অনলাইন ডেস্ক:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শিক্ষার্থীরা মা’দক থেকে দূরে না থাকলে দেশের অস্তিত্ব হু’মকির মুখে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং পুরো দেশ মা’দকে ছেয়ে গেছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের মা’দকমুক্ত সমাজ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। তা না হলে দেশ ও দেশের ভবিষ্যৎ ধ্বং স হয়ে যাবে।’ সোমবার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় রাষ্ট্রপতি আ’ক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, ‘দেশের যেসব জেলায় মা’দকের কার্যকলাপ বেশি তার মধ্যে কুমিল্লা অন্যতম। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ত্রিশ লাখ শহীদের র’ক্তের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন করেছি। আজ সেই দেশটি মা’দকের ছোবলে ধ্বং’স হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মা’দকের ছোবল থেকে র’ক্ষা করতে হবে।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আজকের শিক্ষার্থীরা দেশের উচ্চতর মানবসম্পদ। দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও অগ্রগতি নির্ভর তোমাদের ওপর। তোমাদের তারুণ্য, জ্ঞান, মেধা ও প্রজ্ঞা হবে দেশের উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে একজন গ্র্যাজুয়েট হিসেবে সব সময় সত্য ও ন্যায়কে সমুন্নত রাখবে। নৈতিকতা ও দৃঢ়তা দিয়ে দুর্নীতি এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে। রাষ্ট্রের বিবেকবান নাগরিক হিসেবে তোমাদের কাছে জাতির প্রত্যাশা, তোমরা কখনও অর্জিত ডিগ্রির মর্যাদা, ব্যক্তিগত সম্মানবোধ আর নৈতিকতাকে ভূলুণ্ঠিত করবে না। বিবেকের কাছে কখনও পরাজিত হবে না।’
শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমান যুগ তথ্য-প্রযুক্তির যুগ। এ সময়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে আধুনিক ও প্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ হতে হবে। দেশের বিশাল তরুণ সমাজকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করার জন্য আনুপাতিক হারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কোনও বিকল্প নেই। এই বিবেচনায় বর্তমান সরকার প্রায় প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে দেশের সব অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা মানববিদ্যা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উচ্চতর শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে ও আগামীতে পাবে।’
সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘আমাদের যেসব প্রতিকূলতা আছে আসন্ন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে সেগুলো মানিয়ে নিতে হবে। ব্রিটেনের অনেক গ্রামে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট নেই। সেই তুলনায় আমাদের গ্রামগঞ্জে ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে। আমরা আশাবাদী, ২০২৪ সালের মধ্যে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকংকে পিছিয়ে অর্থনীতিতে এগিয়ে যাবো।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন– বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এমরান কবির চৌধুরী। এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন–সদর আসনের সংসদ সদস্য হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার,
সংসদ সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, সংসদ সদস্য ও সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, সাবেক ডেপুটি স্পিকার অধ্যাপক আলী আশরাফ, কুমিল্লা ১ আসনের সংসদ সদস্য মেজর অব. সুবেদ আলী ভূঁইয়া, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি আঞ্জুম সুলতানা সীমা, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর ও কুমিল্লার পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম।
রাষ্ট্রপতির ভাষণের আগে শিক্ষায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৪ জন শিক্ষার্থীকে চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।
বিকাল সাড়ে ৫টায় রাষ্ট্রপতির ঘোষণার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনের। শিক্ষার্থীদের সনদপ্রাপ্তি উদযাপনে সন্ধ্যার পর আয়োজিত হবে কনসার্ট। এতে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন নগর বাউল ব্যান্ডের জেমস।
Leave a Reply