অনলাইন ডেস্ক:
ইতিহাস গড়ে দেশ সেরা খেতাব অর্জন করেছে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড । বিগত এক থেকে দেড় যুগে এবারের মতো ফলাফল আর কখনও হয়নি কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে। সর্বশেষ ২০০৮ সালে রেজাল্ট ছিল ৭৭.৩৩ শতাংশ। সে বছরের ফলাফল অতিক্রম করেছে এবার।দেশের আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলের দিকে দিয়ে এগিয়ে কুমিল্লা। তাদের পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ।বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুরে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বিস্তারিত ফলাফল প্রকাশ করেন।
আটটটি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে কুমিল্লা বোর্ড পাসের হার ৭৭.৭৪, ঢাকা বোর্ডের ৭১.০৯ শতাংশ, রাজশাহী বোর্ডে ৭৬.৩৮ শতাংশ, যশোর বোর্ডে ৭৫.৬৫ শতাংশ, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৬২.১৯ শতাংশ, বরিশাল বোর্ডে ৭০.৬৫ শতাংশ, সিলেট বোর্ডে ৬৭.০৫ শতাংশ এবং দিনাজপুর বোর্ডে ৭১.৭৮ শতাংশ।
এবারের পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ১৩ লাখ ৫৫ হাজার ৬২৯ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ৯ লাখ ৮৮ হাজার ১৭২ জন। ৮টি বোর্ডে গড় পাসের হার ৭১.৮৫ শতাংশ।
কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ছয় জেলায় এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হারে এগিয়ে গেছে মেয়েরা। এই বোর্ডে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ছেলেদের পাসের হার ৭৭.১২ শতাংশ এবং মেয়েদের ৭৮.২৭ শতাংশ।আজ বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুরে এই ফল ঘোষণা করে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড।
ঘোষিত ফল অনুযায়ী, এবার পাসের হার গত চার বছরের তুলনায় বেড়েছে। এ বোর্ডের তিনটি বিভাগেই পাসের হারের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা। বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৮৮.৬৪ শতাংশ, যার মধ্যে ছেলেদের হার ৮৮.৪০ শতাংশ ও মেয়েদের ৮৮.৯০ শতাংশ।
মানবিক বিভাগে পাসের হার ৭২.৩৫ শতাংশ, এর মধ্যে ছেলেদের পাসের হার ৭০.১১ শতাংশ এবং মেয়েদের ৭৩.৫৪ শতাংশ। এ বিভাগেও পাসের হারের দিক থেকে মেয়েরা এগিয়েছে। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৭৬.৯৮ শতাংশ। এতে ছেলেদের পাসের হার ৭৫.২২ শতাংশ ও মেয়েদের ৭৯.১৮ শতাংশ। এ বিভাগেও পাসের হারের দিক থেকে মেয়েরা এগিয়ে।
কুমিল্লা বোর্ডে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় ৯৪ হাজার ৩৬০ জন। এর মধ্যে ৪৩ হাজার ২২২ জন ছাত্র ও ৫১ হাজার ১৩৮ জন ছাত্রী। পাস করেছে ৭৩ হাজার ৩৫৮ জন। যার মধ্যে ৩৩ হাজার ৩৩২ জন ছেলে এবং ৪০ হাজার ২৬ জন মেয়ে। এই বোর্ডে ২০১৮ সালে পাসের হার ছিল ৬৫.৪২ শতাংশ, ২০১৭ সালে ছিল ৪৯.৫২ শতাংশ, ২০১৬ সালে ছিল ৬৪.৪৯ শতাংশ, ২০১৫ সালে পাসের হার ছিল ৫৯. ৮০ এবং পাসের হার ছিল ৭০.১৪ শতাংশ ২০১৪ সালে।
১ জনও পাশ করেনি এমন ৩টি প্রতিষ্ঠান হলো- কুমিল্লার দাউদকান্দির বজ্রা স্বদিব এসইপি মডেল কলেজ, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ হজারী হাট স্কুল এন্ড কলেজ, নোয়াখালীর হাতিয়া তমরুদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজ।শিক্ষা বোর্ড থেকে প্রকাশিত গত ৫ বছরের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে ২০১৮ সালে পাশের হার ছিল ৬৫ দশমিক ৪২ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছিল ৯৪৪ জন।
ফলাফল বিশ্লেষনে দেখা দেখাগেছে ২০১৭ সালে পাশের হার ছিল ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছিল ৬৭৮ জন। ২০১৬ সালে পাশের হার ছিল ৬৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছিল ১ হাজার ৯১২ জন। ২০১৫ সালে পাশের হার ছিল ৫৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছিল ১ হাজার ৪৫২জন
টানা আটবার শতভাগ পাস করে ইতিহাস গড়লো কুমিল্লার সোনার বাংলা কলেজ !
কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে এইচএসসি’র ফলাফলে সেরা কলেজের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে জেলার মফস্বলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সোনার বাংলা কলেজ।বুড়িচং উপজেলায় ২০০০ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিক্ষার মানোন্নয়নে সব সময় এগিয়ে থেকে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করতে সক্ষম হয়েছে।
চলতি বছর ২০১৯ সালে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের অধীন কলেজটি থেকে ৩৬৩টি পরীক্ষা দিয়ে ১০৪ জন এ প্লাসসহ শতভাগ পাশ করেছে। এছাড়া ভালো ফলাফলে কলেজটি শিক্ষাবোর্ডের অধীন ছয় জেলার মধ্যে ২য় অবস্থানে রয়েছে।
ভালো ফলাফলের বিষয়ে অনুভূতি প্রকাশ করে করেলটির অধ্যক্ষ আবু ছালেক মো:সেলিম রেজা সৌরভ বলেন, কুমিল্লা জেলার এতদ্বঞ্চলে সাধারণ মানুষের কাছে শিক্ষার আলো ছাড়িয়ে কলেজটি বদ্ধ পরিকর। এ কলেজটির প্রতিটি শিক্ষক শিক্ষার্থী অভিভাবক এমনকি ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা সবাই মিলে বছরজুড়ে সচেষ্ট থাকে লেখাপড়ার মানোন্নয়নে। যে কারনে কলেজটি প্রতি বছর কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে অন্যান্য অসাধারণ ফলাফল করতে সক্ষম হয়। আমাদের এমন ভালো ফলাফলের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আমরা সব সময় অঙ্গিকারাবদ্ধ।
ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করবেন যেভাবে
পরীক্ষায় যারা অকৃতকার্য হয়েছেন অথবা কাঙ্ক্ষিত ফল পাননি তাদের জন্য ফল পুনঃনিরীক্ষার সুযোগ রয়েছে। টেলিটক নম্বর থেকে আগামী ১৮ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত এইচএসসি ও সমমানের ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করা যাবে। ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করতে RSC লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে বিষয় কোড লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে।
ফিরতি এসএমএসে ফি বাবদ কত টাকা কেটে নেওয়া হবে তা জানিয়ে একটি পিন নম্বর (পার্সোনাল আইডেন্টিফিকেশন নম্বর-PIN) দেওয়া হবে। আবেদনে সম্মত থাকলে RSC লিখে স্পেস দিয়ে YES লিখে স্পেস দিয়ে পিন নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে যোগাযোগের জন্য একটি মোবাইল নম্বর লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে।
প্রতিটি বিষয় ও প্রতি পত্রের জন্য ১৫০ টাকা হারে চার্জ কাটা হবে। যে সব বিষয়ের দুটি পত্র (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র) রয়েছে যে সব বিষয়ের ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করলে দুটি পত্রের জন্য মোট ৩০০ টাকা ফি কাটা হবে। একই এসএমএসে একাধিক বিষয়ের আবেদন করা যাবে, এক্ষেত্রে বিষয় কোড পর্যায়ক্রমে ‘কমা’ দিয়ে লিখতে হবে। প্রসঙ্গত, এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী ছিল ১৩ লাখ ৫৮ হাজার ৫০৫। এর মধ্যে ৮টি সাধারণ বোর্ডের অধীনে এইচএসসিতে পরীক্ষার্থী ১১ লাখ ৩৮ হাজার ৫৫০। এছাড়া মাদরাসার আলিমে ৮৮ হাজার ৪৫১ এবং কারিগরিতে এইচএসসি (বিএম) ১ লাখ ২৪ হাজার ২৬৪ পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
Leave a Reply