(অমিত মজুমদার,কুমিল্লা)
নানা আলোচনা ও সমালোচনার পরও কুমিল্লা জেলার ইংরেজী বানান ‘cumilla’ প্রস্তাবিত মন্ত্রিপরিষদের সিদান্তকেই মেনে নিতে হচ্ছে কুমিল্লাবাসীকে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি এসেছে।
রবিবার সকালে আইন শৃঙ্খলা সভায় কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো: আবুল ফজল মীর বলেন, কুমিল্লা ইংরেজী বানান comilla থেকে cumilla পরিবর্তন নিয়ে গেজেট প্রকাশ হয়েছে। অত:পর তিনি মন্ত্রণালয় থেকে প্রেরিত জেলার নাম পরিবর্তনের গেজেট কপিটি সাংবাদিকদের কাছে হস্তান্তর করে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মুহাম্মদ মুতাসিমুল ইসলামের স্বাক্ষরিত গেজেট কপিতে উল্লেখ করা হয়। গত দুই এপ্রিল নিকার এর ১১৫ তম সভার বেঠকে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ কর্তৃক প্রস্তাবিত কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, যশোর, এবং বগুরা এই ৫ টি জেলার নামের ইংরেজি বানান বাংলা উচ্চারণের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বানান পরিবর্তন সর্ব সম্মতিক্রমে অনুমোদন করা হলো।
চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ এই নিয়ে সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবে। সকল মন্ত্রণালয়,বিভাগ, দপ্তর, জেলা উপজেলাসহ বিদেশে বাংলাদেশে মিশন সমূহ এবং বাংলা ও ইংরেজী অভিধানে এ বিষয়ে প্রয়োজনী সংশোধন আনায়নের লক্ষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের নির্দেশ দেওয়া হয়।
জেলা প্রশাসক উক্ত সিদ্ধান্ত জানানোর পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সভায় উপস্থিত কুমিল্লার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা। তারা বলেন এ সিদ্ধান্তের ফলে পাসপোর্ট থেকে শুরু করে সার্টিফিকেট সহ নানা জটিলতায় পড়বে কুমিল্লাবাসী।
এদিকে কুমিল্লা জেলার নামের ইংরেজি বানান পরিবর্তনে মানুষের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। কেউ কেউ এ সিদ্ধান্তের প্রশংসা করলেও অনেকে সমালোচনা করছেন। সমালোচকদের অভিমত, পরিবর্তন করায় কুমিল্লার উচ্চারণ এখন ‘চিমুল্লা’ হয়ে যাবে।
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কুমিল্লার ইংরেজি বানান পরিবর্তনে এই এলাকার কোনও অর্থনৈতিক উন্নতি হবে না। এতে বরং মানুষের ভোগান্তি বাড়বে। আমরা কুমিল্লার নামের বানান পরিবর্তনকে অযৌক্তিক মনে করি।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক, কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম বলেন, ‘এ পরিবর্তনের কারণ আগে মানুষকে জানাতে হবে। জনগণের মতামত নিয়ে কুমিল্লার ইংরেজি বানান পরিবর্তন করলে কোনও বিতর্ক হতো না।’
কুমিল্লা সিসিএন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ড. আলী হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘এ পরিবর্তনে কুমিল্লার কোনও লাভ হবে না। তবে দেশ-সমাজ পরিবর্তনশীল, পরিবর্তনে কোনও দোষ নেই। প্রয়োজনে পরিবর্তন করা যেতে পারে।’
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান রাশেদা আক্তার তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘আমরা বিভাগ ও নামের আদ্যাক্ষর লইয়া বড়ই অসহায় অবস্থায় পতিত হইলাম। নিজেদের নামও বদলাইয়া যাইবে কি..?’
কুমিল্লা সিটি কাউন্সিলর কাউসারা বেগম সুমি তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘আমাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেটসহ সব কিছুতেই কুমিল্লাবাসীকে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে।’
জাকির হোসেন তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘নাম পরিবর্তনে কত টাকা ব্যয় বা ক্ষতি হবে? হিসাব কে রাখে।’
নজরুল ইসালাম বাবুল তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘আর কত কিছুর নাম পরিবর্তন আমাদের দেখতে হবে, জানিনা! ভয় হচ্ছে, কখন আবার দেশের নাম পরিবর্তনের কথা কেউ ভেবে বসেন কিনা!’
কামরুল হাসান লিখেছেন, ‘নাম সংশোধন এত জরুরি নয়। কুমিল্লার রাস্তাঘাট মেরামত অতি জরুরি।’ এমন আরও অনেকেই নাম পরিবর্তন নিয়ে নানান কথা লিখেছেন।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. রুহুল আমীন ভূঁইয়া বলেন, ‘জেলার নামের ইংরেজি বানান পরিবর্তনে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবকদের হয়রানির সম্মুখীন হতে হবে না।’
Leave a Reply