছেন। বাবা স্বপন মিয়া ট্রাকের হেলপার ছিলেন। কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ বিছানায় পড়ে আছেন। তার চিকিৎসা খরচ এবং পরিবারের ভরণ পোষনের দায় দায়িত্ব একমাত্র শাকিল ই বহন করতেন। বিধির কি নির্মম পরিহাস হঠাৎ এই দূর্ঘটনায় তাদের সংসারের আলোর প্রদীপটি নিভু নিভু করে অন্ধকারে ডাকা পড়ছে। শাকিলের ভাই ইউছুফ ও বোনের লেখাপড়া প্রায় বন্ধের পথে।
টাকার অভাবে শাকিলের দেহ এখন পচঁনের দিকে। যদিও বা সামাজিকভাবে কিছু আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছিল তা অনেক আগে চিকিৎসা বাবদ খরচ হয়ে গেছে এবং অনেক টাকা ঋণ নিতে হয়েছে। আরো ৫/৬ লক্ষ টাকা লাগবে বলে ডাক্তার জানিয়েছেন। আমাদের দ্বারা এতো টাকা ব্যয় করা আমাদের সাধ্য নেই।
পঙ্গুত্ব রাজীবের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শেষ করে একটি চাকুরী নেবো। মা বাবার ও পরিবারের অভাব অনটন মোচন করবো। এবং ভাই বোনদের লেখাপড়া চালিয়ে নেবো। কিন্তু ভাগ্যের কাছে আমি হেরে গেলাম।
অসুস্থ শাকিলের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আল্লাহ আমাকে জীবনযুদ্ধের পরীক্ষা দিয়ে এমনভাবে রেখেছেন। বাকি জীবনটা কিভাবে কাটবে আল্লাহ ভালো জানেন। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।
রাজিব ও শাকিলের মা বাবা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্থানীয় এমপি সাবেক আইনমন্ত্রী এডভোকেট আবদুল মতিন খসরু , কুমিল্লা জেলা ডিসি মো: আবুল ফজল মীর, বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরুল হাসান, বুড়িচং থানার ওসি মনোজ কুমার দে, উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, সাবেক চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন স্বপন, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রেজাউল করিম খোকন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম সহ বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বার, সামাজিক সংগঠন, এলাকার দানবীর ব্যক্তিবর্গ এবং স্কুল কলেজে পড়ুয়া শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিকট আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য চোখের জল ফেলে সাংবাদিক দের কাছে তারা একথাগুলো বলেন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি বলেন, আমরা কিছু আর্থিক সহযোগিতা করেছি এবং স্থানীয় এমপি মহোদয় কে এ বিষয়টি জানিয়েছি। আমাদের কাছে যদি কোনো সরকারি অনুদান আসে তাহলে তাদেরকে সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
রাজিব কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের খাড়াতাইয়া গাজীপুর পশ্চিমপাড়ার মো: মোসলেম উদ্দিনের ছেলে এবং শাকিল একই গ্রামের মধ্যপাড়ার স্বপন মিয়ার ছেলে।
তাদের কাছে আর্থিক সহযোগিতা পাঠানোর ঠিকানা:
১। রাজীব
জনতা ব্যাংক লিমিটেড, বুড়িচং শাখা, শাহীনা , হিসাব নং-১০২১১১৬৫৮২
বিকাশ নং (পার্সোনাল) : ০১৮১৩৫০০১৩২
২। শাকিল
জনতা ব্যাংক লিমিটেড, বুড়িচং শাখা, রেখা আক্তার , হিসাব নং-০১০০০৯৫১১১০৩৮
বিকাশ নং- (পার্সোনাল) : ০১৬৪০৯২৬১৫৫
Leave a Reply