ডা: অজিত কুমার পাল :
করোনা র্বতমানে বিশ্বজুড়ে এক আতঙ্কের নাম।সারা পৃথিবীতে করোনা মহামারী আকার ধারণ করেছে এবং প্রতিনিয়তই বাড়ছে আক্রান্তের হার ।বাড়ছে মৃত্যু বরণের সংখ্যাও। বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঝুকির্পূ্ণ অণ্ঞল লক ডাউন করা হয়েছে ।স্থবির হয়ে পড়েছে প্রায় সব ধরনের প্রতিষ্ঠান ।সারাবিশ্বে এরই মধ্যে ১৯৮ টি দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে, আজ পযর্ন্ত সারা পৃথিবীতে ৪৫০০০০ লোক আক্রান্ত হয়েছে এবং ২৪০০০ এর বেশি মৃত্যুবরণ করেছ । আমাদের দেশে এখন পযর্ন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৪৮ জন এবং ৫ জন লোক মৃত্যুবরণ করেছে ।
সাধারণত হার্ট ফেলিওর ,কিডনী ফেলিওর,ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস,কেমো থেরাপি নিচ্ছে এমন রোগীরা করোনার জন্য বিশেষভাবে ঝুকিপূর্ণ ।যে সব রোগে দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতা থাকে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় তাদের ক্ষেত্রেওকরোনা ভাইরাসের ঝুকি অনেক বেশি ।
ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ।অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, সংক্রমণ প্রবণতা বেশি থাকে এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের জটিলতা শুরু হয় । তাই করোনা ঝুকিতে অন্যান্য রোগের তুলনায় ডায়াবেটিস অন্যতম ।
তাই ডায়াবেটিস রোগীদের করোনা সংক্রমণের হাত থেকে বাচঁতে হলে করোনা এবং ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতন হতে হবে ও ধারণা থাকতে হবে । নিম্নে করোনা ও ডায়াবেটিস সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করা হল:
১প্রশ্ন: করোনা কি ?
উত্তর: করোনা একটি ভাইরাস।যদিও করোনাভাইরাসের অনেক প্রজাতি আছে, তার মধ্যে মাত্র সাতটা প্রজাতি মানুষের দেহে রোগ সংক্রমণ করতে পারে । এদের মধ্যে চারটে সারা বছর ধরে সাধারণ হাঁচি-কাশি সর্দির উপসর্গ সৃষ্টি করে।
২ প্রশ্ন: কোভিড-১৯ (COVID-19)বা করোনা রোগ কি?
উত্তর:নতুন আবিষ্কৃত বা নভেল করোনা ভাইরাসের সংস্পর্শে মানুষের দেহে যে ছোঁয়াচে রোগ সৃষ্টি হয়, সেই রোগের নাম কোভিড-১৯ (COVID-19) বা করোনা ভাইরাস ডিসিজ । ২০১৯-এর ডিসেম্বর মাসে চীনদেশের উহান প্রদেশে সর্বপ্রথম এই রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। ভাইরাস সংক্রমণ সব বয়েসের মানুষের মধ্যে হলেও যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং যারা বয়স্ক, তাদের এই রোগে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
৩ প্রশ্ন: করোনা রোগের উপসর্গগুলি কি?
সাধারণ ফ্লু বা সর্দিজ্বরের সঙ্গে এর অনেক মিল পাওয়া যায়। ক্লান্তি,সর্দিকাশি,হালকা জ্বর ,শ্বাসকষ্ট, গলাব্যাথা,ও শ্বাসপ্রশ্বাসেরসমস্যাইমূলতপ্রধানলক্ষণ।
আক্রান্ত হবার পর প্রথম দিকে উপসর্গ খুবই কম থাকে, তারপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।একই সাথে মাথাব্যাথা,শরীরব্যাথা,ও পেটের সমস্যা থাকতে পারে।যাদের শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভাল সপ্তাহখানেক পরে সর্দি ছাড়া অন্যান্য লক্ষণগুলো চলে যায়।কিন্তু ডায়বেটিস ও যে সকল রোগে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা কম থাকে সে ক্ষেত্রে লক্ষণ সমূহ বাড়তে থাকে। কখনও কখনও এর পরিণামে নিউমোনিয়া ও শেষে মাল্টি অরগ্যান ফেইলিওর বা দেহের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে মৃত্যুও ঘটতে পারে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির কোন উপসর্গই থাকে না বা তারা অসুস্থ বোধ করেন না। প্রায় ৮০% আক্রান্ত মানুষই সেরকম কোন চিকিৎসা ছাড়াই সেরে ওঠেন।
প্রশ্ন: করোনা কিভাবে ছড়ায়?
