অনলাইন ডেস্ক:
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। আগামী জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করবেন তিনি। তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর ট্রাম্প প্রশাসনের অনুসৃত বেশকিছু নীতি বদলে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ পেয়েছে।
বাইডেন জয়ী হওয়ায় বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্ক বিগত বছরগুলোর চাইতে আরও ইতিবাচক হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। বিশেষ করে বাইডেন প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয়ায় বাংলাদেশ পরোক্ষভাবে হলেও এর সুবিধা ভোগ করবে বলে মনে করেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশকে দেয়া জিএসপি বা বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা বাইডেন সরকার পুনর্বহাল না করলেও ব্যবসা-বাণিজ্যের আরও কিছু ক্ষেত্র প্রসারিত হতে পারে। এছাড়া রোহিঙ্গা সংকট নিরসনেও বাংলাদেশের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক সমর্থন আরও জোরালো হবে বলে আশা করছেন তিনি।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষ্য, ‘ডেমোক্রেটিক পার্টির নীতি মূল্যবোধের সঙ্গে বাংলাদেশ কিছু কিছু বিষয় জড়িত আছে। এ কারণে বাইডেন সরকারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক পজিটিভ হবে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, মানবাধিকার এমন আরও নানা ইস্যুতে বাইডেন সরকারের অবস্থান বেশ বলিষ্ঠ। বাংলাদেশ এ থেকে উপকৃত হবে। বাইডেন সরকার অভিবাসন-বান্ধব হওয়ায় বাংলাদেশ সরাসরি এর সুবিধা পাবে।’
উদারনীতির এই সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করায় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের প্রবেশ ও বসবাসের সুযোগ বাড়বে বলে মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন প্রত্যাশীরাও।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে তিন বছর ধরে আছেন বাংলাদেশের কুমিল্লার বাসিন্দা আসাদ আজিম। তিনি বলেন, ডেমোক্রেটরা যেহেতু ঐতিহাসিকভাবে উদারনৈতিক তাই বাইডেনের জয়ের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশি অভিবাসীরা সুনির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে লাভবান হবেন বলে আশা করা যায়। তার মতে, এর ফলে বাংলাদেশিদের ভিসা দেয়ার হার যেমন বাড়বে সেইসঙ্গে ভিসা প্রক্রিয়াও সহজ হবে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা নিতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পর কাজের সুযোগ, সেইসঙ্গে নাগরিকত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে বলে মনে করেন আসাদ আজিম।
ট্রাম্পের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেন্ট ভিসা সুবিধা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। জো বাইডেনের জয়ের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন ভিসা পুনরায় চালু হবে এবং বহু অভিবাসন প্রত্যাশী যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পাবে বলে আশা করছেন সেখানে যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশিরা।
যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে এবং অবৈধভাবে বসবাস করছেন তাদেরও বৈধতা পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে বলেও আশা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন মনে করেন, বাইডেন জয়ী হওয়ায় বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষ কিছু সুবিধা পাবে।
জো বাইডেন শুরু থেকেই বলে আসছেন তিনি প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন করবেন। সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশ যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ, এ কারণে বাইডেন ওই চুক্তিতে ফিরলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আগের চাইতে বেশি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
ট্রাম্প সরকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতিসংঘকে চাঁদা দেয়া বন্ধ রেখেছিল। বাইডেন সরকার সেটা পুনরায় চালুর প্রতিশ্রুতি দেয়ায় বাংলাদেশ পরোক্ষভাবে হলেও সুবিধা পাবে বলে মনে করেন তৌহিদ হোসেন।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদদের বরাত দিয়ে জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে এক প্রতিবেদনে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার এ পালাবদলে নানা দিক থেকে সুবিধা পেতে পারে বাংলাদেশ। তবে এর অনেকটাই নির্ভর করছে সুবিধা আদায় করতে বাংলাদেশ কূটনৈতিকভাবে কতটা তৎপরতা তার ওপর।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হকের মতে, ভবিষ্যতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশ আলাদা গুরুত্ব পাবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এবার আশা করতে পারি, বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের চোখ দিয়ে দেখবে না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য যে পরিমাণ বিনিয়োগ করেছেন আর বাইডেনকে যতটা উপেক্ষা করেছেন তার একটা ফল হয়তো আমরা দেখতে পাব। ভারতে এখন এমন অনেক ইস্যু এখন আছে যা ডেমোক্র্যাটদের পছন্দ না। আর এর সুবিধা পাবে বাংলাদেশ।’
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রহমানের ভাষ্য, ‘যত কথাই হোক না কেন ভারতের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের মতই থাকবে৷ তবে বাংলাদেশ এর ভেতর থেকেই আলাদা গুরুত্ব পাবে।’
জো বাইডেনের জয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা।
Leave a Reply