(আক্কাস আল মাহমুদ হৃদয়, বুড়িচং )
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার দক্ষিণগ্রামের বিলে ফুটতে শুরু করেছে হলুদ পদ্ম।এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে এ বিলে দর্শনার্থীরা ভীড় জমায়।স্থানীয়রা জানায় শুক্রবার ও শনিবার পদ্মবিলে ৮ থেকে ১০হাজার লোকের সমাগম হয়ে থাকে।এতো লোকসমাগম দেখে এখানে নৌকার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে এবং গড়ে উঠেছে বিনোদন কেন্দ্র। কিন্তু কয়েকদিন টানা বৃষ্টি হওয়ার কারণে দর্শনার্থীরা নৌকা দিয়ে ঘুরতে পারে কিন্তু পদ্মফুলের দেখা মিলে না। একজন দর্শনার্থী ও বুড়িচং উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রোকসানা খানম মু্ন্নি তার পরিবারকে নিয়ে দক্ষিণগগ্রাম পদ্মবিলে ঘুরতে যায় তিনি সেখানে নৌকা দিয়ে ঘুরেছে কোথাও পদ্মফুলের দেখা মিলে নাই। কারণ বৃষ্টির কারণে জলাশয়ে অতিরিক্ত পানির জমার কারণে পদ্মফুল পানিতে ডুবে যায়।সে তার ফেইসবুক আইডিতে কয়েকটি ছবি আপলোড দিয়ে ক্যাপশনে লিখেন পদ্মবিলে পদ্ম না দেখে মনটা বেশী খারাপ হলো! এছাড়া কুমিল্লা থেকে কিছু দর্শনার্থীরা এসে পদ্মবিলে পদ্ম না দেখে দু:খ প্রকাশ করতে করতে বাড়িতে চলে যেতে দেখা গেছে।তবে স্থানীয়রা জানান বৃষ্টি না হলে কয়েকদিনের মধ্যে পানি কমে যাবে এবং পদ্মগুলো ভেসে উঠবে দর্শনার্থীরা হতাশ হবার কারণ নাই।আগের মতো আবার পদ্মফুল দেখতে পারিবে।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়,চলতি মাসের প্রথম দিকে ঢাকা থেকে আসা গবেষকরা বিরল প্রজাতির এই হলুদ পদ্ম সংরক্ষণের জন্য লাল পতাকা টানিয়ে দেন। বিলটি সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করার পরও মাঝিদের বেপরোয়া নৌকা চালানো আর দর্শনার্থীদের ফুল ছেঁড়ায় হলুদ পদ্মের অস্তিত্ব সংকট দেখা দেয়। গত ১৩ সেপ্টেম্বর আবারও গবেষকরা এসে স্থানীয় বিল সংরক্ষণ কমিটির সহযোগিতায় নতুন করে উদ্যোগ নেওয়ায় বাড়ছে ফুল ফোটা। ফুল ছিঁড়লে মাঝিদের আর্থিক জরিমানা বা পাঁচ দিন নৌকা চালানো বন্ধের ঘোষণাও রয়েছে।জেলার সীমান্তবর্তী বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণগ্রামে শতাব্দীপ্রাচীন জলাশয়টিতে প্রাকৃতিকভাবেই যুগ যুগ ধরে পদ্ম ফুল ফুটে আসছিল। তিন বছর ধরে ব্যাপক আকারে ফুল ফোটা শুরু হলে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এ খবর। গত বছর খবর পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের কয়েকজন গবেষক ছুটে আসেন এই গ্রামে। শুরু হয় গবেষণা। চলতি বছরের আগস্টের প্রথম দিকে বিলজুড়ে পদ্ম ফুল ব্যাপক আকারে ফুটতে শুরু করে। করোনার কারণে তখন খুব একটা দর্শনার্থীর দেখা মেলেনি। ঈদুল আজহার সময় থেকে বিলে দলে দলে দর্শনার্থী আসতে শুরু করে। অবাধে নৌকা চলাচল ও ফুল ছেঁড়ার কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে বিরল প্রজাতির এই হলুদ পদ্ম। দক্ষিণগ্রামের নাসির উদ্দিন মোবাইল ফোনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের বিষয়টি অবহিত করেন। পরে তিন সদস্যের একটি গবেষক দল দক্ষিণগ্রামে আসে। নাসিরের বাড়িতে প্রায় এক সপ্তাহ অবস্থান করে তারা গবেষণার কাজ করেন। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আসা গবেষকরা হলুদ পদ্ম সংরক্ষণের জন্য লাল পতাকা টানিয়ে কিছু এলাকা সংরক্ষণের জন্য নির্ধারণ করেন।