উত্তর: করোনাএকটা ছোয়াচে রোগ । বিশ্ব সংস্থা বলেছে সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে গেলে যেকোন সুস্থ লোকই সংক্রামিত হতে পারে ।একজন ভাইরাস সংক্রামিত ব্যক্তির থেকে কতজন সংক্রামিত হবে তা নির্ভর করবে সেই ব্যক্তি ইনকিউবেশন পিরিয়ডের মধ্যে কতজন মেলামেশা করেছে তার উপর ।ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি যতটা বেশি নিজেদের অন্যদের থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে ভাইরাস সংক্রমনের হারও ততটা কম থাকবে । এ ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে সুস্থ ব্যক্তির দেহে হাচিঁ বা কাশির মা্ধ্যমে এ ভাইরাস ছড়াতে পারে । কোন সুস্থ ব্যক্তি যখন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির দেওয়া হাচিঁ বা কাশির সূক্ষকণারসংস্পর্শে আসে তখন তার দেহেও করোনা সংক্রমণ ছড়াতে পারে ।তাই করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে নূন্যতম ১মি. বা ৩ফিট দূরুত্ব থাকা বাণ্ঞনীয় । এ ভাইরাস বাতাসেও ছড়াতে পারে তবে সংক্রমিত ব্যক্তির স্পর্শের তুলনায় সংক্রমণের হার কম । সংক্রমিত ব্যক্তির যদি লক্ষণ নাও থাকে তবে এ রোগ ছড়াতে পারে । তবে সংক্রমিত ব্যক্তির মলমূত্র থেকে এ রোগ ছড়ানোর হার তুলনামূলক কম । সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত সংস্শর্শে আসা টাকা বা বিভিন্ন নথিপত্রের মাধ্যমেও এ রোগ ছড়াতে পারে ।
৫প্রশ্ন ঃকরোনা ভাইরাস কতরকমভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে?
উত্তর ঃকোন দেশে এই ভাইরাস সংক্রমণ ঘটার সময় প্রধানত চারটে পর্যায়ে ছড়ায়।
পর্যায় ১.বিদেশ থেকে আগত রোগীর মাধ্যমে – যে সমস্ত দেশে আগেই সংক্রমণ ঘটেছে সেই অঞ্চল থেকে কেউ সংক্রমণের শিকার হয়ে নিজের দেশে ফিরলে, তাকে প্রথম পর্যায়ের সংক্রমণ বলা হয়।
পর্যায় ২. আঞ্চলিক সংক্রমণ – বিদেশ থেকে আগত রোগীর সান্নিধ্যে এসে কেউ নিজে সংক্রামিত হলে তাকে দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ বলা হয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, একজন আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে অন্য সুস্থ মানুষের সংক্রমণের সম্ভাবনা যথাসম্ভব কমিয়ে আনা, যাতে সংক্রমণের শৃঙ্খলটাকে কেটে দেওয়া যায়। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এখন এই পর্যায়ে আছেএবং সকলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলে তবেই সংক্রমণ এই পর্যায়ে রোখা যাবে।
পর্যায় ৩– পারস্পরিক সম্প্রদায়ের মধ্যে সংক্রমণ – বিদেশ থেকে আগত রোগীর বা যেকোন করোনা আক্রান্ত রোগীর সান্নিধ্যে না এসেও কেউ যখন সংক্রামিত হয় তখন তাকে তৃতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ বলা হয়। এই পর্যায়ের সংক্রমণ অনেক দ্রুত, অনেক বড় এলাকা জুড়ে হয়।
পর্যায় ৪– মহামারী – এটা শেষ এবং সবথেকে খারাপ পর্যায় যখন সংক্রমণ অত্যন্ত দ্রুত মহামারীর আকারে ছড়িয়ে পড়ে। এই পর্যায়ের সংক্রমণ একবার হয়ে গেলে কবে, কিভাবে আটকানো যাবে, তা বলা অসম্ভব।
৬ প্রশ্ন: করোনা সংক্রমণের ঝুকিতে কারা বেশি?
