অনলাইন ডেস্ক:
অক্টোবরের শেষ ভাগে ছোট আকারে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা গঠনের পরিকল্পনা করছে সরকার। এই মন্ত্রিসভার আকার হবে ২০ বা ২১ সদস্যের। দেশবাসীর কাছে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি আছে, এমন রাজনীতিকই থাকছেন নির্বাচনকালীন নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায়।
এই সরকারের প্রধান থাকবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে মাঠের বিরোধী দল বিএনপির কাউকে রাখা হবে না।
টেকনোক্র্যাট কোটায় ১৪ দলীয় জোটভুক্ত বা সমমনা রাজনৈতিক দল থেকে নতুন মুখ আসার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক হ্যাভিওয়েট মন্ত্রী এই নতুন সরকার থেকে ছিটকে পড়তে পারেন। সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একই বছরের ২৯ জানুয়ারি নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে বসেছিলেন। সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিন অর্থাৎ এ বছরের ৩১ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
কিন্তু সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদে বলা আছে, সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে (ক) ‘মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে।’
ভোট গ্রহণের পর ঘোষিত ফলের গেজেট প্রকাশসহ কিছু কাজ থাকে। এ ছাড়া কিছু কেন্দ্রে ভোট স্থগিত হলে সেগুলোও মেয়াদের মধ্যেই শেষ করতে হয়। এ জন্য নির্ধারিত ৯০ দিন শেষ হওয়ার আগেই ভোটের সময় নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।
সে ক্ষেত্রে ডিসেম্বরের শেষ দিকের যে কোনো দিন ভোটের সম্ভাবনাই বেশি। তবে ২৭ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের উচ্চপর্যায়ের আগ্রহ রয়েছে বলে অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে।
সূত্রমতে, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহেই নির্বাচনকালীন সরকারের ক্ষণগণনা শুরু হবে। নতুন সরকার গঠনের আগে কারা কারা থাকবেন এবং কারা বাদ পড়ছেন তা জানিয়ে দেওয়া হবে। সে অনুয়ায়ী বর্তমান মন্ত্রিসভায় থাকা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা পদত্যাগ করবেন। ৩০ বা ৩১ অক্টোবর নির্বাচনকালীন নতুন সরকারের যাত্রা শুরু হবে। যেসব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়বেন তারা দলের পক্ষে নির্বাচনী কাজে জোর দেবেন।
নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়া তারকা নেতারা ঘুরে বেড়াবেন সারা দেশ। নিজ নির্বাচনী এলাকা ছাড়াও জেলায় জেলায় নির্বাচনী সভায় যোগ দেবেন তারা। অতি সম্প্রতি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘অক্টোবরের যে কোনো সময়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হবে। সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলো নিয়েই এ সরকার গঠন হবে। অন্য কাউকে রাখার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, কারও কোনো শর্ত মেনে আগামী নির্বাচন হবে না। নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী।’
আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতা জানিয়েছেন, সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা দেবে নির্বাচনকালীন সরকার। সরকারের প্রধান থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সরকার যে অবস্থায় আছে, সেই অবস্থায় দায়িত্ব পালন অব্যাহত থাকবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সময় যেমনটি থাকে, জাতীয় নির্বাচনের সময়ও সেভাবে সরকার থাকবে। যেহেতু ওই সরকারের রুটিন ওয়ার্কের বাইরে কোনো কাজ নেই, তাই নির্বাচনকালীন সরকার আকারে ছোট করা হবে। নির্বাচনকালীন সরকারে ক্ষমতাসীন ১৪ দলের সদস্যরা ছাড়াও সংসদীয় বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি থাকবে।
টেকনোক্র্যাট কোটায়ও আসতে পারে তিন থেকে চারজন নতুন মুখ। জোটের বাইরেও সমমনা রাজনৈতিক দলের কোনো তারকা নেতার দেখা মিলতে পারে নির্বাচনকালীন সরকারে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছে এমন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে। এতে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি মন্ত্রিসভায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কোনোভাবেই বিএনপির অংশ গ্রহণের সুযোগ নেই।’
আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার নামে সংবিধানে কোনো সরকারের অস্তিত্ব নেই। তবে দীর্ঘদিনের রেওয়াজ অনুসারে সরকার প্রধান নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য ছোট পরিসরে মন্ত্রিসভা গঠন করেন। এই মন্ত্রিসভায় যারা থাকেন, তারা অপেক্ষাকৃত রাজনৈতিক বিতর্কহীন ব্যক্তিরাই থেকে থাকেন। কারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সবার কাছে যাতে কোনো বিতর্ক অবতারণা না হয়। বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। ফলে সব সিদ্ধান্তই তিনি গ্রহণ করবেন।’ সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন ।
Leave a Reply