1. jagocomilla24@gmail.com : jago comilla :
  2. weekybibarton@gmail.com : Amit Mazumder : Amit Mazumder
  3. sufian3500@gmaill.com : sufian Rasel : sufian Rasel
  4. sujhon2011@gmail.com : sujhon :
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৩ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজঃ
জাকের আলির দুর্দান্ত ব্যাটিং ; ১৯০ রানে টার্গেট! ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া যশোরের ভিডিওটি  অভিনয়! তব ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া যশোরের ভিডিওটি  অভিনয়! তবুও ক্ষুব্ধ দেশবাসী!ও ক্ষুব্ধ দেশবাসী! ভারতকে উড়িয়ে এশিয়া কাপের চ্যম্পিয়ন বাংলাদেশ এবার স্ত্রীর ভারতীয় শাড়িতে আগুন দিলেন রিজভী শেখ হাসিনার ‘বিদ্বেষমূলক বক্তব্য’ প্রচারে ট্রাইব্যুনালের নিষেধাজ্ঞা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ শিক্ষক পরিষদের অভিষেক আন্তর্জাতিক মানের ইনডোর প্লে-গ্রাউন্ড “বাবুল্যান্ড” এখন কুমিল্লায় বিভাগ হলে কুমিল্লা নামেই হবে : উপদেষ্টা আসিফ আজ সাংবাদিক নেকবর হোসেন এর পিতার ১১ তম  মৃত্যুবার্ষিকী  কান্দিরপাড় রূপায়ন দেলোয়ার টাওয়ারের লোটোর ৫ম আউটলেট উদ্বোধন; ৩ দিন চলবে ২০%  ডিসকাউন্ট 

১৫ আগস্ট ও বিএনপির রাজনীতি

  • প্রকাশ কালঃ শনিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২০
  • ৪৫৩

বিভুরঞ্জন সরকার:

১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির জীবনে একটি কলঙ্কময় দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে কতিপয় উচ্চাভিলাষী বিশ্বাসঘাতক সেনা সদস্য স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সেদিন দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।

বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর নিহত হওয়ার দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। তবে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর গঠিত কিন্তু দেশের অন্যতম একটি বড় রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ১৫ আগস্ট শোক দিবস হিসেবে পালন করে না, এমনকি বিএনপি বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি বলেও স্বীকার করে না। অত্যন্ত

দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর ক্ষমতায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ১৫ আগস্টে কেক কেটে সাড়ম্বরে নিজের জন্মদিন পালন করা শুরু করেন। বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে কখনোই শোনা যায়নি যে, ১৫ আগস্ট তার জন্মদিন। কারও মৃত্যু দিনে কারও জন্মদিন হতে পারে না, তা অবশ্যই নয়। ১৫ আগস্ট যেমন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে, তেমনি পঁচাত্তরের আগে ও পরে ১৫ আগস্ট তারিখে অনেক মানুষেরই জন্ম হয়েছে। কাজেই বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুদিনে কেউ জন্মদিন পালন করতে পারবে না– এমন কোনো কথা নেই।

তবে বঙ্গবন্ধু কোনো সাধারণ মানুষ নন। তাঁর মৃত্যুর দিনটিকে দেশের একজন বড় রাজনৈতিক নেত্রী যিনি একাধিকবার দেশের প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেছেন, যখন ঘটা করে জন্মদিন হিসেবে পালন করেন তখন সেটাকে রাজনৈতিক শিষ্টাচার-বিবর্জিত না বলে পারা যায় না। তাছাড়া সত্যি সত্যি যদি বেগম জিয়ার জন্মদিন ১৫ আগস্ট হত, তাহলেও না হয় বিষয়টি সহজভাবে নেওয়া যেত।

বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর দিনটিকে দেশের একজন বড় রাজনৈতিক নেত্রী যখন ঘটা করে জন্মদিন হিসেবে পালন করেন তখন সেটাকে রাজনৈতিক শিষ্টাচার-বিবর্জিত না বলে পারা যায় না
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর দিনটিকে দেশের একজন বড় রাজনৈতিক নেত্রী যখন ঘটা করে জন্মদিন হিসেবে পালন করেন তখন সেটাকে রাজনৈতিক শিষ্টাচার-বিবর্জিত না বলে পারা যায় না
বেগম জিয়ার পিতা মোহাম্মদ ইস্কান্দার মজুমদার নিজেই ১৯৮০ সালের গোড়ার দিকে সাপ্তাহিক ‘নিপুণ’ পত্রিকার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘আমার তৃতীয় মেয়ে হচ্ছে খালেদা। খালেদার জন্ম ১৯৪৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর, যেদিন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হল।’’

এছাড়াও বিয়ের কাবিননামা, স্কুলের সার্টিফিকেট কোথাও ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিন হিসেবে উল্লেখ নেই। অথচ প্রধানমন্ত্রী হয়ে খালেদা জিয়া ১৫ আগস্টকে তার জন্মদিন বানিয়ে ফেললেন! একে চরম বিকৃত মানসিকতা ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না।

আমাদের দেশে অনেকেই আছেন, যাদের মধ্যে জ্ঞানী-গুণী মানুষের সংখ্যাও কম নয়, যারা বেগম জিয়াকে রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে শ্রদ্ধার আসনে বসিয়ে তার রুচি, তার সৌজন্য, কথাবার্তায় তার পরিমিতিবোধ নিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন– তারা কি এটা অস্বীকার করতে পারবেন যে, জন্মদিন নিয়ে তিনি যে শঠতার আশ্রয় নিয়েছেন সেজন্য অন্য যে কোনো সভ্য দেশে তার রাজনৈতিক অপমৃত্যু ঘটত, তাকে চরমভাবে ঘৃণা করা হত!

পরম শত্রুর মৃত্যুদিনেও কোনো বিবেকসম্পন্ন মানুষ জেনেশুনে উৎসব আয়োজন করে না। অথচ বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য যাঁর অবদান সবচেয়ে বেশি, তাঁর করুণ মৃত্যুর দিনটিতেই একটি ভুয়া জন্মদিন পালন করেন এই দেশেরই একজন অন্যতম রাজনৈতিক নেত্রী। এর চেয়ে বড় লজ্জার বিষয় আর কী হতে পারে! বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির রাজনৈতিক সমঝোতা বা ঐকমত্যের কথা যারা বলেন, তারা ১৫ আগস্ট সম্পর্কে বিএনপির অবস্থান নিয়ে কোনো কথা বলেন না। এ ধরনের গর্হিত কাজের জন্য বেগম জিয়া ও বিএনপির নিন্দা-সমালোচনা করেন না।

বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যা করার সঙ্গে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ না থাকলেও তিনি যে বিষয়টি জানতেন এবং নিজের প্রতি তাঁর প্রচ্ছন্ন সহানুভূতি ছিল সে ব্যাপারেও সন্দেহে প্রকাশের সুযোগ নেই। তাছাড়া এটাও ঠিক যে, বঙ্গবন্ধু নিহত না হলে জিয়াউর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার সামান্যতম সুযোগ-সম্ভাবনাও ঘটত না। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রধান বেনিফিশিয়ারি।

সম্ভবত চক্ষুলজ্জার কারণেই জিয়াউর রহমান নিজে কখনও ব্যক্তিগতভাবে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোনো কটূক্তি বা অশ্রদ্ধা প্রকাশ করেননি। আবার তাঁর মৃত্যু দিনটিকে জাতীয়ভাবে পালন তো করেনইনি বরং তাঁর অত্মস্বীকৃত ঘাতকদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় না করিয়ে বিদেশে দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন।

এগুলো সব পুরনো কথা। অনেকেরই জানা। যাদের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য বিএনপির জন্ম দেওয়া হয়েছিল জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর, তারা ভেবেছিলেন জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধুর চেয়ে বড় করা সম্ভব না হলেও অন্তত তার সমমাপের একজন নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, না হলে বিএনপির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা যেমন অসম্ভব হবে, তেমনি রাজনীতির আসরে জাঁকিয়ে বসাও সহজ হবে না।

