অনলাইন ডেস্ক:
রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চ ডুবে যাওয়ার ১২ ঘণ্টা পর পানির তলদেশ থেকে উদ্ধার হওয়া সেই সুমন বেপারি এবার গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন। আজ মঙ্গলবার (৩০ জুন) সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেসরকারি কয়েকটি টেলিভিশনের সাথে কথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি পানির নিচে বেঁচে থাকার বিষয়ে নানান কথা বলেছেন। বিডি২৪লাইভের পাঠকদের জন্য সুমনের সেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হল-
সেখানে উপস্থিত একজন গণমাধ্যমকর্মী সুমনের কাজে জানতে চান? মানুষজন বলতেছে, ১২ ঘন্টা পানির নিচে থাকা অনেক কষ্টকর এবং ১২ ঘণ্টা পানির নিচে থাকলে শরীরে অনেক সমস্যা হয়। আপনার তো এ ধরণের কোন সমস্যা হয়নি এ বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন চলছে। এ নিয়ে আপনার বক্তব্য কি? জবাবে সুমন বেপারি বলেন, ‘আল্লাহ পাকের ইচ্ছে আল্লাহ পাকের ইচ্ছে ছাড়া কোন উপায় হয় না। আমি তো মনে করছি ওখানে ১০ মিনিট হইছে কিন্তু ১৩ ঘণ্টা হইয়া গেছে। কিন্তু আল্লাহ পাক যা চায় তাই হয়। আমার কিছু করার নাই। আমি তো ওখানেই মৃত্যুবরণ করতে পারতাম। আল্লাহ তায়ালা আমাকে জাগাইয়া রাখছে।’
আপনি ওখান থেকে ওঠার চেষ্টা করেছেন কতবার সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি উঠার চেষ্টা কারি নাই। কিন্তু আমি জায়গা দেখতেছি বাইর হওয়ার কোন জায়গা আছে কিনা? কিন্তু…পাই নাই। আরেকটা লাশ ছিল। সেটা কষ্ট করবে তাই আমি সেটাকে হাত দিয়ে ঠেলে বাইর কইরা দিছি।’
সেই সময়ে আপনার জ্ঞান ছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সুমন বেপারি বলেন, ‘আমার জ্ঞান ছিল, মোটামুটি জ্ঞান ছিল। আল্লাহ জ্ঞান রাখছে। সেই সময়ে আল্লাহকে ডাকছি। সূরাহ হাশর, সূরাহ ফালাক তিনবার পড়ছি। এরপরে সূরা ইয়াসিন পড়ছি।’
আপনার পেটের ভিতরে তখন কোন পানি ডুকেছে কিনা? জাবাবে তিনি বলেন, ‘পানি সম্ভব হয়তো বা প্রথম অবস্থায় খাইছি। কিন্তু প্রেসাব করার পর আমার পেট ক্লিয়ার হাইয়া গেছে।’
লঞ্চের কোন স্থানটাতে আপনি ছিলেন? জাবাবে সুমন বলেন, ‘আমি ছিলাম ডাইনে (ডানপাশে)। মেশিনের পাশেই ডাইনে (ডানপাশে)। আমি ছিলাম নিচ তলায়।’
কয়টায় লঞ্চে উঠছিলেন আর আপনি মূলত কি করেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘৭টা ৫০ শে লঞ্চে উঠছি সদরঘাট আসব। লঞ্চ ছাড়ছে… এর আগেও একবার ওয়াল গেটের সাথে লাগার চেষ্টা করছিল…। এরপর ফতুল্লা আসার পর ওখানে একটু চোখটা লাগছে (ঘুম ঘুম পাচ্ছে)। ওই অবস্থায় মনে করেন ধাপ করে বাড়ি খাইলো (আঘাত লাগল)। বাড়ি খাওনের সাথে সাথেই লঞ্চ তলাইতাছে (ডুবতেছে)। আর অনেক মানুষ ছিটকা (লাফিয়ে) নামার চেষ্টা করতেছিল। তখন আমি বিচরাইছি (খুঁজছি) বাইরাতে (বের হতে) পারি নি।’
তখন কি হয়েছিল আপনি একটু পুরো ঘটনাটা বলেন? এসময় তিনি বলেন, ‘পুরা কিছুই বলতে পারবো না। মনে করেন সাঁতার কাটার জন্য ফম গুলা দেয় না। ও আমার খেয়াল আছে একটা আমার হাতের সাথে লাগতেছে। তো আমার টার্গেট আমি যদি ফম টা ধরে রাখি। যদি কখনও লঞ্চ উপরে উঠে আল্লাহ যদি বাঁচিয়ে রাখে আর না রাখলে তো করার কিছু নাই। ওই টার্গেট থেকেই ওখানে ছিলাম লড়ি (নড়াচড়া) নাই প্রথম। ওই জায়গায়ই ছিলাম। দোয়া-দুরুদ পড়ছি। দোয়া-দুরুদ পড়ার পর শরীরে ফুঁ দিয়া এরপরে আল্লাহর নাম নিয়া ওখানে দাঁড়াইয়া রইছি। ওদিকে আস্তে আস্তে তলাইতেছে। ওই ওইখানেই ডুব দিছি…। এরপর হয়তো বা ডুবরিরা পাইছে এই…এরপর হয়তো বা খেয়াল নাই।’
ওখানে কি ফাঁকা ছিল? এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ’মাথা, চোখ, কান এগুলা হাত আমি অজু করছি। ওখানে আমি অজু করছি।’ তিনি কোমর পর্যন্ত দেখিয়ে বলেন, ‘এই পর্যন্ত পানি ছিল ওখানে আমি অজু করছি। দু’বার প্রেসাব করার পর ওইখানে অজু করার পর দোয়া-দূরুদ পড়ছি। আমার শরীরে যেই পোশাক ছিল ওইটা আমার গেঞ্জি ছিল। আমি গেঞ্জি খুলে আমার হাঁটু পর্যন্ত ডেকে রাখছি। এটা ডাইকা (ঢেকে) আমি অজু-টজু করছি এই…।’
যেখানে আটকে ছিলেন সেখান থেকে বের হওয়ার কোন উপায় ছিল না? জাবাবে তিনি বলেন, না এমন কোন উপায় ছিল না। হয়তো বা আমি আগে চেষ্টা করতাম আল্লাহ তায়ালা মৃত্যু রাখতে পারতো। কিন্তু আমি ওখানে চেষ্টা করি নাই। কিন্তু দেখছি যে…আমার কোন করার কিছু নাই।’
লঞ্চে কতজন ছিল ধারণা দিতে পারবেন? জাবাবে তিনি বলেন, ৮০ থেকে ৯০ জনের বেশি হবে না।
Leave a Reply