(অাক্কাস অাল মাহমুদ হৃদয়, কুমিল্লা)
কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সিদলাই গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় রমিজ উদ্দিন (৫০) নামের আরো এক ব্যক্তি নিহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে ১৯সেপ্টেম্বর বুধবার সকালে।
তবে পুলিশ বলছেন, এটি খুনের ঘটনা নয়। ধারণা করা হচ্ছে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছে। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলেই প্রকৃত রহস্য উদঘাটন হবে। নিহতের পরিবারের দাবী প্রতিপক্ষ সামসু মিয়ার লোকজন তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে পাঠিয়েছে। নিহত রমিজ উদ্দিন (৫০) উপজেলার দক্ষিণ সিদলাই গ্রামের মঞ্ছুর আলীর ছেলে।
তিনি খোরশেদ ও সানু মিয়ার হত্যা মামলার আসামী ছিলেন।পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সিদলাই গ্রামের মফিজ মিয়ার (বড় দল) ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সামসু মিয়ার (ছোট দল) সমর্থিত লোকজনদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। গত বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি মফিজ মিয়া ও সামসু মিয়া, দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে মফিজ মিয়া নিহত হয়েছিলেন। ওই দিন থেকে সামসু মিয়ার লোকজন এলাকা থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সামসু মিয়া যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেও নেতেৃত্ব দেন তার মেয়ের জামাতা মফিজুল ইসলাম ও একই গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য অহিদ মিয়া।
গত ৮ সেপ্টেম্বর শনিবার ভোর রাতে সামসু মিয়ার লোকজন বিভিন্ন এলাকার লোকজন নিয়ে মফিজ মিয়ার বাড়িতে আক্রমন করেন। এ সময় বাড়ি-ঘর ভাংচুর করেন। পরে মফিজ মিয়ার লোকজন একত্রে হয়ে তাদের উপর পাল্টা আক্রমণ করেন। প্রায় ঘন্টাব্যাপী চলে এ সংঘর্ষ। এতে সামসু মিয়ার সমর্থিত খোরশেদ আলম ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। গুরুতর আহত চা দোকান ব্যবসায়ী সানু মিয়া ওরফে শুক্কু মিয়াকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০জন। খবর পেয়ে ব্রাহ্মণপাড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। দুটি খুনের ঘটনায় থানায় দুটি হত্যা মামলা হয়েছে।
এই ব্যাপারে নিহত রমিজ উদ্দিনের স্ত্রী ঝরনা আক্তার সাংবাদিকদের জানান, প্রতিপক্ষের হামলার ভয়ে রাত জেগে বাড়ী ঘর পাহাড়া দেয় (বড় দল) এর মফিজ মিয়ার লোকজন। গত মঙ্গলবার রাতে তারা পাহাড়া দিচ্ছিলেন। এ সময় রমিজ উদ্দিনও পাহাড়া দিচ্ছিলেন। গতকাল বুধবার ভোরে সামসু মিয়া সমর্থিত (ছোট দল) এর লোকজন তাকে মেরে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে বাড়ির মহিলারা তাকে মাথায় পানি দিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করে এসময় ঘটনাস্থলেই রমিজ উদ্দিন মারা গেছেন। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌছে নিহতের লাশ উদ্ধার করে শোরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য একই দিনে নিতহের লাশ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। এই সংবাদ লিখা পর্যন্ত মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
অপর দিকে নিহত রমিজ উদ্দিনের চাচাত ভাই হাবিুর রহমান বলেন, মামলা ও প্রতিপক্ষের হামলার ভয়ে তারা রাত জেগে বাড়ী ঘর পাহাড়া দেয়। রমিজ উদ্দিনও ঐদিন বাড়ীর পশ্চিম দক্ষিণ কোণে বাশের মাচায় অবস্থান নিয়ে পাহাড়া দিচ্ছিলেন। ভোরবেলায় সামসু মিয়ার লোকজন রমিজ উদ্দিনকে মারাধর করে হত্যা করেছেন। আমরা এ হত্যার বিচার চাই।
ব্রাহ্মণপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ আবু মোঃ শাহজাহান কবির জানান, দুই পক্ষের সংঘর্ষে, পূর্বেও দুইজন নিহত হয়েছিলেন। দুটি হত্যা মামলা হয়েছে। রমিজ উদ্দিন হত্যা মামলা আসামী ছিল। ধারণা করা হচ্ছে তিনি হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। তবে নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পেলেই প্রকৃত রহস্য জানা যাবে এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঐ এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
Leave a Reply