উত্তর: এখন পযর্ন্ত প্রাপ্ততত্ত্যের ভিত্তিতে দেখা যায় নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে করোনার সংক্রমণ বেশি থাকে-
যাদের বয়স ৬০ বা তার বেশি।
যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কম যেমন-অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস,ক্যান্সার রোগী,দীর্ঘমেয়াদী স্টেরয়েড যারা ব্যবহার করেন এমন রোগী।
ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস,তীব্রতর এজ্যামা বা হাপানি,
হার্ট ফেলিওর,কিডনী ফেলিওর,লিভার ফেলিওরের রোগী
অতিরিক্ত ওজন যাদের বিএমআই(BMI)৪০ এর বেশি
তছাড়া গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রেও যেকোন ভাইরাসজনিত রোগ হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে।
৭ প্রশ্ন: ডায়াবেটিস রোগীরা কেন বেশী ঝুকিপূর্ণ?
উত্তর: যদিও সাধারণের তুলনায় সংক্রমণের হার একই কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের রোগীদের করোনা সংক্রমণের পরবর্তী লক্ষণ সমূহের প্রকোপ বেশি থাকে ও ডায়াবেটিস জনিত সমস্যা বৃদ্ধি পায়। ডায়াবেটিস রোগীদের যেকোন ভাইরাস সংক্রমণে রক্তের গ্লুকোজর মা্ত্রা বেড়ে যায় ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত ডায়াবেটিসে ভাইরাস শরীরে দ্রুত সংক্রমিত হয়। তাছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা কম থাকে ফলে যে কোন জীবানুর সাথে লড়াই করার সক্ষমতা হ্রাস পায়। অনেক ডায়াবেটিস রোগীদের আগে থেকেই কিডনীরোগ,হৃদরোগ ও অন্যান্য জটিলতা থাকে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে করোনাসংক্রমিত হলে এসব অঙ্গের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের করোনা ঝুকি সাধারণ জনগণের তুলনায় অনেক বেশি।
৮ প্রশ্ন: ডায়াবেটিস রোগীরা কিভাবে করোনা প্রতিরোধ করবেন?
উত্তর: করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করার কথা বলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এক্ষেত্রে প্রত্যেক সাধারণ মানুষের মত ডায়াবেটিস রোগীদের কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তবেই এই ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার গতি রোধ করা সম্ভব।
হাত সর্বদা পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করতে হবে। নির্দিষ্ট সময় পরপর সাবান দিয়েনূন্যতম ২০ সেকেন্ড ভাল করে হাত ধুতে হবে। হাতের তালু, আঙ্গুল ও কব্জি পর্যন্ত ভাল করে সাবান দিয়ে ঘষে ধুতে হবে । হাতে ময়লা দেখা না গেলেও বারবার হাত ধুতে হবে। বিশেষ করে হাত ধুতে হবে অসুস্থ ব্যক্তির পরিচর্যার পর, হাঁচি বা কাশির পর, খাবার রান্না করার আগে, খাবার পরিবেশন করার আগে, বাথরুম ব্যবহারের পর এবং পশুপাখির পরিচর্যার পর।টাকা-পয়সা,চাবির ছড়া,ঘড়ি,পার্সেল ইত্যাদি জিনিস স্পর্শ করলে হাত ধুয়ে নিতে হবে ।
হাত পরিষ্কার করার জন্য সাবানের পরিবর্তে হ্যান্ড স্যানিটাইজারও ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে তাতে অ্যালকোহলের পরিমাণ ৭০% থেকে ৯৫% হওয়া থাকতে হবে।স্যানিটাইজারের মূল উপাদান হল অ্যালকোহল। অ্যালকোহল-ও করোনাভাইরাসের লিপিড স্তরটা ভেঙে ফেলতে সক্ষম। কিন্তু সাবানের মতো ভাইরাসের লিপিড স্তরের সঙ্গে অ্যালকোহলের দ্রুত বন্ধন গঠন হয় না, যার ফলে স্যানিটাইজার ব্যবহার করলে ভাইরাস নিষ্ক্রিয় হতে সময় লাগে। তাই হ্যান্ড স্যানিটাইজারের থেকে সাবান ভাইরাস নষ্ট করতে বেশি কার্যকরী। সাবান ও জল ব্যবহারের সুযোগ না থাকলে তখন হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিকল্প হতে পারে।
হাঁচি-কাশি হলে, নাক দিয়ে সর্দি জল পড়লে মুখে মাস্ক পরতে হবে।
সারাদিন যথাসম্ভব নাকে মুখে হাত দেওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। হাত দিয়েই আমরা প্রধানত সব কাজ করি বলে সারাদিন অনেক কিছু স্পর্শ করি যার থেকে ভাইরাস হাতে লেগে যেতে পারে। তাই অপরিষ্কার হাত দিয়ে কখনো নাক–মুখ–চোখ স্পর্শ করা উচিৎনয়।