এটাও ঠিক যে, বঙ্গবন্ধু নিহত না হলে জিয়াউর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার সামান্যতম সুযোগ-সম্ভাবনাও ঘটত না
এটাও ঠিক যে, বঙ্গবন্ধু নিহত না হলে জিয়াউর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার সামান্যতম সুযোগ-সম্ভাবনাও ঘটত না
সুতরাং পরিকল্পিতভাবেই শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর চরিত্র হননের কাজ। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে এমন সব প্রচারণা চালানো হয় যাতে মানুষের মনে তাঁর সম্পর্কে তিক্ততা ও বিরূপতার সৃষ্টি হয়। আবার জিয়াউর রহমান সম্পর্কে এমন সব প্রচারণা চালানো হয় যাতে মানুষ তাকে জাতির ‘ত্রাণকর্তা’ হিসেবে মনে করে। বিএনপি তাদের লক্ষ্য অনেকটাই পূরণ করতে পেরেছে, এটা তাদের সাফল্য। আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সময় বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে সত্য তথ্যও মানুষের মধ্যে সঠিকভাবে প্রচার করতে পারেনি, এটা তাদের ব্যর্থতা। বিএনপি তার সাফল্যের সুফল ভোগ করছে।

বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসে অন্য যার নামই আসুক না কেন, জিয়াউর রহমানের নাম প্রথম কাতারে কোনোভাবেই আসতে পারে না। বাংলাদেশের মানুষকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রকাঠামো ভেঙে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার যে দীর্ঘ ধারাবাহিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া তার মধ্যে জিয়াউর রহমানের ছিঁটেফোটা অবদানও নেই; বঙ্গবন্ধু ছাড়াও আরও অনেক রাজনৈতিক নেতার যা আছে।

একাত্তরে আরও অসংখ্য বাঙালি যোদ্ধার মতো জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন সত্যি, তাই বলে তিনি কোনোভাবেই এই যুদ্ধের বা যুদ্ধপ্রস্তুতির ইতিহাসে শেখ মুজিবুর রহমানের নামের সঙ্গে উচ্চারিত হওয়ার মতো নয়। জিয়াউর রহমানের এক বেতার ঘোষণা পুঁজি করে যারা শেখ মুজিবের রাজনৈতিক জীবন, অত্যাচার-নির্যাতন, জেল-জুলুম সহ্য করার বিরাট অধ্যায়কে ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে ফেলতে চান, তাদের মূঢ়তাকে ধিক্কার দেওয়া ছাড়া আর কী করার আছে?

জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার পর এক বেতার ঘোষণা দিয়ে দেশের মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করেছেন। আর শেখ মুজিব? সেই কৈশোর থেকে শুরু করে আমৃত্যু মানুষের পাশে থেকেছেন, তাদের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। ব্যক্তিগত-পারিবারিক সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতি ভ্রূক্ষেপ না করে মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। অন্য কেউ নয়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তার ‘বাংলাদেশ : শেখ মুজিবের শাসনকাল’ গ্রন্থে পাকিস্তানি কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রসঙ্গে লিখেছেন–

‘‘একজন মডারেট পলিটিশিয়ান এবং লিবারেল ডেমোক্রেট হিসেবে পরিচিত শেখ মুজিব মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের লক্ষ্যে সংগ্রাম করেছেন বছরের পর বছর, সহ্য করেছেন অবর্ণনীয় নির্যাতন। অসংখ্যবার এবং সংখ্যাতীত কারণে শেখ মুজিবকে কারাবরণ করতে হয়েছে এবং জীবনের সৃষ্টিশীল সময়গুলোর বিশালতম অংশ কাটিয়েছেন কারাভ্যস্তরে। জনগণের একজন নন্দিত নেতা হিসেবে তিনি চষে বেড়িয়েছেন গ্রাম থেকে গ্রামান্তর। যে চেহারা একবার দেখেছেন, সে চেহারা সারাজীবন তিনি ভোলেননি এবং তীক্ষ্ণ ধী স্মৃতিশক্তি বলে শেখ মুজিব তার শত সহস্র কর্মীর নাম মনে রাখতে পারতেন।’’

বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে শেখ মুজিব উড়ে এসে জুড়ে বসেননি। শেখ মুজিব সম্পর্কে ১৯৫৪ সালের ২৬ জুলাই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ইস্কান্দার মির্জা পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদের কাছে একান্ত গোপন যে নোট পাঠিয়েছিলেন, সেখানে লিখেছেন–

‘‘শেখ মুজিবুর রহমান বহুবার জেলে গেছেন। উল্লেখযোগ্যভাবে একজন ভালো সংগঠক। অত্যন্ত সাহসী। রাজনীতির ব্যাপারে আপসহীন মনোভাবের মানুষ। একজন অত্যন্ত অভিজ্ঞ এজিটেটর। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ঝড় তোলার মতো মানুষ। জেলখানাতেই এই ভদ্রলোককে অধিক মানায়।’’

