অনলাইন ডেস্ক:
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে শুক্রবার জুম্মার নামাজের সময় নৃশংস হামলায় এ পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। হামলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় আলোচনায় এসেছে ভিডিও গেম ‘পাবজি’। এক হামলাকারী তার মাথায় লাগানো ক্যামেরা দিয়ে হত্যার নৃশংসতা সরাসরি সম্প্রচার করেন। নিউজিল্যান্ড পুলিশ কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে এই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে না ছড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছে।
ভিডিওটি দেখে প্রথমেই মনে হবে, আপনি কোনো ব্যাটেলগ্রাউন্ড ভিডিও গেম দেখছেন। হত্যাকারী গাড়ি থেকে অস্ত্র বের করছেন, গুলি ছুড়ছেন, গুলি ফুরিয়ে গেলে ভরে নিচ্ছেন ম্যাগাজিন। শহরে হেঁটে হেঁটে, রাস্তায় গাড়িতে বসে গুলি ছুড়ে, একের পর এক অস্ত্র পাল্টে মানুষ হত্যার এই ভিডিওকে কেবল পাবজি গেম বলে বিভ্রম হতে পারে।
দক্ষিণ কোরিয়ার ভিডিও গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পিইউবিজি কর্পোরশেন ‘পাবজি’ ভিডিও গেমটি প্রথম বাজারে আনে। ব্লুহোল গেমটি তৈরি করে। প্লেয়ারস আননোউন্স ব্যাটলগ্রাউন্ড বা সংক্ষেপে পাবজি গেমটি ২০১৮ সালে শুধু মোবাইলেই ৫০ মিলিয়নের বেশি ডাউনলোড হয়। গেম ডাউনলোডে এটি ছিল রেকর্ড। মোবাইলে প্রতিদিন কোটি গ্রাহক গেমটি খেলেন। ‘ওয়ান টু ওয়ান’ যুদ্ধের এই খেলায় ভয়ানক সব মারণাস্ত্র ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে হত্যা করতে হয়।
অনলাইনে একটি শহরে ১০০ জন খেলোয়াড় প্যারাস্যুটের মাধ্যমে গেমটি খেলার জন্য প্রথমে একটি শহরে নামেন। এই শহরে নিজেদের জন্য প্রত্যেকে পান ৮ বাই ৮ কিলোমিটার নিরাপদ এলাকা। প্রতিপক্ষের শহরে ঢুকে তাকে হত্যা, গোলাবারুদ ছিনতাই করে শেষ পর্যন্ত যিনি বেঁচে যান তিনিই জয়ী হন। গেমটিতে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ১০০ জন খেলোয়াড় একই সময়ে সংযুক্ত থাকায় গেমটি খেলোয়াদের মস্তিষ্কে মারাত্মক আসক্তি তৈরি করে। কয়েকজন মিলে প্রতিপক্ষকে হত্যা করতে বিশ্বাসঘাতকতারও আশ্রয় নেন তারা। চলে হত্যার পরিকল্পনা। কত পয়েন্ট বা কয়েন পেলেন, কতজনকে হত্যা করলেন, কতজন বেঁচে আছে, তাদের কীভাবে হত্যা করা যায়- এসবই এই ভয়ঙ্কর গেমের বিষয়।
প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে শত্রু ধরেই এগিয়ে যায় হত্যাযজ্ঞ। সব মিলিয়ে মোবাইল কিংবা কম্পিউটারের পর্দায় তরুণ-তরুণীরা পাবজিতে এতটাই মগ্ন থাকেন যে তারা বাস্তব পৃথিবী ভুলে যান। ভিডিও গেমসটির হত্যাযজ্ঞ অনেক বাস্তব অনুভব হয়। রক্তাক্ত হামলা, গোলাগুলি আর নৃশংসতার জন্য ইতোমধ্যে সারাবিশ্বে গেমটি আলোচিত, সমালোচিত হয়েছে। বিভিন্ন দেশে স্কুল, কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা এই গেমে বাজেভাবে আসক্ত হওয়ায় নিষিদ্ধ, গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে।
Leave a Reply