অনলাইন ডেস্ক:
স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদকে টানা তৃতীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা এনে দিয়েছেন মাত্র দুদিন আগে। আর এরপরই ফুটবল বিশ্বে যেন বোমা পড়ল। যদিও এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগ না জিতলে জিনেদিন জিদানকে রিয়াল মাদ্রিদের ডাগআউটে আর নাও দেখা যেতে পারে বলে গুঞ্জন ওঠেছিল। কিন্তু ২৬ তারিখের সেই পরীক্ষায় তো উতরে গেছে রিয়াল।
এমনকি টানা তিন চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে ইতিহাসে নাম লিখিয়েছেন জিদান। এ মৌসুমটা তাই স্বস্তি নিয়ে শেষ করেছিল ক্লাবটির সমর্থক। কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার (৩১ মে) আচমকাই এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন হঠাৎ সবাইকে চমকে দিলেন ফরাসি মহানায়ক। রিয়ালের কোচ হিসেবে আর থাকবেন না এই কিংবদন্তি। জিদানের এই হঠাৎ পদত্যাগের ঘোষণায় রিয়াল মাদ্রিদের সমর্থকেরাই শুধু নয়, চমকিত-বিস্মিত পুরো ফুটবল দুনিয়াই।
মাত্র আড়াই বছর দায়িত্বে থাকার পর রিয়ালের দায়িত্ব ছাড়লেন জিদান। এই সময়ে ক্লাবকে ৯টি শিরোপা জিতিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে টানা তিনটি ইউরোপিয়ান শিরোপা তো আছেই। এমন সাফল্যও তাকে সিদ্ধান্ত থেকে সরানো যায়নি। বিস্মিত ক্লাব সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে পাশে নিয়ে ক্লাবের দায়িত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন জিদান। তবে জিদানকে যারা চিনেন, জানেন, তাদের কাছে স্বাভাবিক ব্যাপারই মনে হওয়ার কথা। জিদান তো আসলে এমনই!
নিজের ভাষায় ব্যাখ্যা করেছেন কেন প্রিয় ক্লাবের দায়িত্বে আর থাকবেন না জিদান
‘আগামী মৌসুমে আমি আর রিয়াল মাদ্রিদের কোচ থাকব না। এ দলের জয় অব্যাহত থাকা উচিত। তবে তিন বছর কাটানোর পর এখানে একটা পরিবর্তন হওয়া দরকার। একটু ভিন্ন কিছু, ভিন্ন এক বার্তা। সব ব্যাপারে ভিন্নভাবে এগোনোর চিন্তা। আমি জানি, এটার সঙ্গে জড়িত সবার জন্য খুব অদ্ভুত এক সময় এটি। কিন্তু আমার মনে হয়, এটাই সঠিক সময়।’
‘আমি এই ক্লাবকে ভালোবাসি। আমি মনে করি, এই ক্লাবের জয়যাত্রা অব্যাহত থাকা দরকার। আর এ জন্যই আমার মনে হয়েছে, ক্লাবের পরিবর্তন দরকার। এ কারণেই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
ভেবেছিলাম ক্লাবের সঙ্গে নিজের পদের মেয়াদ বাড়াবো। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, একটু নিজের জন্য সময় দরকার। তাই বলে আমি কোচিং করে ক্লান্ত না। আমি তিন বছর ধরে ম্যানেজারের দায়িত্বে আছি কিন্তু এ ক্লাব ছাড়ার এটাই সময়। আমি সব সময় বলেছি, এ ক্লাবে যেকোনো কিছু ঘটতে পারে এবং আমার সময় শেষ হয়েছে।’
‘অবশ্যই আমি ফিরতে পারি। আমি সব সময় এ ক্লাবের কাছেই থাকব, কারণ এটা আমার হৃদয়ের খুব কাছের ক্লাব। অনেকেই বুঝতে চাইবে না কিন্তু এটাই সঠিক সময়। খেলোয়াড়দের জন্যও। আমি কীভাবে খেলোয়াড়দের কাছ থেকে আরও বেশি চাই? বড় খেলোয়াড়দেরও পরিবর্তন দরকার।’
‘আমরা স্কোয়াডের শক্তি বাড়ানো নিয়ে কথা বলেছি। নতুন খেলোয়াড় আনা নিয়ে কথা বলেছি। কিন্তু এসব কারণে আমি যাচ্ছি না। কিন্তু কোচিং করতে চাইলে, এটাও তো কাজের অংশ। পরিবর্তন দরকার। কিন্তু আমি এর মধ্যে জড়াব না। আমি এ দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে আসিনি।’
‘আমি কঠোর পরিশ্রম করার চেষ্টা করেছি। সৎ থাকার চেষ্টা করেছি, ক্লাবকে গর্বিত করার চেষ্টা করেছি। আমি সব সময় আমার খেলোয়াড়ের সম্মান পেয়েছি এবং এটা ছাড়া কিছু অর্জন করা কঠিন। এটা একান্তই আমার সিদ্ধান্ত। খেলোয়াড়দের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু তিন বছর ধরে এত উচ্চমান ধরে রাখা কঠিন। আমি জন্মগতভাবে বিজয়ী এবং আমি জিততে ভালোবাসি। আমি হারতে অপছন্দ করি। যখনই মনে হয়েছে আমি জিতব না, তখনই মনে হয়েছে পরিবর্তন দরকার। এই খেলোয়াড় কিংবা ওই খেলোয়াড়কে বদলানোর সিদ্ধান্ত নিইনি। আমি নিজেই চলে যাব বলেছি।’
‘আমার সবচেয়ে প্রিয় মুহূর্ত হলো যখন আমি খেলোয়াড় হিসেবে রিয়ালে যোগ দিলাম। খেলোয়াড় হিসেবে এখানে আমার শেষটা ভালো হয়েছে এবং কোচ হিসেবেও সেটাই হয়েছে।’
রিয়ালের হয়ে কোচ জিদানের সাফল্য
রিয়ালের হয়ে ম্যাচ খেলেছেন ১৪৯টি। যার মধ্যে জয় পেয়েছেন ১০৪টি। ড্র হয়েছে ২৯ বার। পরাজয় ১৬ বার। গোল করেছেন ৩৯৩টি। শিরোপা মোট নয়টি।
Leave a Reply