অনলাইন ডেস্ক:
সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়ে জু য়ার আসরে কাজ করা কয়েকজন সুন্দরী ‘ক্যাসিনো গার্ল’ আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। র্যাবের ওই সব অভিযানের পরই ধনীদের টাকা ওড়ানোর জায়গা হিসেবে ‘ক্যাসিনো’ নিয়ে বেরিয়ে আসছে একের পর এক চা ঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গেছে, এসব ক্যাসিনোতে কাজ করতে দেশের শিক্ষিত স্মার্ট মেয়েদের পাশাপাশি বিদেশ থেকে প্রশিক্ষিত তরুণীদের আনা হতো। এমনকি ক্যাসিনোগুলোতে প্রশিক্ষিত জুয়াড়ির পাশাপাশি নিরাপত্তা প্রহরীও বিদেশ থেকে আনা হতো। ক্যাসিনোগুলোতে প্রতি রাতেই কোটি কোটি টাকা উড়তো। এর পরিমাণ কমবেশি ১২০ কোটি টাকাও হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
সূত্র বলছে, বাংলাদেশে ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে চীন ও নেপালের অন্তত ৪০০ প্রশিক্ষিত তরুণ-তরুণী ঢাকার বিভিন্ন ক্যাসিনোয় কাজ করতেন। তারা বাংলা ও ইংরেজি উভয় অনর্গল কথা বলতে পারেন। এমনকি তাদের চেহারাতেও রয়েছে আভিজাত্যের ছাপ। এসব ক্যাসিনো তরুণীরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে কাজ করতেন। কেউ রিসিপশনে, কেউ ইলেকট্রোনিক জুয়ার বোর্ড অপারেটিংয়ে, আবার কেউবা ক্যাসিনো থেকে অর্থ পাচারে কাজ করতেন। এছাড়া ক্যাসিনোতে আসা জুয়াড়িদের মনোরঞ্জনের জন্যও রাখা হতো কিছু সুন্দরী মেয়েদের। তাদের রাখা হতো রাজধানীর গুলশান, নিকেতন, বনানী, ধানমন্ডি, উত্তরা, পল্টন, ফকিরাপুল, শাহজাহানপুরের বিভিন্ন এলাকার প্রাসাদোপম ভবনে। ওই ক্যাসিনো গার্লদের প্রতিষ্ঠানের কালো কাচঘেরা নিজস্ব গাড়িতে আনা-নেয়া করা হতো। নিরাপত্তা থেকে শুরু করে তাদের থাকা-খাওয়া, সাজসজ্জা সব কিছুই সংশ্লিষ্ট ক্যাসিনো পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বহন করতো। সূত্র আরো জানায়, রাজধানীর ক্যাসিনোগুলোয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একের পর এক অভিযানে ভিনদেশি এসব ক্যাসিনো গার্লরা পড়েছেন বিপাকে। প্রশাসন এরই মধ্যে কড়া নজরদারি শুরু করেছে। এ কারণে অধিকাংশই নিজ দেশে এখন যেতে পারছেন না।
আবার অনেকের ভিসার মেয়াদ না থাকায় বাংলাদেশেও আর অবস্থান করতে পারছেন না। এদিকে যাদের ভরসায় এসেছিলেন, তারাও প্রতিষ্ঠান ছেড়ে পালিয়েছেন। ফলে তাদের মধ্যে অজানা আ তঙ্ক কাজ করছে। অন্যদিকে ঢাকার ক্যাসিনোগুলোতে শুধু ভিনদেশি তরণ-তরুণীই নয়, পেটের দায়ে অথবা বিলাসী জীবনের লোভে দেশের কিছু শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরাও এই চক্রে জড়িয়ে পড়েছে। জু য়ার বোর্ড অপারেটিং ও অর্থ পাচারে ভিনদেশিদের অভিজ্ঞতা নিয়ে তারাও এখন অভিজ্ঞ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তেও ক্যাসিনোর কর্মচারীদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। এর আগে গত বুধবার বিকেলে ফকিরেরপুলের ইয়ংমেন্স ক্লাবের ক্যাসিনোয় অভিযানকালে কর্মরত কয়েকজন চীনা ও নেপালি নাগরিককে আটক করে র্যাব। জানা যায়, তাদের কারোরই ওয়ার্ক পারমিট নেই। আটকদের মধ্যে ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরা দুই তরুণীও ছিলেন।
