অনলাইন ডেস্ক:
কুমিল্লা মহানগরী যখন পৌরসভা নামে পরিচিত ছিল তখনকার প্রধান সমস্যা ছিল জলাবদ্ধতা, তেমনি সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পরও প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। এই যখন অবস্থা তখন নির্বাচন আসলেও প্রার্থীদের প্রধান নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রতিশ্রুতি।
আর এভাবেই দেশের অন্যতম প্রাচীন পৌরশহর কুমিল্লা ২০১১ সালে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০১২ সালে প্রথম ও ২০১৭ সালে দ্বিতীয় দফায় মেয়র নির্বাচন হয়। দু’টি নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি জলাবদ্ধতা নিরসনের থাকলেও দিন দিন বাড়ছে এ সমস্যা। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে নগরীর প্রায় সর্বত্রই সৃষ্ট হচ্ছে জলাবদ্ধতার।
আর বাড়ছে নাগরিক দুর্ভোগ। ডুবে যাচ্ছে রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, দোকান-পাটসহ বাসা-বাড়ি। বর্ষার আগেই চৈত্রের সামান্য বৃষ্টিতে নগরীর এই জলাবদ্ধতায় নগরবাসীর মনে আসন্ন বর্ষায় বৃষ্টির আশঙ্কা চরম দুর্ভোগের কথা স্মরণ করে দিচ্ছে।এই চিত্র পুরো নগরীর। অভিযোগ রয়েছে অপরিকল্পিতভাবে মাইলের পর মাইল নগরীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত ড্রেন নির্মান করলেও সেগুলো পানি নিস্কাশনে কোন ভূমিকাই রাখছে না।
শনিবার সন্ধ্যায় এমনি দু’ঘন্টার বৃষ্টিতে নগরীর প্রান কেন্দ্র কান্দিরপাড়,স্টেডিয়াম রোড, নজরুল এভিনিউসহ অধিকাংশ প্রধান প্রধান সড়ক ডুবে যায়। একদা ব্যাংক ও ট্যাঙ্কের শহর কুমিল্লায় ব্যাংক সংখ্যা বাড়লেও প্রতিনিয়ত কমছে ট্যাঙ্ক বা পুকুর। এতে জলাধার কমায় বৃষ্টির পানিতে বিগত প্রায় দু’দশক ধরে কুমিল্লা শহরের বিভিন্নস্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে আসছে।
এই যখন অবস্থা তখন ২০১২ সালে প্রথম দফা সিটিকরপোরেশন নির্বাচন’এ প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে জলাবদ্ধতাকে প্রধান সমস্যা চিহ্নিত করে এর সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মেলেনি নগরবাসীর। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে নগরীর অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়।
এ তালিকায় রয়েছে নগরীর প্রানকেন্দ্র কান্দিরপাড় লাকসাম রোড, কান্দিরপাড় নজরুল এভিনিউ, বাদুরতলা ডাক্তারপাড়া, তালপুকুর রোড, ফয়জুন্নেছা স্কুল রোড, শিক্ষাবোর্ড এলাকা, টমসমব্রীজ এলাকা, উত্তর চর্থা, দক্ষিণ চর্থা, ঢুলিপাড়া, থিরাপুকুর পাড়, জিলা স্কুল-ষ্টেডিয়াম রোড, নুরপুর হাউজিং, নতুন চৌধুরীপাড়া, ডিসি রোড, মুরাদপুর, পার্ক রোড, রেসকোর্স, সিটিকরপোরেশনের পিছনের সড়কসহ নগরীর বিভিন্নস্থান। অনেকস্থানে বাসা-বাড়ি, দোকান-পাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়ে অসংখ্য মানুষ।
দায়িত্বশীল নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুত্র জানায়, বিগত দু’বছর ধরে জাপানী উন্নয়ন সংস্থা (জাইকার) অর্থায়নে নগরীর শাসনগাছা, রেসকোর্স, বাগিচাগাঁও, ফায়ার সার্ভিস রোড, কান্দিরপাড় নজরুল এভিনিউ, রানীরবাজার, অশোকতলা, ষ্টেশন রোড, পুলিশ লাইন, জেল রোড, ধর্মসাগরের পশ্চিমপাড়, ঝাউতলা, বাদুরতলা, মনোহরপুর, সার্কিটহাউজ রোড, আদালতের মোড়, তালপুকুর রোড, ফয়জুন্নেসা স্কুল রোড, ডাক্তার পাড়া, সদরহ্সাপাতাল রোড, ছাতিপট্টি, রাজগঞ্জ, মোগলটুলীসহ প্রায় একশ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জলাবদ্ধতা নিরশনে সিটিকরপোরেশন বক্স ড্রেন নির্মান করলেও অজ্ঞাত কারণে এসব ড্রেন পানি নিস্কাশনে কোন কাজে আসছেনা। অভিযোগ রয়েছে সিটি করপোরেশনের সুষ্ঠু তদারকির অভাবে এসকল ড্রেন অনেকস্থানেই অসমাপ্ত পড়ে রয়েছে।
আবার কোথাও ড্রেনের মাঝখানে বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখেই ঠিকাদার ড্রেন নির্মান কাজ শেষ করে ফেলেছে। আর সিটিকরপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা অজ্ঞাত কারণে সেগুলো দেখেও না দেখার ভান করায় কোন কাজে আসছেনা বহুস্থানের ড্রেনগুলো। আর এজন্যই সামান্য বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে নগরীর রাস্তাঘাট। বাড়ছে জনদুর্ভোগ। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ব্যবসায়ীরা।
Leave a Reply