সম্পূর্ণ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সরকারের কোষাগারে ১০০ টাকা এবং ৩ টাকা মূল্যের ফরম কিনে পুলিশ কনস্টেবল পদে কুমিল্লায় নিয়োগ পেয়েছে ৩০৭ জন। গতকাল সোমবার রাতে নিয়োগ প্রাপ্তদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। নিয়োগ প্রাপ্তদের মধ্যে দরিদ্র পরিবারের মেধাবী ও যোগ্যদেরই স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত করা হয়েছে।
জানা যায়, গত ১ জুলাই পুলিশ কনস্টেবল পদে প্রাথমিকভাবে ৫ হাজার পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। জেলা পুলিশ লাইন মাঠে প্রাথমিকভাবে ৫ হাজার জনের মধ্য থেকে ২ হাজার ৬৫৪ জনকে লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করা হয়। পরবর্তীতে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে ৫’শ জন মৌখিক পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ হয়। এদের মধ্য থেকে গতকাল ৩০৭ জনকে এ পদের জন্য নির্বাচিত করা হয়। রাতে জেলা পুলিশ কার্যালয়ের সামনে নিয়োগ প্রাপ্তদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। এ সময় পুলিশ সুপার সৈয়দ নূরুল ইসলাম, পদোন্নতি প্রাপ্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন, পদোন্নতি প্রাপ্ত পুলিশ সুপার সাখাওয়াত হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডিএসবি আজিমুল আহসান, ডিআইওয়ান মাহবুবুর রহমান সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। নতুন নিয়োগ প্রাপ্তদের উদ্দেশ্যে জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গিকার ছিল স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যোগ্যদের নির্বাচিত করা।
কুমিল্লা জেলা পুলিশ সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার মাধ্যমে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। যারা নতুন নিয়োগ প্রাপ্ত হবে তাদেরকে সৎ ও দুর্নীতির উর্ধ্বে উঠে কর্তব্য পালন করতে হবে। এর ফলে একটি দুর্নীতি মুক্ত সুখী ও সম্বৃদ্ধ দেশ গড়ে উঠবে।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এবার পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পরীক্ষার আগে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। নিয়োগকে কেন্দ্র করে কোন ধরনের দুর্নীতি কিংবা ঘুষের আদান-প্রদান বন্ধে জেলা পুলিশ কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ নূরুল ইসলাম ১০৩ টাকার বাইরে নিয়োগ প্রাপ্তির জন্য কেউ যাতে কারো কাছে কোন টাকা প্রদান কিংবা গ্রহণ করতে না পারে সে জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে একটি লিফলেটও বিতরণ করা হয়। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই গতকাল চূড়ান্তভাবে ৩০৭ জনকে পুলিশ কনস্টেবল পদে নির্বাচিত করা হয়।
জানাগেছে, নিয়োগ প্রাপ্তদের মধ্যে এতিম কোটায় ২জন পুরুষ, ১জন মহিলা, আনসার কোটায় ৩জন পুরুষ, মুক্তিযোদ্ধার কোটায় ৪৬জন পুরুষ, ৩জন নারী, মুক্তিযোদ্ধার পোষ্য কোটায় ৭জন পুরুষ, ১জন নারী সহ মোট ১৭৩ জন পুরুষ ও ১৩৪ জন নারী রয়েছেন। এছাড়া নিয়োগ প্রাপ্তদের অনেকেই অতি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। কারো বাবা রিক্সা চালক, কারো আবার দিন মজুর, মা চাকরী করেন স্বল্প বেতনে ইপিজেড কিংবা অন্য প্রতিষ্ঠানে, কেউবা করেন দর্জির সহকারীর কাজ, আবার কেউবা গৃহকর্মী।
আবার কারো বাবা-মা কেউ নেই, দারিদ্রতার কারণে এসএসসি পর্যন্ত লেখা পড়া করতে পারেনি, এ ধরনের যোগ্য প্রার্থীদেরকেই এবার নির্বাচিত করা হয়েছে। এ ধরনের স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পরে। এ সময় কেউ কেউ খুশিতে কেঁদে ফেলে।
পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, যারা চাকুরী পেয়েছে তারা অত্যান্ত মেধাবী এবং বেশীর ভাগই খুবই অভাব অনটনের সাথে যুদ্ধ করে এতদূর এসেছে।কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার হিসেবে বলতে পারি জেলা পুলিশ শতভাগ স্বচ্ছতা নিরপক্ষতা বজায় রেখে যোগ্যদের নির্বাচন করেছে । আমরা ফেরেশতা নই, তবে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস আমরা ভুল করেনি। আমরা সঠিক প্রার্থীকে বাছাই করতে সক্ষম হয়েছি। আজ যে তিনশ আট জন পুলিশ কনস্টেবল ট্রেইনি পদে নিয়োগ পেয়েছে তারা অদূর ভবিষ্যতে স্বচ্ছতা দক্ষতার সাথে দেশ ও জাতির সেবায় নিয়োজিত রবে বলে আমি বিশ্বাস করি । কারণ মাত্র একশ তিন টাকায় তারা চাকুরী পেয়েছে। তাই তাদেরকে কখনো দূর্নীতি স্পর্শ করবে না। আমি তাদের সর্বাঙ্গীন সফলতা কামনা করছি।
Leave a Reply