কাপড় পাল্টে থ্রিপিস পরতে চাইলে র্যাবের নারী সদস্যের কাছে বলেন, পেটের তাগিদে জুয়ার বোর্ডে চাকরি করি, স্যার। আমাদের থ্রিপিসটা পরতে দেন। ওয়েস্টার্ন ড্রেস না পরলে চাকরি থাকবে না। সে সময় নিজেদের নিরপরাধ দাবি করে নেপালের এক গার্ল জানান, ইয়ংমেন্স ক্লাবে দেড় মাস ধরে চাকরি করছিলেন। দৈনিক দুই শিফটে ১২ ঘণ্টা অন্তর মোট ১২ জন গার্ল কাজ করেন। ক্যাসিনোয় তাদের ‘ডিলার’ নামে ডাকা হয়। মাসিক ও দিন হিসেবে কখনো রিসেপশনে, কখনো বোর্ডে কার্ড সরবরাহকারীর দায়িত্ব পালন করেন। রিসেপশনিস্টের বেতন ২১ হাজার আর কার্ড বিতরণকারীকে বেতন ১০ হাজার টাকা দেয়া হতো। এদের মধ্যে এক ক্যাসিনো গার্ল জানান, তার স্বামী এ কাজের বিষয়ে জানলেও স্বজনরা জানে না। তিনি আরো জানান, ক্যাসিনোয় সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা এবং রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত জুয়া খেলা হয়।
জুয়ার বোর্ডগুলো চালু করে চীনা নাগরিকরা। বোর্ড পরিচালনা করে নেপালিরা। দিনের প্রতি শিফটে ৭০-৮০ জন মানুষ খেললেও রাতের বেলায় বেশি মানুষ খেলে। ক্যাসিনোয় অনেকে ই য়াবাসহ নানা ধরনের মা দক সেবন করা হয় বলেও তিনি জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মতিঝিলের এক নেপালি গার্ল জানান, তাদের ক্যাসিনোয় পোকার (জুজু খেলা), মেশিনের খেলা ছাড়াও বাক্কারাট (বাজি ধরে তাস খেলা), রুলেট, পন্টুন, ফ্লাশ, বিট, ডিলার, ব্লাকজ্যাক নামের জু য়া খেলা হতো। এছাড়া রেমি, কাটাকাটি, নিপুণ, চড়াচড়ি, ডায়েস, ওয়ান-টেন, ওয়ান-এইট, তিন তাস, নয় তাস, ফ্লাশ-জুয়াও চলত।
জানা গেছে, ক্যাসিনোতে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিত্তশালী পরিবারের তরুণরাও আসতো। বড় জুয়াড়িদের প্রথমে ম দের গ্লাস দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হতো। তাদের জন্য বাহারি খাবারের আয়োজন ফ্রি থাকত। তিনি আরো জানান, জুয়া পরিচালনার জন্য নেপালসহ পার্শ্ববর্তী বেশ কয়েক দেশের তরুণীরা কাজ করেন। ভিজিট ভিসায় আসা তরুণীদের বেশিরভাগই নেপালি। লাখ টাকার বেশি অগ্রিম দিয়ে তাদের বিদেশ থেকে আনা হয়। বেতন ১০ হাজার থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। জানা গেছে, ঢাকায় কমপক্ষে ২০০ ক্যাসিনো গার্ল কাজ করত। এদের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ জন জুয়ার বোর্ড অপারেটিংয়ে পারদর্শী। অন্যদের কেউ কেউ রিসিপশনে কাজ করত।
Leave a Reply