(আবু সুফিয়ান রাসেল,কুমিল্লা)
কুমিল্লায় সক্ষমদের ভিক্ষাবৃত্তি বাড়ছে। সমাজকর্মের পরিভাষায় যাদের শারিরিক ভাবে কাজ করার সামর্থ আছে, তাদেরকে সক্ষক দরিদ্র বলে। আর ইসলামি গবেষকদের মতে, যে ব্যক্তির নিকট তার একদিনের খাবার আছে তাকে ফকির আর যে ব্যক্তির নিকট তার একদিনের খাবার নেই তাকে মিসকিন বলে। সম্প্রতি সময়ে কুমিল্লায় ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে সক্ষম দরিদ্র ফকিরের সংখ্যা।
জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দাউদকান্দি ২০৯, দেবিদ্বার ১২৫, লাকসাম ২৪৬, মুরাদনগর ৯২৩, মেঘনা ৮৩, ব্রাক্ষণ পাড়া ২০৭, মনোহরগঞ্জ ১৭৪, তিতাস ৩৫, চৌদ্দগ্রাম ২২৫, আদর্শ সদর ৬০, হোমনা ৩২১, চান্দিনা ৮০৭ জন তালিকা ভুক্ত ভিক্ষুক রয়েছে। লালমাই, সদর দক্ষিণ, বরুড়া, নাঙ্গলকোট উপজেলার ভিক্ষুক গণনা ও যাচাই বাছাই কাজ চলমান রয়েছে। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসের পরিসংখ্যান। ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু জাফর মনে করেন, যেহেতু ভিক্ষাবৃত্তি পেশা নয়, এটি একটি বৃত্তি । তাই প্রতিদিন এখানে নতুন লোক যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে, মানবিক দিক বিবেচনায় বিক্ষুক মানুষ ভিক্ষা দিয়ে থাকে।
সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, কুমিল্লার অধিকাংশ ভিক্ষুকের রয়েছে ব্যক্তিগত মোবাইল । রয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ ও রকেট। কেউ কেউ আবার বিজেডিং কার্ডও তৈরি করেছেন। অন্ধ ভিক্ষুক আমির হোসেন ভিক্ষাবৃত্তি করে দুই জনকে চাকুরি দিয়েছেন একজন তার রিক্সা চালক অন্যজন তার সহকারি।
তিশা বাস চালক জাহাঙ্গীর পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এক মধ্যবয়সি মহিলা ভিক্ষুককে দেখিয়ে বলেন, এ মহিলার বাড়ি বি.বাড়িয়া, আমার পাশের গ্রাম। আমি বাস চালাই ৯ বছর । প্রায় এখানে তার সাথে দেখা হয়। গত ইউনিয়ন নির্বাচনে এলাকায় পোষ্টারে দেখি তার ছবি মহিলা মেম্বার পদ প্রার্থী। এখানে তার স্বামী,ছেলে সহ তিন জন ভিক্ষা করে। আর এলাকায় জানে তারা কুমিল্লায় চাকুরি করে, নির্বাচরে সময় সে নির্বাচন করে। তিন জনের দৈনিক আয় ২৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা। আলোচনার ফাঁদে কান্দিরপাড়ের একজন ভিক্ষুক বলেন তার দৈনন্দিন আয় আটশ’-একহাজার। শুক্রবার হাজারের উপরে যায়, আর রমজান মাসে যাকাতের টাকা সহ প্রতিদিন দুই হাজার টাকা আয় হয়।
ক্ষোভ প্রকাশ করে ব্যাংক কর্মকর্তা সুলতানা বেগম বলেন, কাজ করতে সক্ষম কাজ করে না, ভিক্ষা করে। যদি বলি বসায় কাজ করবা রাজি হয় না।
বরুড়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মুফতি মাওলানা আলী আকবর ফারুকী বলেন, নবীজির শিক্ষা করো না ভিক্ষা এ বাণী সকলের জানা। ইসলাম ভিক্ষা বৃত্তিকে নিষেধ করেছে, কর্মকে উৎসাহিত করেছে। শারিরিক ভাবে কর্মক্ষম ব্যক্তি যদি ভিক্ষা করে সে কবিরা গুণাহগার হবে। যে তাকে ভিক্ষা দিবে তারও পাপ হবে।
এ বিষয়ে জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জেড,এম মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের হিসাব মতে এখন কুমিল্লায় ভিক্ষুক সংখ্যা ৩৭০২ জন। ভিক্ষুকমুক্ত করার লক্ষে ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন, বিকল্প কর্মসংস্থান, তাদের আত্ম-কর্মসংস্থানের জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাকরণসহ নানা কর্মসূচির সরকারের রয়েছে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষে ৭৪,০৪০০০০ টাকার বরাদ্দের চাহিদাপত্র দফতরে প্রেরণ করা হয়েছে।
Leave a Reply