যারা জিয়াউর রহমানকে শেখ মুজিবের প্যারালাল নেতা হিসেবে দাঁড় করাতে চান তারা ইস্কান্দার মির্জার এই বক্তব্য তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে হয়তো বলবেন, আমাদের নেতা জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতার শীর্ষে আরোহণ করেছেন, সেজন্য তাকে একবারও জেল খাটতে হয়নি, বরং অসংখ্য রাজনৈতিক নেতাকে তিনি জেল খাটিয়েছেন। প্রিয় সহযোদ্ধা কর্নেল তাহেরকে ফাঁসিকাঠে ঝুলিয়ে হত্যা করেছেন। তাহলে শেখ মুজিবের চেয়ে তিনি বড় মাপের নেতা হলেন না!

আজকাল একশ্রেণির পণ্ডিত-গবেষকও এ কথা বলে থাকেন যে, শেখ মুজিব নাকি বাঙালি জাতিকে অসহায় অবস্থায় ফেলে দিয়ে পাকিস্তানিদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন আর জিয়াউর রহমান জাতির সামনে মুক্তিদূত হিসেবে হাজির হন এবং জাতিকে নেতৃত্ব দেন। অর্থাৎ এমনভাবে বলা হয় যেন, জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল। কিন্তু প্রকৃত ইতিহাস কী বলে?

একাত্তর সালের ২৬ মার্চ পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান (পটুয়া কামরুল হাসানের আঁকা ঐতিহাসিক ব্যঙ্গচিত্রের জন্য বাঙালি জাতির কাছে জানোয়ার হিসেবেই পরিচিত) বেতার ভাষণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য জিয়াউর রহমানকে অভিযুক্ত করেননি। ইয়াহিয়া খান স্পষ্ট করেই বলেছিলেন–

‘‘শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক শুরু করা অসহযোগ আন্দোলন (মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকেই শেখ মুজিবের ডাকে শুরু হয়েছিল অসহযোগ আন্দোলন) রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল। তিনি এবং তার দল গত তিন সপ্তাহ ধরে আইনসিদ্ধ কর্তৃপক্ষকে অস্বীকার করে চলেছে। তারা পাকিস্তানের পতাকা এবং জাতির পিতার (জিন্নাহ) ছবিকে অসম্মান করেছে। তারা একটি সমান্তরাল সরকার চালানোর চেষ্টা করেছে। … এই লোকটি (শেখ মুজিব) এবং তার দল (আওয়ামী লীগ) পাকিস্তানের শত্রু এবং তারা দেশ থেকে পূর্ব পাকিস্তান অংশটুকু ভেঙে সম্পূর্ণ আলাদা করতে চায়। তারা দেশের ঐক্য ও সংহতির উপর আঘাত হেনেছে। এই অপরাধের শাস্তি পেতেই হবে।’’

জিয়াই যদি স্বাধীনতার প্রধান ব্যক্তি হবেন তাহলে তার বিরুদ্ধেই তো ইয়াহিয়া খানের সব আক্রোশ প্রকাশ করা হত ন্যায়সঙ্গত
জিয়াই যদি স্বাধীনতার প্রধান ব্যক্তি হবেন তাহলে তার বিরুদ্ধেই তো ইয়াহিয়া খানের সব আক্রোশ প্রকাশ করা হত ন্যায়সঙ্গত
ইয়াহিয়া তো জিয়ার নাম উচ্চারণ করেননি! জিয়াই যদি স্বাধীনতার প্রধান ব্যক্তি হবেন তাহলে তার বিরুদ্ধেই তো ইয়াহিয়া খানের সব আক্রোশ প্রকাশ করা হত ন্যায়সঙ্গত। তাছাড়া যদি এটা দেশবাসীকে বিশ্বাস করতে বলা হয় যে, জিয়ার নেতৃত্বেই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে, তাহলেও প্রশ্ন আসে যে, যুদ্ধের পুরো সময় জুড়ে তিনি একজন সেক্টর কমান্ডার কিংবা জেড ফোর্সের অধিনায়ক থাকলেন কেন? প্রবাসী সরকারের প্রধান না হোক, মুক্তিবাহিনীর প্রধান তো তারই হওয়ার কথা। জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব আওয়ামী লীগ নেতাদের হাতে ছেড়ে দিয়েছিলেন কেন? মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার আইনগত ও বৈধ কর্তৃত্ব ছিল বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগেরই।

গোঁজামিল দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করা যায় না। ইতিহাসের নামে এভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করা যায় না– বিএনপি যেটা করে চলেছে। অসত্য কথা বলে বাংলাদেশের কিছু মানুষকে সাময়িকভাবে বোকা বানানো গেলেও বিশ্ববাসীকে কি ধোঁকা দেওয়া যাবে?

