আমার কাছে তিনি এখন “তিতাস ভাই” তিনি একজন নেতা। অনেক দিন হলো নিজ এলাকায় অনুপস্থিত। জনগণের মাঝে কানাঘুষা আছে, তবে কোনো প্রকার অভিযোগ নেই। অনেকের সাথে কথা বলে বুঝাগেলো, তার প্রতি জনগণের ভালবাসারও কমতি নেই। এই নেতাকে দেখার কখনো সুযোগ হয়নি আমার। সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচন কে সামনে রেখে তিনি এলাকায় ফিরেছেন। সাথে সিকিউরিটি,গানম্যান। কৌতূহল বেড়ে গেল। কোনো নেতা এভাবে নিজের এলাকায় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে? তাহলে তার দ্বারা জনগণের কী উপকার হবে? কীভাবে সে কাজ করবে সে ?
এ কেমন নেতা! নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে অবলোকন করলাম বেশিরভাগ জনগণ তাকেই ভোট দিচ্ছে। কেনো দিচ্ছে? তাও বুঝলাম না। এক সময় সব কিছু পরিস্কার হলো। উক্ত নির্বাচনটি ভোট গণনার পূর্বেই স্থগিত করা হলো। জাতীয় দৈনিক এবং ইলেকট্রিক মিডিয়ায়গুলোতে ফলোআপ করে এই নির্বাচন বাতিলের খবর প্রচার হলো। ব্যাখ্যা করা হলো নির্বাচন স্থগিতের কারন। যা সমগ্র জাতি দেখেছে, আমিও দেখেছি। ঠিক এই সময় বুঝাগেল তিনি কেনো এলাকায় সিকিউরিটি নিয়ে চলাফেরা করতেন। তিতাসের জনগণের কাছে বিষয়টি আগে থেকে ক্লিয়ার বিধায় তারা উক্ত নেতাকে দূরে থাকা সত্বেও ভালোবাসে। তারপরও আমার কাছে বিষয়টিতে ধোঁয়াশা রয়েগেল! নেতা থাকবে জনতার কাছাকাছি। তাদের প্রয়োজনে, দুঃখ দুর্দশায় এগিয়ে যাবে এমনটাই হওয়া উচিত। এই নেতার ক্ষেত্রে তেমনটি দেখছিলাম না।
অবশেষে বাতিল হওয়া নির্বাচনের পুনরায় তফসিল ঘোষণা হল। আইনি জটিলতায় বিপক্ষের প্রধান প্রার্থী ভোটে অংশগ্রহণ করতে পারলেন না। অন্যান্য প্রার্থীরা তাকে সমর্থন করে বসে গেলেন। ফলে তিনি দ্বিতীয় বারের মতো উপজেলা চেয়ারম্যান হলেন। আমার কাছে বিষয়টি সাদামাটাই মনে হলো। আপন খালাতো বোন এমপি থাকলে এমনটি অনেকের বেলাই ঘটতে পারে। ঢাকার পাখি আবার ঢাকায় চলে যাবে! ওনার ব্যাপারে আমার আর তেমন কোন আগ্রহ নেই…….. কিন্তু করোনার সময়টিতে এসে তিনি রীতিমত অবাক করে দিলেন। মার্চ মাসের শুরুর দিকে, দেশে সবেমাত্র করোনার আবির্ভাব ঘটেছে।
এই নেতা তিতাসের জনগণ কে সচেতন করতে মাঠে-ঘাটে দৌড়ঝাপ শুরু করলেন । স্ত্রী সন্তান, অসুস্থ ভাই, সবাই কে ঢাকায় রেখে সোজা চলে এলেন জনতার কাছে। রাতদিন ব্যয় করলেন জনগণের কল্যাণে। প্রথমতঃ ব্যাপক সচেতনতামূলক পদক্ষেপ গ্রহন করলেন। তারপর শুরু করলেন লকডাউন কার্যক্রম। লকডাউনে আটকেপরা অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে খাদ্যসামগ্রী পৌছে দিয়ে স্থাপন করলেন অনন্য নজির। সরকারী সাহায্যের জন্য অপেক্ষা না করে এই নেতা নিজ উদ্যোগে এবং স্থানীয় বিত্তশালীদের সমন্বয়ে জনগণের মাঝে যে পরিমান ত্রাণ সরবরাহ করলেন,তা হিসেব করলে দেশের সমস্ত উপজেলাগুলোর মধ্যে জনগণের সাহায্য প্রাপ্তিতে তিতাস প্রথম হবে। অতঃপর সুষ্ঠভাবে সরকারী ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা। উপজেলা পরিষদ, প্রশাসন, পুলিশ এবং ইউপি চেয়ারম্যানদের সমন্বয়ে গড়ে তোলেন কোভিড-১৯ প্রতিরোধ টিম। সার্বোক্ষণিক এই টিম যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন করোনার বিরুদ্ধে।
এরি মাঝে তার বড় ভাই মৃত্য শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে। রাখতে হলো আইসিইউতে। পরিবারের সবাই ঢাকায়, কিন্তু তিনি জনগণের কথা ভেবে একদিনের জন্যও এলাকা ত্যাগ করলেন না। এমনকি ভাইয়ের মৃত্যু দিনও না! ভাইয়ের জানাযা শেষে আবার বেড়িয়ে পড়লেন তিতাসের অলিগলিতে। আমার ভুল ভাংতে শুরু করলো। এক সময় তিতাসে করোনা রোগী সনাক্ত হলো। একে একে বেশ কয়েক জন। তারা সবাই ঢাকা অথবা নারায়নগঞ্জ থেকে পালিয়ে আসা। এই নেতার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে তিতাসে এই ভাইরাস ব্যাপক বিস্তার লাভ করতে পারেনী। যারা আক্রান্ত হয়েছেন সবাই সুস্থ আছেন,ভালে আছেন। দেশে এখনো করোনার প্রদুর্ভাব কমেনী। তাই তিনিও থেমে যাননী।
অবিরত চলেছেন জনগণের সুরক্ষার দায়িত্ব নিয়ে। একজন নেতা এমনই হওয়ার কথা। সর্বশেষ ঈদ কে সামনে রেখে তিতাস উপজেলার সবগুলো ইউনিয়নে প্রায় নয় হাজার বয়স্ক,বিধবা এবং প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীদের জুন মাস পর্যন্ত অগ্রীম সরকারী ভাতা পেতে তিনি যেভাবে সাহায্য করলেন,এটা উদাহরণ হয়ে থাকবে। ভাতার টাকা বিতরণে কোনো উপজেলা চেয়ারম্যান এভাবে সংশ্লিষ্ট হয় কিনা আমার জানা নেই। আমি সত্যিই মূগ্ধ। গত দুই মাসে এই নেতাকে বেশ পর্যবেক্ষণ করে দেখলাম,তিনি আসলে সাধারণ মানুষের অতি ক্ষুদ্র সমস্যাটি নিয়েও অসাধারণ চিন্তা করেন। অসাধরণ তার বোধশক্তি। কোমল একটি হৃদয় নিয়ে রাজনীতি করেন এই নেতা। জনগণের দুর্দিনে,দুর্দশায় সত্যিকার অর্থেই পাশে থাকার চেষ্টা করেন। করোনার দিনগুলোতে তিতাসের প্রায় প্রতিটি পরিবারের পাশে দাড়িয়েছেন তিনি। নিজের ভাইকে হারিয়ে তিতাসবাসীকে আগলে রেখেছেন ভাইয়ের মতো করে। সৃষ্টি করেছেন ভালোবাসার নতুন এক বন্ধন। ফলে, তিনি নিজে হয়ে উঠেছেন তিতাসবাসীর ভাই।
Leave a Reply