( জাগো কুমিল্লা.কম)
সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে ট্রাফিক বিভাগে নতুন যোগ হয়েছে ভিডিও মামলা। সাধারণত ট্রাফিক মামলা দিতে গেলে, নানা রকম তদবির ও অনুরোধ আসে। তবে ভিডিও মামলাকে তদবির হীন নিরাপদ মামলা বলে থাকেন ট্রাফিক পুলিশ। সম্প্রতি এই নিরাপদ মামলা দিতে গিয়েও হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন এক ট্রাফিক সার্জেন্ট। ঘটনায় ধারণ করা ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
মিরপুর ১৩ নাম্বার স্কলাস্টিকা স্কুলের সামনে ডাবল লেনে পার্কিংয়ে রাখা, গাড়ি গুলোর ভিডিও করছিলেন ট্রাফিক সার্জেন্ট ঝোটন সিকদার। এমন সময় গাড়ির ভেতরে থাকা এক নারীকে বলতে শোনা যায়-
‘এই কার গাড়ির ছবি তোলো? এটা সরকারি দলের লোকের গাড়ি। কার গাড়ির ছবি তোলো? বেশি…কইরো না! তোমার মতো সার্জেন্ট কয় টাকা বেতনে চাকরি করে? কয় টাকা বেতনে চাকরি করে তোমার মতো সার্জেন্ট? আমরা প্রধানমন্ত্রীর লোক, ঠিক আছে? যদি সাহস থাকে…আমার বাবা জাতীয় কমিটির সদস্য, আমার বাবা এমপি, ঠিক আছে? তোমার মতো হাজারটা সার্জেন্ট…ঠিক আছে? কয়টাকা বেতনে চাকরি করো? হ্যাঁ চাকরই তো..চাকরই তো!’
সার্জেন্ট ঝোটন তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এমনই একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। এ প্রসঙ্গে ট্রাফিক সার্জেন্ট ঝোটন সিকাদার বলেন, এ ঘটনার পর আমি ঐ গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছি। ওনার নাম ফারজানা ইয়াসমিন। ঠিকানা ২৮১/১ ইব্রাহিমপুর ঢাকা ক্যান্টমেন্ট। ওনি অস্বীকার করতে পারেন তাই, মামলার কাজের পাশাপাশি ভিডিওটা ধারণ করি।
অন্যদিকে, ভিডিও মামলা কি আর কি কারণে ট্রাফিক সার্জেন্ট ভিডিও করলো, এ সম্পর্কে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের এডমিন ও রিসার্চ উইংয়ের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার গোপাল চন্দ্র পাল কে বলেন, সাধারণত যখন গাড়িতে চালক থাকে না, অথবা ব্যস্ত রাস্তায় উল্টো পথে গাড়ি চালায়। যেখানে এক মিনিট দাঁড়ালে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে। তাই সেসব জায়গায় কর্তব্যরত পুলিশের কাছে যে ক্যামেরা থাকে, সেটা দিয়ে ভিডিও করে থাকে। পরে ভিডিও দেখে গাড়ির নাম্বার নিয়ে, বিআরটিএ থেকে নাম বের করে মামলা দেওয়া হয়। এখানে কোন তদবিরে কাজ হয় না। অনেক টা ঝামেলাহীন ও নিরাপদ এই ভিডিও মামলা।
পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, এ বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত এমন ভিডিও মামলা হয়েছে মোট ৮ হাজার ৩৬১ টি। (২৪ সেপ্টেম্বর) সোমবার হয়েছে ৩০ টি মামলা। ঝোটন শিকদার আরও বলেন, ‘ঘটনার সময় আমার কথাবার্তা যতেষ্ট নমনীয় ছিল। আমি তাকে গাড়িটি সরিয়ে নিতে অনুরোধ করি। কিন্তু তিনি আমার সাথে বেশ বাজে আচরণ করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘ডাবল লেনে গাড়ি পাকিং করায় বিশাল যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। তাকে গাড়ি সরাতে বলায় দুই টাকার চাকরি করি, দুই টাকার সার্জেন্ট, তার বাবা এমপি এমন নানা কথা শোনান।’মেট্রো-গ, ২৬-৯৩৪৭ নম্বরের এই গাড়িটির বিরুদ্ধে তিন অবৈধ পার্কিংসহ তিন ধারায় তিনটি মামলা করা হয়েছে বলে জানান সার্জেন্ট ঝোটন শিকদার।
ঘটনার কারণে উপর থেকে কোনো চাপ বা ফোন কল এসেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, আমার কাছে এমন কোনো কল বা কারো কোনো চাপ আসেননি। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি।‘জানা গেছে, প্রাইভেটকারটির আরোহীর নাম ফারজানা ইয়াসমিন। তার বাবার নাম আব্দুল বাতেন মিয়া। ফারজানা ইয়াসমিন নিজেকে সাংসদ কন্যা হিসেবে পরিচয় দিলেও দশম জাতীয় সংসদ সদস্যের তালিকায় তার বাবার নামে কোনো সংসদ সদস্য নেই
এদিকে পোস্টটি ভাইরাল হওয়ার পর ফেসবুকে অনেকেই ওই নারীর কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের ভিডিও শেয়ার করে তার কঠোর সমালোচনা করেন।ওই পোস্টের নিচে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মিহাদ রহমান লিখেছেন, ‘অন্যায় যে করবে সে অপরাধী, হোক আওয়ামী লীগ অথবা বিএনপি কোনো ছাড় নেই। সার্জেন্ট ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য।’
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মিহাদ রহমান লিখেছেন, ‘অন্যায় যে করবে সে অপরাধী, হোক আওয়ামী লীগ অথবা বিএনপি কোনো ছাড় নেই। সার্জেন্ট ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য।’হাসান রিজভি নামের চট্টগ্রামের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘এরা রাস্তাঘাটে সরকারের নাম অন্যায় কাজে বিক্রি করে কষ্টে অর্জিত দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।’কাজী কামরুল নামে এক ব্যবসায়ী লিখেছেন, ‘উনাকে ও উনার গাড়িটা আটক করা উচিত ছিল। তারপর দেখা যেত তিনি কোন নেতার বউ বা মেয়ে। এরা দলের ক্ষতি করে। উনার কথাগুলো রেকর্ড করা ছিল তাই আটক করা যেত।’
Leave a Reply