দক্ষিণগ্রামের ইব্রাহিম জানান, এখানকার মাঝিরা বিলের যত্রতত্র নৌকা চালানোসহ দর্শনার্থীদের ফুল ছেঁড়ার কারণে হঠাৎ পদ্ম ফুলের অস্তিত্ব সংকট দেখা দেয়। অভিযোগ ওঠে, মাঝিরা নৌকা নিয়ে দর্শনার্থীদের খুশি করতে লাল পতাকার খুঁটিগুলোর কিছু তুলে ফেলে এবং কিছু খুঁটি পূর্ব-দক্ষিণ পাশে সরিয়ে ফেলে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর আবারও গবেষকরা এসে হলুদ পদ্ম অধ্যুষিত স্থানগুলো চিহ্নিত করে নতুন করে লাল পতাকা টানিয়ে দেন।
বুড়িচং দক্ষিণগ্রাম সামাজিক উন্নয়ন কমিটি, পদ্মবিল সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি ও ঢাকায় গবেষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী নাসির জানান, বিলে ফুল ফোটা শুরু হলে আমি ঢাকায় খবর দিই এবং ঈদের পাঁচ দিন পর বিলে নৌকা চালানো বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাঁশ পুঁতে রশি দিয়ে নৌকা চলাচলের জন্য স্থান নির্ধারণ করি। এতে বিলের দক্ষিণ অংশের লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং পশ্চিমপাড়ার প্রবেশমুখে বিলের অধিকাংশ জমির মালিকপক্ষের লোকজনের ওপর তিন দফা হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে আহত করে। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে জানালে তিনি ইউপি সদস্যকে সমাধানের নির্দেশ দিলেও অজ্ঞাত কারণে তা করা হয়নি। এরপর গ্রামবাসী সমঝোতা বৈঠক করে এটা দেখভালোর জন্য পশ্চিমপাড়ার সোহাগ ও দক্ষিণপাড়ার দিদারুলকে দায়িত্ব দেয়।
নাসির বলেন, বর্তমানে গবেষকরা হলুদ ফুলটির সংরক্ষণ, গবেষণা ও বীজ সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। অথচ বিলটি সংরক্ষণে স্থানীয় প্রশাসন কোনো সহযোগিতার হাত বাড়াচ্ছে না। তিনি বলেন, আমরা এই বিলের জমিতে চাষাবাদ করেই জীবিকা নির্বাহ করি। বিলের বিরল প্রজাতির ফুল সংরক্ষণের জন্য আমাদের চাষাবাদ ও জমির ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। গতবারের মতো এবারও আমরা কাঙ্ক্ষিত চাষাবাদ করতে পারব না। এ অবস্থায় সরকারের কাছে জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণসহ বিলটি সংরক্ষণের জন্য অর্থ বরাদ্দের দাবি জানাই। এছাড়া দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য আশ্রয়কেন্দ্র ও টয়লেট নির্মাণেরও দাবি জানান তিনি।
বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরুল হাসান বলেন, সেখানকার ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ স্থানীয় বিল সংরক্ষণ কমিটির লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে বিলটি সংরক্ষণের জন্য নির্দেশ দিয়েছি।
Leave a Reply