(বারী উদ্দিন আহমেদ বাবর, নাঙ্গলকোট)
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের শ্রীফলিয়ায় এক ভন্ড কবিরাজের হাতে ৪র্থ শ্রেনীতে পড়–য়া ওমান প্রবাসীর শিশু কন্যাকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। ওই ভন্ড কবিরাজ পেরিয়া ইউনিয়নের শ্রীফলিয়া গ্রামের মৃত আলী নোয়াবের পুত্র আবুল হাশেম (৫২)।
গত সোমবার সকালে ওই ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা ঘটে। পরে একই দিন দুপুরে ওই শিশুর মা বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। থানায় অভিযোগের পর থেকে আজ রোববার পর্যন্ত দফায় দফায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই ভন্ড কবিরাজকে আটক করতে পারেনি।
থানায় অভিযোগের পর ওই শিশু ও তার মাকে হত্যা হুমকি দিচ্ছে আবুল হাশেম এবং তার পরিবারের সদস্যরা। পরিবারে কোন পুরুষ মানুষ নাথাকায় ওই ভন্ড কবিরাজের হত্যার হুমকিতে এখন আতংকে দিন কাটছে তাদের। নির্যাতিতা শিশুটি ৩ বোনের মধ্যে দ্বিতীয়, তাদের কোন ভাই নেই। শিশুটির পিতারও কোন ভাই না থাকায় বলা চলে ওই শিশুটির বাবা প্রবাসে থাকায় তাদের পরিবার এখন পুরুষ শূণ্য।
শিশুটির পারিবারিক সূত্রে জানাযায়, উপজেলার শ্রীফলিয়া গ্রামের নির্যাতিতা ওই শিশুর পিতা ওমান প্রবাসী, সেই সুবাধে শিশুটির দাদা বা কোন চাচা না থাকায় পরিবারে সকল কাজ তার দাদী ও মা মিলেই চালিয়ে নেয়। গত সোমবার দুপুরে তাদের ঘর মেরামতের জন্য শিশুটির মা দুই বোন ও দাদী পাশ্ববর্তি কাজী জোড়পুকুরিয়ায় নানার বাড়ীতে বাঁশ আনার জন্য যায়। ওই শিশুটি সকাল পৌনে ১০টার দিকে স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বাড়ী সামনে এলে পাশের বাড়ীর সম্পর্কে ওই শিশুটির দাদা আবুল হাশেম তাকে হাত ধরে শিশুদের নিজ ঘরে নিয়ে যায়া।
পরে শিশুটি কি জন্য এসেছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে দাদা আবুল হাশেম দরজা-জানালা বন্ধ করে দেয়। দরজা-জানালা বন্ধ করতে দেখে শিশুটি শোর চিৎকার শুরু করলে আবুল হাশেম তার মুখ চেপে দরে পরনের পায়জামা খোলার চেষ্টা করলে পায়জামার রশিতে গিট্টু লেগে যায়।
পরে ওই ভন্ড কবিরাজ শিশুটির পায়জামা ছিঁড়ে ফেলে তাকে ধর্ষণের চেষ্টার সময় ওই শিশুর আত্ম চিৎকারে কাজ শেষে বাড়ী ফিরে আশা তার দাদী খুরশিদা বেগম দরজা খোলে ঘরে প্রবেশ করলে আবুল হাশেম তাকে ধাক্কামেরে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে একই দিন শিশুটির মা বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় অভিযোগ করেন। অভিযোগটির তদন্তকারী কর্মকর্তা নাঙ্গলকোট থানার এস আই শফিকুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে কয়েক দফায় চেষ্টা চালিয়ে ভন্ড কবিরাজ আবুল হাশেমকে আটক করতে পারেনি।
