(আবু সুফিয়ান রাসেল, কুমিল্লা)
আপনার ভিটামিনের অভাব ডাক্তার বলেছে, আ-আঙ্কুর খেতে। আপনি যদি ৫ কেজি আপেল ৫ কেজি-আঙ্কুর গলায় বেঁধে পথে পথে হাঁটেন আপনার কি ভিটামিন হয়ে যাবে? এগুলো হলো ধর্মের নামে মানুষকে বোকা বানানো, একটা লেবাস ধরে মানুষকে বছরের পর বছর ধোকা দিয়ে যাচ্ছে তারা। তাবিজের মধ্যে কোন পায়দা নাই। মনের ভক্তি থেকে মানুষ তাবিজ-কবজ ব্যাবহার করে। কবিরাজ বিষয়ে জানতে চাইলে এভাবেই বলছিলেন শহরতলী দিশাবন্দের বাসিন্দা হাজী নুরু মিয়া।
গত ৩ এপ্রিল কুমিল্লা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জিনে মেরে ফেলেছে গোসল জানাজা হয়ে গেছে দাফন করে দিন, ৪ এপ্রিল শেখ ফরিদের জন্য কাঁদছে সিন্দুরিয়াপাড়া শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। গতবছর ঢাকার দোহারে হজ্ব বাবা ও বরুড়ায় বিড়ি বাবা শিরোনামে ধর্মের নামে ভন্ডামির তথ্য প্রকাশ পায় বেসরকারি টিভির অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে।২০ মে ফের জাগো কুমিল্লা প্রকাশ হয় ইমুতে চিকিৎসাদেন জ্বিন হুজুর মাহবুব শিরোনামে সংবাদ। সারাদেশে অসংখ্য এমন কবিরাজ আছে। যারা সহজ সরল মানুষকে নানা কৌশলে ফন্দি এঁটে টাকা ভোগ করছেন। ধর্ম, বিজ্ঞান ও বিবেক এ কবিরাজি চিকিৎসাকে সমর্থন করে কিনা, তা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন, তর্ক, বিতর্ক। যুগে যুগে চলে আসা কবিরাজি চিকিৎসার উৎস কোথায় থেকে?
লালসালু ধারার এ চিকিৎসার উৎস হলো বাজারের কিছু নিন্ম মানের বই। এ সকল বাংলা ভাষায় লিখা বইয়ের তালিকায় রয়েছে। আদি ও আসল লজ্জাতুন্নেসা মিশরীয় করামত সহ তাবিজের কিতাব, আদি ও আসল সোলেমানী যাদু তাবিজের কিতাব, আমল তদবীর বা তাবিজাত, আদি ও অাসল হেরজে সোলেমানী তাবিজের কিতাব, আদি ও আসল তাজ সোলেমানী
তাবিজের কিতাব, আদি ও অাসল তেলেছমতে সোলেমানী তাবিজের কিতাব আ’মলে কুরআন, সহিহ সোলমানী তাবিজাত বা এলাজে লোকমানী, আজায়েব সোলেমানী তাবিজের কিতাব ইত্যাদি নামক কিছু চটি বই।
এ ধরনের বইগুলো বাজার ছোট-বড় হিসাবে ৬০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। নিন্ম মানের কাগজে ছাপানো বইগুলো কম দামে কিনে সাধারণ মানুষ হয়ে যান, অসাধারণ ভয়ঙ্কর কবিরাজ। মানুষকে ফাঁদে ফেলে জ্বিন ভুতের ভয় দেখিয়ে তাবিজের নামে আদায় করে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। এ সকল বইয়ের সূচিতে মানুষের ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, প্রেম সমাধান, মনের আশা পূরণ, ঋণ সমস্যা, প্যারালাইসেস, জ্বিন, বিপদ, এক্সসিডেন্ট, পরীক্ষায় ভালোফল, স্বামী-স্ত্রীর অমিল, কঠিন রোগ, বালামছিবত সহ যে কোন রোগের সমাধানের তাবিজের নকশা ও ব্যবহারের নিয়ম দেওয়া আছে। কথিত কবিরাজরা এ সকল তাবিজের বইয়ের নকশাকে সাদা কাগজে লিখে ১০১, ৩১১, ৫০১, ১০১১ সহ বিভিন্ন মূল্যে হাদিয়ার নামে মানুষ থেকে টাকা আদায় করছে।