সর্দি-কাশি বা জ্বর হয়েছে এমন লোকজনের থেকে অন্তত এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কারণ আর সব ফ্লুর মতোই এই রোগও সর্দি-কাশির ড্রপলেট বা কণার মাধ্যমে অন্যকে সংক্রমিত করে। এছাড়া ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছে এমন ব্যক্তিদের সংস্পর্শ-ও এড়িয়ে চলতে হবে। অসুস্থ পশুপাখির থেকে দূরে থাকতে হবে।
রুমাল বা টিস্যু পেপার হাতে না থাকলে, মুখে হাত চাপা দিয়ে হাঁচা বা কাশা উচিৎ নয় কারণ সেই হাতে অন্য কিছু স্পর্শ করার সম্ভাবনা থাকে। পরিবর্তে কনুই-এর কাছে বা কাঁধের কাছে মুখ গুঁজে হাঁচলে বা কাশলে সেই সম্ভাবনা কম।
হাঁচি বা কাশির সময়, টিস্যু পেপার ব্যবহার করার পর ওই টিস্যু পেপার যেখানে সেখানে না ফেলে, কোনও নির্দিষ্ট ঢাকনা দেওয়া ডাস্টবিনে ফেলতে হবে।
খাবার রান্নার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে তা সুসিদ্ধ হয়।
ভিড় থেকে দূরে থাকতে হবে। আপাতত যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। সম্ভব হলে বাড়ি থেকেই অফিসের কাজ করতে হবে।একেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বা সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং বলে।
নিজেকে অসুস্থ মনে হলে ঘরে থাকতে হবে। বাইরে যাওয়া অত্যাবশ্যক হলে নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। তবে বেশী অসুস্থ বোধ করলে, জ্বর হলে, কাশি বা শ্বাসকষ্ট হলে দ্রুত নিকটস্থ ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী নিজেকে ঘরের বাইরে যাওয়া থেকে বিরত রাখতেহবে ও বাড়িতেও অন্য সদস্যদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে (সেল্ফ আইসোলেশান) বা ডাক্তারের কাছে গিয়ে রিপোর্ট করতে হবে (সেল্ফ রিপোর্টিং)।
অত্যাবশ্যকীয় ভ্রমণের ক্ষেত্রে জরুরি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
কেউ কোন কারণে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শ এসেছে জানতে পারলে, তার কোন উপসর্গ না থাকলেও তাকে ১৪ দিনের জন্য অন্যদের থেকে আলাদা থাকতে হবে। একেই বলে সেল্ফ কোয়ারান্টিন।
কাউকে অভ্যর্থনা করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।কারও সঙ্গে হাত মেলানো (হ্যান্ড শেক) বা কোলাকুলি না করে সালাম দিয়ে বা নমস্কার করে অভিবাদন জানাতে হবে।
এর বাইরেও ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিস সম্পর্কিত কিছু নিয়মাবলী মেনে চলতে হবে-
ডায়াবেটিস রোগীদের করোনা নিয়ন্ত্রণে আলাদাভাবে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
প্রয়োজনের সময় ডায়াবেটিস রোগীদের আপন জনদের যেন সময়মত পাওয়া যায় সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে ।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মাত্রা করোনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । যার ডায়াবেটিস যত কম নিয়ন্ত্রিত,তার ঝুকি তত বেশি । তাই এ সময় রক্তের গ্লুকোজ সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে । প্রয়োজনে ইনসুলিন শুরু করতে হবে । সমস্যা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।ডায়াবেটিস রোগীদেরকে অবশ্যই একটি সচল গ্লুকোমিটার রাখতে হবে।
ডায়াবেটিস রোগীদের যেকোন সংক্রমণেই ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায় এবং শরীর পানিশূন্য হয়ে যায়। তাই প্রয়োজনে প্রচুর পানি পান করতে হবে।
ডায়াবেটিস রোগীদের ঔষধের পযার্প্ততা নিশ্চিত করতে হবে ।প্রয়োজনে পরবর্তী কিছুদিনের জন্য অতিরিক্ত ঔষধ কিনে রাখতে হবে।
ডায়াবেটিস রোগীদের ঔষধের পাশাপাশি খাবারের পযার্প্ততা ও নিশ্চিত করতে হবে।
হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগী ও পরিবারের পযার্প্ত ধারণা থাকতে হবে।
বাড়িতে কেউ অসুস্থ হলে বয়স্ক ও ডায়াবেটিস রোগীকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
এ সময় বাইরে হাটতে না যাওয়াই ভাল। বাড়িতে হালকা ব্যায়াম ও করিডোরে হাটলেই চলবে
ডায়াবেটিস রোগী যাদের হার্ট ওকিডনী সমস্যা আছে তাদেরকে হার্ট ও কিডনী চিকিৎসার ব্যাপারে আলাদাভাবে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
ডায়াবেটিস রোগীদেরকে ইনফ্লুয়েন্জা এবং নিউমোনিয়ার টিকা নেওয়া উচিত।
৯ প্রশ্ন: ডায়াবেটিস রোগীদের করোনার লক্ষণ দেখা দিলে কি করণীয় ?