এ ব্যাপারে শিশুটির দাদী খুরশিদা বেগম বলেন, আবুল হাসেম গত ৪ বছর আগে আমার বড় নাতনীকে বাড়ীর পাশের আঁখ ক্ষেতে জোর পূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করলে আমার নাতনী তাকে কামড় দিয়ে বি-বস্ত্র অবস্থায় বাড়ীতে এসে অজ্ঞাণ হয়ে যায়। সে এখন আমার আরেক নাতনীকে এভাবে ধর্ষণের চেষ্টা করে। আমি না আসলে সে আমার নাতনীকে ধর্ষণ করে খুন করে পেলতো। পূর্বের ঘটনায় হাসেমের বর্তমান স্ত্রী রেনু বেগম, ভাই মোবারক হোসেন ও তার বাড়ীর লোকাজন মিলে বিষয়টি মিমাংসা করেন।
নির্যাতিতা শিশুর মা বলেন, আবুল হাশেম আমার সম্পর্কে চাচা শ্বশুর হয়। সে ৪ বছর আগে আমার বড় মেয়ে ও এখন আমার মেঝো মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। পরে আমি এ জানোয়ারের বিচার চেয়ে থানায় অভিযোগ করি। আমাদের পরিবারে কোন পুরুষ মানুষ নেই , থানায় অভিযোগ করার পর আবুল হাশেম ও তার পরিবারের লোকজন আমাদেরকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। আমরা প্রশাসনের কাছে আমার শিশু কন্যার উপর এমন নির্যাতনের বিচার ও আমাদের জীবনের নিরাপত্তা চাই।
নাম প্রকাশ না করার স্বর্থে ভন্ড কবিরাজ আবুল হাসেমের এক নিকটাত্মীয় জানান, হাসেম আনুমানিক ২৫ বছর আগে শ্রীফলিয়া বাজার মসজিদের মাইক চুরি করে এলাকা ছাড়ে পালিয়ে যায়, পরে কয়েক বছর পর বাড়ীতে এসে সে আবার এলাকায় মানুষের বাড়ী ঘরে চুরি ডাকাতি শুরু করে পরে আবার বাজারে তার চাচাত ভাই হুদা মিয়ার চাউল দোকানে চুরি করে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। হাসেম মোট ৩টি বিবাহ করে। সে প্রথম বিয়ে করেন পাশ্ববর্তি আশারকোটা গ্রামে পরে ময়মনসিং ও আখাউড়ায় আরো ২টি বিবাহ করেন, সে বর্তমানে তার ১ ছেলে ও ২ কন্যার জনক।
আবুল হাসেম শেষ বার ১০ বছর পর এলাকায় এসে জিনের আছর, বদ নজর, বান-টোনা, জাদু, তাবিজ কবজ ও ঝারপুক দেয়া শুরু করে। সে এবার এলাকার আসার পর ৫ বছরে তার আপন দুই ভাই সহ গ্রামের অসংখ্য লোকের নামে মামলা করে তাদেরকে হয়রানি করে আসছে। এছাড়া, হাসেমের ময়মনসিংয়ের স্ত্রী ও আখাউড়ার স্ত্রীর নির্যাতনের মামলা এখনো চলছে।
এলাকার লোকজনের সাথে সামান্য বিষয় নিয়ে সে ও তার স্ত্রী সন্তানরা মিলে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে লোকজনের উপর হামলার ঘটনা তার নিত্য দিনের। তার মামলা ও হামলার বয়ে এলাকাবাসী তার বিরুদ্ধে কোন অবস্থান নেয়ার সাহস পায়না। লম্পট ভন্ড কবিরাজ আবুল হাসেমকে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবী করেছেন ভোক্তভূগী ও এলাকাবাসীরা।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নাঙ্গলকোট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় মামলা নির্যাতিতা ওই শিশুর মা বাদী হয়ে থানায় দায়ের করেছেন। এরপর থেকেই আসামী পলাতক রয়েছে। ভন্ড কবিরাজকে গ্রেফতারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
Leave a Reply