লেবানন থেকে বিশ্বের খ্যাতিমান ব্যক্তিদের নাম-পরিচিতি দিয়ে আল মারিদ নামে ১৩৩২ পৃষ্ঠার একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে (১৯৯৯), সেখানে মাত্র দুজন বাঙালির নাম ঠাঁই পেয়েছে। এঁদের একজন নোবেল বিজয়ী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। অন্যজন, অবশ্যই, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ মুজিব সম্পর্কে ওই বইয়ে লেখা হয়েছে–

‘‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা, যার নেতৃত্বে আন্দোলন ও সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।’’

হুকুম দিয়ে বাংলাদেশে ইতিহাস পাল্টানো যায়। কিন্তু অন্য দেশে? বিএনপি নেতারা শত চেষ্টা করেও ইতিহাস থেকে শেখ মুজিবের নাম ফ্লুইড দিয়ে মুছে দিতে পারবেন কি?

বাঙালির জাতিগত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনেক আগেই লিখে গেছেন–

‘‘আসলে আমরা (বাঙালিরা) অক্ষম, দুর্বল ও হীনের যা ধর্ম, তাই অবলম্বন করি। সব বড়কেই, সব মহানকেই টেনে ধুলোয় নামিয়ে ধূলিস্যাৎ করলেই আমাদের আনন্দ। সবাইকে অবিশ্বাস ও হেয় প্রমাণ করতে পারলেই আমাদের উল্লাস। এ দুর্ভাগা দেশে কোনো দিক দিয়ে যারা বড় হয়েছেন, যেমন করেই হোক, তাদের ছোট প্রমাণ করতে না পারলে আমাদের স্বস্তি নেই।’’

অক্ষম-দুর্বল ও হীনের ধর্ম অনুসরণ করে যারা ক্রমাগত শেখ মুজিবকে ছোট করার চেষ্টা করে চলেছেন বা ভবিষ্যতেও করবেন, তারা কেউ তার চেয়ে বড় হতে পারবেন না। কাজেই এই অপচেষ্টায় সময় নষ্ট না করে বরং এখন উচিত শেখ মুজিবের অবদান স্বীকার করে নিয়ে দেশের রাজনীতিতে সমঝোতার পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করা।

দেশের রাজনীতিতে সাংঘর্ষিক পরিবেশ দেখে যারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং দেশের প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংলাপের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন, তাদের উচিত বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এটা বুঝানো যে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে বিএনপি যত দিন ইতিবাচক মনোভাব গ্রহণ না করবে তত দিন দেশের রাজনীতিতে সমঝোতার পরিবেশ তৈরি হওয়া সম্ভবনা একেবারেই ক্ষীণ।

বিএনপি চেয়ারপারসন মাঝে মধ্যে নতুন ধারার রাজনীতির কথা বলেন। আর নিজে ১৫ আগস্ট ঘটা করে কেক কেটে জন্মদিন পালন করেন এবং তার পুত্র ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। এগুলো কোনোভাবেই নতুন ধারা কিংবা সুস্থধারার রাজনীতির পরিচয় বহন করে না। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সম্পর্কে কোনো নতুন ভাবনার প্রকাশ দেখা না গেলে বেগম জিয়ার নতুন ধারার রাজনীতি দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কি?

১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে নিন্দা না করে এবং বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বিতর্ক অব্যাহত রেখে আর যাই হোক, বাংলাদেশের রাজনীতিতে সুস্থ ধারা ফিরিয়ে আনা যাবে বলে মনে হয় না।

বিভুরঞ্জন সরকার: সাংবাদিক, কলাম লেখক।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুনঃ

© All rights reserved © 2024 Jago Comilla
Theme Customized By BreakingNews