উত্তর:
ডায়াবেটিস রোগীদের করোনার লক্ষণসূমহ যেমন-জ্বর,সর্দি,কাশি,শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে ভীত সন্ত্রস্ত হওয়ার দরকার নেই।অযথা হাসপাতালে না গিয়ে ব্যক্তিগত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ রাখলে চলবে।
বার্ধ্যক,অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস অথবা দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা না থাকলে করোনা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজে থেকেই সেরে যায়। সেক্ষেত্রে বাসায় থেকে ব্যক্তিগত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ রেখে চিকিৎসা নিতে হবে।
আক্রান্ত ব্যক্তিকে লক্ষণ শুরু হওয়া থেকে ১৪ দিন বাসায় আলাদাভাবে থাকতে হবে।
করোনা আক্রান্ত সময়ে প্রচুর পানি পান করতে হবে,ভিটামিন-সি যুক্ত শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে। পাশপাশি প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ ও খাওয়া যাবে।
এ সময় ডায়াবেটিস রোগীদের কঠোরভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং দিনে কয়েকবার গ্লুকোমিটার দিয়ে ডায়াবেটিস মাপতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ সাপেক্ষে ইনসুলিন শুরু করতে হবে।
কম বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে রক্তের গ্লুকোজ মাপার পাশাপাশি প্রসাবের কিটোন পরীক্ষা করতে হবে।
যেসব ডায়াবেটিসের ঔষধ শরীরের পানিসল্পতা ও হাইপোগ্লাইসেমিয়া করে সেগুলো এ সময় না নেওয়াই ভাল।
এ সময় ডায়াবেটিস রোগীদের “সিক ডে গাইডলাইন” ফলো করা উচিত।
অবস্থা যদি অপরিবর্তিত থাকে অথবা অবনতির দিকেযেতে থাকে যেমন-শ্বাসকষ্ট,বুকব্যাথা,অজ্ঞানভাব,উল্টাপাল্টা কথা বলা,মুখ ও ঠোটঁ নীল হয়ে যাওয়া এসব ক্ষেত্রে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে এবং সরকার নির্দেশিত কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে হবে।
উপসংহার ঃ করোনা সারা বিশ্বে মহামারী আকার ধারণ করেছে এবং এখনো ছড়াচ্ছে। যেহেতু ডায়াবেটিস রোগীরা করোনায় বেশী ঝুঁকি পূর্ণ তাই তাদের পূর্ব প্রস্তুতি থাকতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে ও উল্লেখিত করোনা প্রতিরোধের সকল নিয়ম গুলো মানতে হবে। আশা করি ডায়াবেটিস রোগীরা একটু সচেতন ও সাবধানে থেকে করোনা ঝুঁকি মুক্ত থাকবেন।
লেখক
ডা: অজিত কুমার পাল
এমবিবিএস,এমডি(ইএম),এমআরসিপিএস(গ্লাসগো)
এফএসিই,এফএসিপি(ইউএসএ)
মেডিসিন,ডায়াবেটিস ও হরমোন বিশেষজ্ঞ
সহযোগী অধ্যাপক
ময়নামতি মেডিকেল কলেজ,কুমিল্লা ও
সিনিয়র কনসালটেণ্ট
ডায়াবেটিস হাসপাতাল, কুমিল্লা
Leave a Reply