(জাগো কুমিল্লা.কম)
পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটে প্রায় অচল হয়ে পড়েছে কুমিল্লা। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে অফিসগামী ও খেটে খাওয়া মানুষ। কুমিল্লার জাঙ্গালিয়া ও শাসনগাছা বাসস্ট্যান্ডে গাড়ির জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় দেখা যায় অসংখ্য যাত্রীদের। কোন গাড়ি না থাকায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে অনেকটা বাধ্য হয়েই রিক্সা করে অফিসে যাচ্ছেন অনেকে।
রবিবার (২৮ অক্টোবর) সকাল থেকে নগরী টমছমব্রীজ কান্দিরপাড়, চকবাজার এলাকায় অফিস বা স্কুল কলেজে যাওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায় ।।
তবে টমছমব্রীজ এলাকায় কোন প্রকার যানবহন ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। লাঠি নিয়ে সড়কে অবস্থান করছে শ্রমিকরা। লাটিসোটা নিয়ে পিকেটিং করছে পরিবহন শ্রমিকরা। তবে আইনশৃঙ্গলা বাহিনীদের তৎপরতা চোখে পড়েনি।
সরেজমিন দেখা যায়, ধর্মঘটের কারণে রাস্তায় কোন গাড়ি না থাকায় মোড়ে মোড়ে মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। এ সময় অনেকেই রিক্সা করে অনেককেই গন্তব্যে যেতে দেখা যায়। এ বাহনগুলোকে দেখা যায় অতিরিক্ত ভাড়া হাঁকাতে।
ভোগান্তিতে পড়া যাত্রীরা বলেন, কোন কিছু হলেই আমাদের ভোগান্তিতে ফেলছে। আমরা সমস্যা তৈরি না করলেও দিন শেষে আমরাই ভুক্তভোগী। এ সুযোগটা রিক্সা ভাল ভাবেই কাজে লাগিয়েছে। ১০ টাকার ভাড়া এখন ৪০ টাকা হাঁকাচ্ছে। অনেকেই বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই অফিসে যাচ্ছে। কি করবে বলেন? এটা দেখার কেউ নেই।
সারমিন আক্তার নামে আরেক জন বলেন, কোন কারণে গাড়ি নেই তা আমার জানা নেই। তবে এভাবে ভোগান্তিতে আমাদের প্রায়ই পরতে হচ্ছে। সরকারের কাছে অনুরোধ করব আর নয়, এখন আমাদের দিকে একটু তাকান। আর কতদিন আমরা এই সমস্যা ফেস করবো।
উল্লেখ্য, সংসদে পাস হওয়া ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’-এর কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ ৮ দফা দাবিতে রবিবার (২৮ অক্টোবর) সকাল ছয়টা থেকে সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। শনিবার (২৭ অক্টোবর) সংগঠনটির সভাপতি সংসদ সদস্য ওয়াজিউদ্দিন খান ও সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
শ্রমিকদের ৮ দফা দাবিগুলো হলো:
১. সড়ক দুর্ঘটনায় সকল মামলা জামিনযোগ্য করতে হবে।
২. শ্রমিকদের অর্থদণ্ড ৫ লাখ টাকা করা যাবে না।
৩. সড়ক দুর্ঘটনা তদন্ত কমিটিতে শ্রমিক প্রতিনিধি রাখতে হবে।
৪. ড্রাইভিং লাইসেন্সে শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি করতে হবে।
৫. ওয়েটস্কেলে জরিমানা কমানো ও শাস্তি বাতিল করতে হবে।
৬. সড়কে পুলিশের হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
৭. গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের সময় শ্রমিকদের নিয়োগপত্র সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সত্যায়িত স্বাক্ষর থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।
৮. সকল জেলায় শ্রমিকদের ব্যাপক হারে প্রশিক্ষণ দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করতে হবে। লাইসেন্স ইস্যুর ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করতে হবে।
এর আগে পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ গত ৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদে সদ্য পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ সাত দফা দাবিতে ধর্মঘট করেছিল। পরবর্তীতে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছিল ট্রাক পরিবহন শ্রমিকরা।
এদিকে, শুক্রবার (২৬ অক্টোবর) কেরানীগঞ্জে ট্রাকচালক-শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে এক শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার (২৭ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দুপুর ২টায় থেকে ৩টা পর্যন্ত পরিবহন শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করে সমাবেশ করেছে।
Leave a Reply