অনলাইন ডেস্ক:
প্রধান নির্বাচন কমিশনার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন গত বৃহস্পতিবার। তার আগেই নির্বাচনী কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। শুক্রবার (৯ নভেম্বর) থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে দলটি।
ক্ষমতাসীন ও তাদের শরিক ১৪ দল যখন নির্বাচনী গণসংযোগ এবং প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, তখন বিএনপি জোট সিদ্ধান্তই নিতে পারেনি তারা নির্বাচনে যাবে কি যাবে না। অবশেষে রোববার বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২৩ দলীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে একাদশ সংসদ নির্বাচনে যাবে বলে ঘোষণা দেয় বিএনপিসহ ২০-দলীয় জোট, গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য ও কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও। এ জোটেরই মূল শক্তি ও শরিক বিএনপি।
স্বভাবতই ক্ষমতাসীন দল ও জোট থেকে নির্বাচনী প্রস্তুতিতে পিছিয়ে রয়েছে বিএনপি এবং তাদের জোট। আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা যখন উন্নয়নের ফিরিস্তি গেয়ে ভোট চাওয়ায় ব্যস্ত, তখন বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট ব্যস্ত জোটনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির দাবি নিয়ে।
তফসিল ঘোষণার পর থেকেই জোটের শরিক দলগুলো থেকে আসন ভাগাভাগির চাপ আসা শুরু করেছে বিএনপির ওপর। বেশ কয়েকটি দল প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে জোটের প্রধান শরিক বিএনপির কাছে জমা দিয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লার তিনটি আসন রয়েছে।
দলীয় শীর্ষ নেতৃত্ব যখন কারাগারে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যখন বিদেশে; তখন বিএনপি নেতারা আসন ভাগাভাগির এ রাজনীতি কীভাবে সামাল দেয় সেটিই দেখার বিষয়।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোটের শরিকদের জন্য সর্বোচ্চ ৮০টি আসন ছাড়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
সম্প্রতি নিজ উদ্যোগে দুই জোটের সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি তালিকা সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট এলাকায় জরিপ চালিয়েছে দলটি। জনপ্রিয়তাকে প্রাধান্য দিয়ে সেই জরিপে উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে দুই জোটের সম্ভাব্য প্রার্থীদের আসন ছাড় দিতে চায়।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোও দু-একদিনের মধ্যে তালিকা দেবে। সব শরিক দল থেকে তালিকা পাওয়ার পর সমঝোতার ভিত্তিতে প্রার্থীদের আসন চূড়ান্ত করা হবে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ২০-দলীয় জোটের অনেক দলই তাদের প্রার্থীর তালিকা দিয়েছে। সব শরিক দলের কাছ থেকে প্রার্থীর তালিকা পাওয়ার পর কত আসন ছাড়া হবে, তা আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
সূত্র জানায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের কাছে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা দিয়েছে ২০-দলীয় জোটের শরিক অধিকাংশ দল। এর মধ্যে রোববার রাতে কর্নেল (অব.) অলি আহমেদের এলডিপি তালিকা দিয়েছে।
এলডিপি থেকে ৩০ আসন চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লার ২টি আসন রয়েছে। এলডিপি কুমিল্লা-৭, কুমিল্লা-৫ সহ আরও কিছু আসনের তালিকা দিয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, আমরা ৩০ আসনে প্রার্থীর তালিকা জমা দিয়েছি।
এলডিপি যেসব আসন চেয়েছে, তার মধ্যে অন্তত তিনটি আসনে জোটের অন্য শরিকরাও ভাগ বসাতে চায়। বিশেষ করে চট্টগ্রামের দুটি আসন এবং লক্ষ্মীপুরের একটি আসনে বিএনপি জোটের শরিকদেরও চোখ।
২০০৮ সালে জামায়াত ৩৫ আসনে নির্বাচন করে। এবার সেটি বেড়ে ৫০ দাবি করা হবে বলে জামায়াতের একটি সূত্র জানিয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লা-১১ আসনটি চাইবে জামায়াত। দু-একদিনের মধ্যে তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করে বিএনপির কাছে তালিকা দেবে। এ দলের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবে তারা।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য এহসানুল মাহবুব জোবায়ের বলেন, ২০-দলীয় জোটের সঙ্গেই নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমরা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করব। যে যেখানে যে মার্কা পাবে, তা নিয়ে প্রার্থীরা নির্বাচন করবে। ধানের শীষ নয়।
২০-দলীয় জোটের শরিক কল্যাণ পার্টি ১২ আসনে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছে। দলটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, চট্টগ্রাম-৬সহ ১২ আসনের প্রার্থীর তালিকা করা হয়েছে। আজ সকালে বিএনপির কাছে তা জমা দেব।
সাতটি আসন প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে জাতীয় পার্টির (জাফর)। দলটির মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, গাইবান্ধা-৩, পিরোজপুর-১সহ সাত আসনের প্রার্থীর তালিকা আমরা চূড়ান্ত করেছি। রোববার বিএনপির কাছে সেই তালিকা জমা দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, ২০-দলীয় শরিকদের মধ্যে ১০টি দল এরই মধ্যে তাদের প্রার্থীর তালিকা দিয়েছে। তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকরা এখনও প্রার্থী তালিকা দেয়নি। তবে দু-একদিনের মধ্যে ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে তারা প্রার্থী তালিকা জমা দেবে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত প্রার্থী তালিকা ঠিক করিনি। গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, আমরা প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছি। দু-একদিনের মধ্যেই চূড়ান্ত করা হবে।
নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহেদ-উর রহমান বলেন, প্রার্থী তালিকার কাজ প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। শিগগিরই চূড়ান্ত করা হবে। কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী বলেন, এ ব্যাপারে আগামীকাল (আজ) আমাদের বৈঠক রয়েছে। প্রার্থীর তালিকা চূড়ান্ত করে দু-একদিনের মধ্যেই আমরা দেব।
Leave a Reply