অনলাইন ডেস্ক:
চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে নানা মহলের সমালোচনার মুখে তদন্ত কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার (৪ মে) কমিটির দেয়া প্রতিবেদন প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। প্রশ্ন ফাঁস হওয়ায় ৪ থেকে ৫ হাজারের মত শিক্ষার্থী সুবিধা পেয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে তদন্ত কমিটি। এসব শিক্ষার্থীর ফলাফল বাতিলের সুপারিশও করেছে কমিটি।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এসএসসি পরীক্ষার ১৭টি বিষয়ের মধ্যে ১২টি বিষয়ের শুধু এমসিকিউ অংশের ‘খ’ সেটের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। তবে কোন বিষয়ের সৃজনশীল অংশ ফাঁস হয়নি। বেশি সংখ্যক পরীক্ষার্থী ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পায়নি।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পরীক্ষা শুরুর ২০ মিনিট আগে বা কাছাকাছি সময়ে শুধুমাত্র ক্লোজ গ্রুপে নগণ্য সংখ্যক পরীক্ষার্থী প্রশ্ন পেয়েছে। এ ধরণের ক্লোজ গ্রুপে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা অতি নগণ্য। প্রতিটি গ্রুপে ১০ থেকে ১০০ জনের মত সদস্য রয়েছে। এ রকম ৪০-৫০টি গ্রুপে প্রশ্ন শেয়ার হয়েছে। ফলে ক্লোজ গ্রুপের মাধ্যমে প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার পরীক্ষার্থী পরীক্ষা শুরুর আগে প্রশ্ন পত্র পেয়ে থাকতে পারে। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট পূর্বে সকল পরীক্ষার্থী পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ বাধ্যতামূলক থাকায় যারা প্রশ্ন পেয়েছে তারা উত্তর প্রস্তুতের জন্য ১০ থেকে ২০ মিনিটের মত সময় পেয়ে থাকতে পারে। এত স্বল্প সময়ের মধ্যে ৩০টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের উত্তর বের করা সহজ নয়। ফলে তাদের সামগ্রিক ফলাফলে এটা খুব বেশি প্রভাব রাখতে পারবে না।
এই প্রতিবেদনের আলোকে ৪ টিসুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। সুপারিশগুলো হল:
১) ক্লোজ গ্রুপের ৪ থেকে ৫ হাজার প্রশ্ন পাওয়া সুবিধাভোগীদের জন্য ২০ লক্ষাধিক পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা পুণরায় গ্রহণ করে তাদেরকে ভোগান্তিতে ফেলা সমীচীন হবে না বিবেচনায় সমাপ্ত এসএসসি পরীক্ষার কোনো বিষয়ের পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত যুক্তিযুক্ত হবে না।
২) প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং তদন্তে প্রশ্ন ফাঁসের সুবিধাভোগী সকল পরীক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে পরবর্তীতে তাদের ফলাফল বাতিলসহ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।
৩) কোনো পরীক্ষার্থীর বিরুদ্ধে পরীক্ষার আগে প্রশ্ন পাওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে এবং প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪) মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৩০০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করে সন্দেহজনক মোবাইল নম্বরগুলো চিহ্নিত করতে হবে এবং লেনদেনকারীর পেশা যাচাই করে দেখতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় জড়িত অনেককেই গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অভিযান এখনও অব্যাহত রয়েছে। সুবিধা পাওয়া যেসব শিক্ষার্থীর সন্ধান পাওয়া যাবে তাদের পরীক্ষা বাতিল করা হবে বলে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে।
মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করতে কঠোর শিক্ষামন্ত্রী। তাই যেসব পরীক্ষার্থী প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দিয়েছে বলে তথ্য-প্রমান পাওয়া যাবে পরবর্তীতে তাদের পরীক্ষা বাতিলসহ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া যারা প্রশ্ন ফাঁস করেছেন বলে প্রমান পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।
জানা গেছে, বিভিন্ন সময় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫২টি মামলা হয়েছে। এর সাথে জড়িত ১৫৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। জড়িত পরীক্ষার্থীদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত শিক্ষকদের চাকরি থেকে বাদ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানা গেছে।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন, তারা পার পেয়ে গেছেন তা ভাবার কারণ নেই। নানা ভাবে চেকিং চলছে। প্রশ্ন ফাঁসের বিরুদ্ধে আমাদের কার্যক্রম থেমে নেই, এখনও চলছে।
উল্লেখ্য, গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এসএসসি ও সমমানের তত্ত্বীয় বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ব্যবহারিক পরীক্ষা ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ৪ মার্চ শেষ হয়। সারা দেশে তিন হাজার ৪১২টি কেন্দ্রে মোট ২০ লাখ ৩১ হাজার ৮৮৯ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে ১০ লাখ ২৩ হাজার ২১২ জন ছাত্র ও ছাত্রীর সংখ্যা ১০ লাখ ৮ হাজার ৬৮৭ জন। আগামী ৬ মে (রবিবার) পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
Leave a Reply