(আক্কাস আল মাহমুদ হৃদয়, বুড়িচং)
সারা দেশে মহামারী করোনা ভাইরাসে আতঙ্কে রয়েছে এবং লকডাউন রয়েছে অনেক জেলা।ঘর থেকে বের না হওয়া এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা রয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে প্রশাসের। এই মহামারীতে যেন কোন অসহায় পরিবার ও ভাড়াটিয়া কষ্ট না পায় সে দিকেও সরকারের কড়া নির্দেশনা রয়েছে।
এর মধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থানে চলছে সমাজের প্রভাবশালীদের কর্তৃক অসহায়দের উপর বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন। এমন একটি ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলা ষোলনল ইউনিয়নে শিবরামপুর এলাকায় মৃত: রওশন আলীর ছেলে হারুনুর রশিদ(৫৫)নামের এক অসহায় পরিবারের উপর।
ঘটনাটি ঘটে (২২ এপ্রিল বুধবার থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত খোলা আকাশের নিচে রাত দিন যাপন করছে ।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, জেলার বুড়িচং উপজেলা ষোলনল ইউনিয়নের শিবরামপুর পশ্চিমপাড়া বাপ-দাদার বসত ভিটায় ৪০-৫০ বছর ধরে বসবাস করে আসছে হারুনুর রশিদ ও তার ভাই কুদ্দুস।
তাদের বাবা রওশন আলী মৃত্যুর পর বাড়ির জায়গা এবং সম্পত্তি নিয়ে ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব হয় মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে মো: মফিজুল ইসলামের সাথে। কুদ্দুস তাদের ন্যায্য সম্পত্তি পাওয়ার দাবীতে কোর্টে একটি মামলা করেন। মামলা করার পর থেকেই নির্যাতনের মাত্র বাড়িয়ে দেয় মফিজুল ইসলামের গং।অবশেষে বাড়ির ভিটা ছাড়া করে দিলো কুদ্দুসকে। সে এখন বুড়বুড়িয়া মাজারে পড়ে থেকে ৩ বছর ধরে রাতদিন জীবনযাপন করে আসছে। এবার তার ভাই হারুনুর রশিদ পরিবারকে গত বুধবার সন্ধ্যায় ঘর-বাড়ি ভেঙে বসত ভিটা থেকে তাড়িয়ে দেয় এবং মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
ভুক্তভোগী হারুনুর রশিদ প্রতিনিধিকে জানান,আজ থেকে ৫০ বছর ধরে বাপ-দাদার বসত ভিটায় বসবাস করে আসছি। কিন্তু আমার বাবা মৃত্যুর পর তাদের জায়গা বলে দাবী করে আসছে। এ নিয়ে আমার ভাই কুদ্দুস কোর্টে একটি মামলা করে। মামলা করার পর আদালত থেকে রায় আসে আমাদের পক্ষে।কিন্তু এ রায়কে অমান্য করে জোড়পূর্বক ভাবে আমার ভাইকে মারধর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। তারা আমার ভাইকে তাড়িয়ে দিয়ে এখনো শান্ত হয়নি । গত বুধবার সন্ধ্যায় মফিজুল ইসলাম ও তার ছেলে মাইনুউদ্দিন,মাসুদ, মামুনুর রশিদ এবং জজু মিয়ার ছেলে মমতাজ মিলে আমাদের বাড়িতে এসে হামলা চালিয়ে মারধর করে ঘর ভেঙে ফ্রিজ, টিভি,নগত টাকাসহ মালামাল লুট করে নিয়ে যায় এবং আমাদেরকে পিটিয়ে ঘর থেকে তাড়িয়ে দেয়। সাথে সাথে স্থানীয়রা থানায় ফোন দিলে পুলিশ এসে তাদের ঘর থেকে কিছু মালামালসহ উদ্ধার করে।আজ ৪ দিন ধরে আমি এবং স্ত্রী রহিমা বেগম,ছেলে জামিল ও আমার ভাই এনামূল খোলা আকাশের নিচে না খেয়ে বিচারের জন্য সবার দ্বারে দ্বারে যাইতাছি কিন্তু টাকা দিয়ে অনেক সাহেব সর্দারকে ভোগ করে রেখেছে কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না এবং জামাল মেম্বারসহ তাদের পক্ষে কথা বলে। আমি প্রশাসনের কাছে সু-বিচার চাই।
এলাকার একাধিক মানুষের সাথে কথা বললে তারা জানান, এই ভয়াল করোনার মধ্যে তাদেরকে বাড়ির ভিটা থেকে উচ্ছেদ করে দেয়া মানে একটি অমানবিক কাজ। এখন তারা কই খাইবে, কই যাইবে। প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করে তারা বলেন সঠিক বিচারটা যেন তারা পায়।
এ বিষয়ে মফিজুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি প্রতিনিধিকে জানান, তাদের বাপ মৃত্যুর আগে বাড়ি জায়গা সহ বিক্রি করে গেছে। তাদের থাকার জায়গা নাই বলে আমি ঘর তুলে তাদের কাছে ভাড়া দিয়ে রেখেছি। এখন আমাদের প্রয়োজন হয়েছে তাই তাদেরকে ভিটা ছেড়ে চলে যেতে বলেছি কিন্তু তারা যায়নি। এসময় তিনি মারধর ও লুটপাটের কথা অস্বীকার করেন এবং ঘর বাড়ি বৈশাখীর ঝড়ে ভেঙে গেছে বলে যৌক্তিকতা দেখান।
এ বিষয়ে স্থানীয় মেম্বার জামাল হোসেন, নিজ বাড়ির ঘটনা বলে কোনো মন্তব্য দিতে চায়নি।তবে তিনি জানান, সমাধানের চেষ্টা চলছে।
স্থানীয় চেয়ারম্যান মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান,আমরা বিষয়টি সমাধানের জন্য জামাল মেম্বারকে দায়িত্ব দিয়েছি এবং হারুনুর রশিদের থাকার জায়গা ব্যবস্থা করব।
বুড়িচং থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মো:মোজাম্মেল হক পিপিএম জানান,এ ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আমাদের ফোর্স পাঠিয়েছি এবং এ বিষয়টি জেনে সিরাজুল ইসলাম চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দিয়েছি যদি দায়িত্ব পালন না করে।তাহলে হারুনুর রশিদ যদি মামলা করার জন্য আসে তাহলে আমরা মামলা রাখিবো এবং প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) ইমরুল হাসান জানান,এই করোনা মূহুর্তে তাদেরকে তাড়িয়ে দেওয়া সবচেয়ে বড় অপরাধ করেছে এবং খুব দুঃখজনক।
আমি বিষয়টা তদন্ত করে দেখে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে সাথে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply