(আক্কাস আল মাহমুদ হৃদয়, বুড়িচং)
বৈশাখ মাস শেষ হতে চলল, এখনও অনেক ধান কাটা বাকি। ক্ষেতে পাকা ধান থাকলেও তা কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তবুও কৃষক নিজ চেষ্টায় চালিয়ে যাচ্ছে ধান কাটা। তাদের সোনালী ফসল বোরো ধান বাড়িতে আনতে না আনতেই বৈরি প্রকৃতি ঝড় বৃষ্টি থেমে থেমে হওয়ার কারণে তাদের দুর্ভোগ ও দুশ্চিন্তা দিন দিন বেড়েই চলছে।
বৃষ্টির পানিতে জমির মাটি নরম হওয়ার কারণে বোরো ধান কেটে বাড়িতে আনা পর্যন্ত তাদেরকে প্রতিনিয়ত কষ্ট করতে হচ্ছে। কিন্তু কিছু সংখ্যক শ্রমিক পাওয়া গেলেও তারা আবার বজ্রপাতের আতঙ্কে বৈরি আবহাওয়া দেখলে মাঠে নামছে না। কারণ গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে বেশ কয়েকজন কৃষক ও শ্রমিক মারা যায়। এর কারণে আকাশ কালো বাতাস ও বৃষ্টি দেখলে তারা মাঠ থেকে বাড়িতে চলে আসে। এখনও ধান কাটার হার্ভেষ্টার মেশিন এ এলাকাতে আসেনি।
ফসল ভালো হলেও মুখে হাসি থাকলেও কমছে না তাদের কষ্ট। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে কুমিল্লা জেলা সহ বুড়িচং সদর, রাজাপুর, বাকশীমূল, ষোলনল, পীরযাত্রাপুর, ময়নামতি, মোকাম, উত্তর ভারেল্লা, দক্ষিণ ভারেল্লা ইউনিয়ন এলাকা জুড়ে মাঠের ধান পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। কৃষকরা ভয়ে তাদের সোনালী ফসল বাড়িতে আনার জন্য ৯০০, ১০০০ টাকা মজুরি দিয়ে শ্রমিক রেখে মাঠ থেকে ভেলা, নৌকা ও অন্যান্য মাধ্যমে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ এলাকায় ৯ হাজার ২শত ৬০ হেক্টর জমিতে এ বছর বোরো ধান আবাদ করা হয় । সরজমিনে ঘুরে কৃষকদের সাথে কথাবলে জানা যায় এই ভাবে বৃষ্টি, শ্রমিকের সংকট থাকলে কৃষকের ফসলের ন্যায্য মূল পাওয়া যাবে না বলে তাদের ধারণা। এ উপজেলায় বেশির ভাগ মানুষেই অন্যান্য ফসলের চেয়ে তাদের জমিতে ধান আবাদ করে থাকে। এখানকার কৃষকেরা যদিও বা কৃষি কাজে নির্ভরশীল ।
সরজমিনে ঘুরে একাধিক কৃষক থেকে আরো জানা যায়, এ বছর ফসল ভালো হয়েছে কিন্তু ৭-৮, ৯শত টাকা দিয়ে কাজের লোক আনতে হয়। আগের মত ময়মনয়সিংহ ,রংপুর সহ অন্যান্য অঞ্চল থেকে ধান কাটার সিজনে কাজের লোক আসিতেন কিন্তু তাদের আর্বিভাব আগের চেয়ে দিন দিন কমে যাচ্ছে।
যার কারণে আমরা শ্রমিক সংকটে পরেছি এবং ধান কেটে বাড়িতে নিতে অনেক টাকা লেগে যাচ্ছে যা আমাদের লাভের বদলে খরচের পাল্লা ভারি হচ্ছে।
উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় এ বছর ৯ হাজার ২শত ৬০ হেক্টর জমিতে হাইব্রীড, বিড়ি ৫৮, বিড়ি ২৮, ২৯, বিআর ১৬ বোরো ধান আবাদ করা হয়।
২৯ ধান পাকতে সময় লাগার কারণে এখন কৃষকরা অন্য ধানের আবাদের প্রতি ধাবিত হচ্ছে। এবছর আনুমানিক ধানের গড় উৎপাদন হবে প্রতি হেক্টর ৫ দশমিক ৫ মেট্রিক টন। তবে গত বছরের চেয়ে এ বছর বোরো ধানের ফসল ভালো হয়েছে। এ উপজেলার কৃষকদের প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ৯হাজার এবং কোনো কোনো জায়গায় পানি সেচের জন্য এর চেয়ে বেশিও খরচ হয়েছে।
প্রতি বিঘাতে ধানের উৎপাদন হতে পারে ১৭ মণ। প্রতি কেজি ধানের মূল্য ২৮ টাকা আর চালের মূল্য ৩৮ টাকা করে এ বছর সরকার কৃষকের কাছ থেকে ক্রয় করিবেন। তবে এ এলাকায় শ্রমিক সংকট রয়েছে এবং বৃষ্টির কারণে তাদের দূর্ভোগ বেড়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক কৃষকরা তাদের ফসল বাড়িতে নিয়ে এসেছে তবে পুরোপুরিভাবে এখনও ঘরে তুলতে পারেনি।
Leave a Reply