হাফেজ মাহমুদুল হাসান (ছদ্ম নাম) শহরতলীর একটি মসজিদের ইমাম ও তাবিজ বিক্রেতা। ফলাফল ভালো করার জন্য এক পরীক্ষার্থীর মায়ের নিকট ৩০১ টাকায় তাবিজ বিক্রি করেছেন। কিন্তু ২০১৭ সালের আলিম কেন্দ্রীয় পরিক্ষায় সে ইংরেজি প্রথমপত্র ও আইসিটিতে অকৃতকার্য হয়। মূলত তাবিজের কিতাবে কিছু নকশা দেওয়া থাকে, যার মধ্যে আরবি কিছু বর্ণমালা আর সংখ্যা দেওয়া থাকে।
মোগলটুলি আল কারিম লাইব্রেরির মালিক মুহা. ফয়জুল্লাহ জানান, তাবিজের কিতাবগুলা নিন্মমানের নিউজ প্রিন্ট কাগজের ছাপা হয়ে থাকে। এগুলো ছাপা হয় বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নিয়ে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে কবিরাজি চিকিৎসার ভিত্তি কি? জানতে চাইলে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ অধ্যাপক ডা. আ.ন.ম জানে আলম বলেন, অধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোথাও কবিরাজি বিদ্যা বলতে কিছু নেই। আমি কখনো এগুলোর মুখোমুখি হইনি। চিকিৎসা বিজ্ঞান কবিরাজিকে সমর্থন করে না।
এ বিষয়ে মুফতি কামাল উদ্দীন বলেন, আরবি হরফ আলিফ=১, বা =২, জিম=৩….. এগুলোকে আবজাদ হরুফ বলে। সাদা কাগজে ঘর ঘর তৈরি করে আরবি বর্ণ ও এ সকল মান লিখা হয়। আবজাদ হরুফ বলে কোন কিছু কোরঅান বা হাদীসে অাছে বলে, অামার জানা নেই।বহুদিন ব্যবহার হয়ে অাসছে। হয়তো এগুলো তাবিজ ওয়ালাদের তৈরি করা।
ভারতের দেওবন্দ মাদরাসা থেকে সদ্য বিদায়ী ছাত্র মাও. নেয়ামতুল্লাহ বলেন, তাবিজকে অারবিতে তামিমা বলা হয়। ইসলামে তাবিজ বা তামিমার কোন স্থান নেই। রাসূল (সা.) বা তাঁর সাহাবারা কখনো তাবিজ ব্যবহার করেছেন, এমন কোন দলিল নেই। তবে তাবিজ ব্যবহার নিষেধ করেছেন এমন হাদিস একাদিক। হাদিস পরিভাষা দেখে তিনি বলেন, মান অাল্লাকা তামিমাতা ফাকাদ আশরাকা, যে ব্যক্তি তাবিজ ব্যবহার করলো, সে শিরক করলো। সুতরাং জেনেশুনে যদি কেউ তাবিজ ক্রয়-বিক্রয় করে, সে মুশরিক। ইসলামে তাবিজের কবিরাজি চিকিৎসা বলতে কিছু নেই।
বরুড়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মুফতি মাও. আলী অাকবর ফারুকী জানান, যারা তাবিজ তুমারের সাথে জড়িত তাদের একাংশ কুফুরি কালামের কাজে লিপ্ত। কেউ যদি সচেতন না হয় তাহলে সে প্রতিনিয়ত ধোকা খাবে।
ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন:
Leave a Reply