আবু সুফিয়ান রাসেল, কুমিল্লা
গ্রামীণ একটি প্রবাদ আছে, ‘মরারে মারচ ক্যা? মরায় লড়ে চড়ে ক্যা?’ আর সেই প্রবাদের বাস্তবায়ন হচ্ছে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে(কুমেক)। কুমেক হাসপাতাল বৃহত্তর কুমিল্লার মানুষের সর্ববৃহৎ চিকিৎসা কেন্দ্র। যখন মানুষ বিপদে পড়ে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য হাসপাতালে যান, তাদের থেকে প্রতি ক্ষেত্রে টাকা আদায় করে হাসপাতালের কিছু কর্মচারী ও বহিরাগত চক্র।
যাদের টাকা আছে তারা চিকিৎসা নেন দেশ ও দেশের বাইরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল থেকে, আর যে সমস্ত গরীব মানুষ চিকিৎসার জন্য এ হাসপাতালের দ্বারস্থ হন তাদের গুনতে হয় পদে পদে টাকা আর হতে হয় নানা হয়রানি। একজন এম্বুলেন্স চালক জানান, হাসপাতাল অঙ্গিনায় গাড়ি প্রবেশ করতে হলে কর্তৃপক্ষকে টাকা দিতে হয়, এ দিকে ফটকের দারোয়ানকেও টাকা দিতে হয়।
বহিঃবিভাগের টিকেট ক্রয়ের ক্ষেত্রেও কাজ করে দালালদের একটি চক্র। যারা বিনা লাইনে ১০ টাকার টিকেট ৫০ টাকায় বিক্রি করে থাকেন।
সাংবাদিক শাহজাদা এমরান অভিযোগ করেন, জরুরি বিভাগে ভর্তি ফি ২৫ টাকা লিখা থাকলেও তার থেকে ৫০ টাকা নেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত টাকা কেন নেওয়া হলো এটার কোন উত্তর দেয়নি কাউন্টার থেকে।
এদিকে আন্ত:বিভাগ গেইট পাশ নিয়ে সর্দারদের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। প্রতি রোগীর স্বজন প্রবেশ করতে গেইট পাশের নামে দিতে হয় শতটাকা, তবে এ টাকা ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও অনেকে জানেন না, তাই সে টাকা আর নেন না। নির্ধারিত সময়ের পর আসলেও তাকে এ টাকা দেওয়া হয় না। যদি নির্ধারিত সময়েও আসে তবে সে টাকা থেকে আংশিক কর্তন করা হয়। গত রবিবার সরেজমিনে এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। তবে সর্দার সে অভিযোগ দারোয়ানের উপর ছাপিয়ে দেন।
হাসপাতালের বেড পেতে হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে থাকতে হবে উচ্চ চেয়ারের কারো সুপারিশ বা দিতে হতে ওয়ার্ডের কর্তাদের টাকা।
মেডিসিন বিভাগের রোগীর স্বজন জাফর মিয়া জানান, তার রোগীতে ফ্লোরে সিট দেওয়া হয়েছে, তবে ফ্লোরের সিটের জন্যও তাকে অতিরিক্ত ফি দিতে হয়েছে। পরিচালকের দপ্তরের অনুমোদনপত্র আনতে গিয়েও তাকে টাকা দিতে হয়েছে।
হাসপাতালের টয়লেট ও গোসলখানা ব্যবহারের অনুপযোগী, নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ছাড় পোকা আর তেলা পোকার রাজত্ব। বিদ্যুত চলে গেলেও সকল ওয়ার্ডে বিকল্প কোন ব্যবস্থা নেই। নেই বিশুদ্ধ খাবারের পানির ব্যবস্থা। ফলে রোগীদের পোহাতে হয় নানা বিড়ম্বনা। সম্পূর্ণ হাসপাতাল সিসি ক্যামেরার আওতাভূক্ত হলেও দালালদের চিনেনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দালালদের হাসপাতাল প্রবেশ করতে লাগেনা কারো অনুমতি, দেখতে হয় না সময়, প্রয়োজন হয়না গেইট পাশের।
শনিবার ও বুধবার ঔধুষ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দুপুর ১ টার পর ডাক্তার ভিজিট করার নোটিস থাকলেও প্রতিদিন হাসপাতাল চলাকালীন সময়ে ডাক্তারদের রুমে উপহার প্রদানের নামে ইনডোর ও আউটডোরে প্রবেশ করেন রিপ্রেজেন্টটিভরা। রয়েছে হাসপাতালের খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন। হাপাতালের ৫ লিফটের ৪টি বন্ধ থাকে ২৪ ঘন্টা। এর একটি লিফট শুধু হাসপাতাল চলাকালীন সময়ে চালু রাখা হয়।
ওয়ার্ড মাষ্টার ইলিয়াস মিয়া জানান, যে পরিমাণ চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী দরকার এর ৫ ভাগের একভাগ কর্মচারী আছে। তাদের সেবা প্রদানের জন্য লোক নিয়োগ প্রদান করা হলে, সমস্যার কিছুটা সমাধান হবে। ঔষুধ কোম্পানি ও দালালদের দেখলে আমারা বিদায় করে দেই। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কোন আপোষ করবে না।
এসব অভিযোগের উত্তরে কুমেক হাসপাতাল পরিচালক ডা. স্বপন কুমার অধিকারী জানান, আমরা চাই রোগীদের ভালো রাখতে, তারা যদি ভালো থাকে আমারা ভালো থাকি। নতুন জনবল নিয়োগের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে ৬বার চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। নানা সমস্যার কারণে লিফট বন্ধ, তবে নতুন ভবনের কাজ চলে তাই সে লিফটটাও বন্ধ, জরুরি বিভাগেরটা দেখি শিগ্রই চালু করা যায় কিনা। দালাল আগের থেকে কমেছে। দালাল , ঔষুধ কোম্পানির লোকদের বলে দিয়েছি যে, যদি বাড়াবাড়ি করে পুলিশে দিয়ে দেওয়া হবে। গেইট পাশ, অতিরিক্ত ফি, খাবারের বিষয়টা আমরা দেখবো।
উৎস: সাপ্তাহিক আমোদ
Leave a Reply