অনলাইন ডেস্ক:
আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়েই চলছে বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের ক্যারিয়ার। উইন্ডিজ সফরে আবারও সেই সমালোচনা। সম্প্রতি, ‘নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের ব্যাপারে প্রশ্ন করায় সাকিব এক সমর্থককে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে মারমুখী হয়ে তেড়ে আসে।’ এমনই ক্যাপশন দিয়ে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
শুধু এই ক্যাপশনই নয়! ভিডিওটি স্পষ্ট হলেও শব্দ অস্পষ্ট হওয়ায় এ নিয়ে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন ক্যাপশন ব্যবহার করে শেয়ার দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সকলেরই মনে এখন প্রশ্ন আসলে কী ঘটেছিল ওই মুহূর্তে?
ভিডিওটিতে দেখা যায়, একজনের দিকে হঠাৎ তেড়ে গেলেন সাকিব। কী কথা বলছেন ভিডিওতে বুঝা না গেলেও সাকিবের চোখে-মুখে ঠিকরে পড়ছিল রাগ-ক্ষোভ। মেজাজ সামলাতে না পেরে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিও করেন তিনি। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন সাকিবের রাগ প্রশমিত করছিলেন বারবার।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে সাংবাদিক মিনহাজ হোসাইন ফেসবুকে লিখেছেন, এক ভক্ত সাকিবের কাছে অটোগ্রাফ চাইছিলেন। সাকিব সম্মতি দিয়ে সেলফিও তুলছিলেন। কিন্তু ভক্ত একধাপ এগিয়ে ভিডিও করতে চাইলেন, তখন সাকিব বলেন, আমি পারব না। এখানেই বাধে বিপত্তি। তখন ভক্ত ‘ভাব মারায়’ বলে মন্তব্য করলে সাকিব মেজাজ হারিয়ে তেড়ে আসেন।
ভক্তদের আবদার সামলাতে গিয়ে তারকাদের হিমশিম খাওয়াটা অবশ্য নতুন কিছু নয়। সবসময় অটোগ্রাফ কিংবা সেলফি দেওয়ার মুডেও থাকেন না তারা। কিন্তু ভক্তরা না বুঝে বাড়াবাড়ি করে ফেললে বাধে বিপত্তি। এর আগেও সাকিব আল হাসান ভক্তের এমন বাড়াবাড়ির শিকার হয়েছেন, হারিয়েছেন মেজাজও।
ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে সাকিব লিখেছেন, ‘আমার প্রিয় ভক্ত এবং অনুসারীদের উদ্দেশে কিছু কথা বলতে চাই। সম্প্রতি আমাকে নিয়ে একটি ভিডিও আপলোড করা হয়েছে, যেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের পর লবিতে আমাকে এবং আমার একজন তথাকথিত “ফ্যান”-এর সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক করতে দেখা যায়। এই ক্লিপটি সম্পূর্ণ ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করে না।
পর-পর ম্যাচ থাকায় আমি এবং আমার সহকর্মীরা বেশ ক্লান্ত ছিলাম এবং আমরা আমাদের রুমে ফিরে যাচ্ছিলাম। আমরা আমাদের নিজস্ব সরঞ্জাম এবং ব্যাগ বহন করছিলাম, তাই আমাদের হাত পূর্ণ ছিল; তখন কোনোভাবেই অটোগ্রাফ দেওয়া সম্ভব ছিল না।
আমরা সর্বদাই আমাদের ভক্তদের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করি এবং তাদের সঙ্গে ছবি তুলে, অটোগ্রাফ দিয়ে মুহূর্তগুলো ভাগ করে নেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু ভক্তদেরও বুঝতে হবে যে, আমরাও মানুষ। আমরা মাঠে একটা বিজয় অর্জনের জন্য প্রাণপণ লড়াই করি। আমাদের কি ব্যস্ত কিংবা ক্লান্ত অনুভব করার অনুমতি নেই?
আমরা আপনাদের সমর্থন বুঝি এবং সবসময় প্রশংসা করি। চেষ্টা করি আপনাদের সমর্থনের প্রতিদান যাতে আমরা মাঠে ভালো খেলার মাধ্যমে দিতে পারি। কিন্তু মাঝে মাঝে আমাদের এই কঠিন পরিশ্রম এবং কঠোর চেষ্টার সঙ্গে সবসময় নিজেকে গুছিয়ে রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ে।
আমার আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ থাকবে যে, আমাদের মধ্যে কেউ যদি আপনাদের অনুরোধ না রাখতে পারি, তবে তা ব্যক্তিগতভাবে নিবেন না। কারণ আমরা যে পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি তা হয়তো আপনি যা দেখছেন তা থেকে ভিন্ন হতে পারে। হুটহাট আমাদের পরিস্থিতি বিবেচনা না করে কিংবা আমরা কেমন মুডে আছি তা বোঝার চেষ্টা ছাড়াই কোনো সিদ্ধান্ত বা মতামত দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন না।
আমি আমার ভক্তদের অসম্ভব ভালোবাসি এবং আমি মাঠে তাদের জন্যই খেলি সেটা জাতীয় দল হোক কিংবা কোনো লিগের জন্য হোক। একই সঙ্গে আমি আমার ভক্তদের কাছ থেকে সম্মান, ভালোবাসা এবং তারা আমাকে বুঝবে এমনটাই আশা করি।
আমি জানি কিছু মানুষ, যারা হয়তো আমাকে ফলো করে অথবা করে না কিন্তু সবসময় ছোট ছোট বিষয়ে আমাকে নিচু করতে পছন্দ করে। তাদের উদ্দেশে আমি বলতে চাই, আমাদের থেকে ভালো কিছু প্রত্যাশা করতে হলে এই নিচু মানসিকতা পরিবর্তন প্রয়োজন। প্রত্যেকটা ম্যাচে আমরা এমনিতেই অনেক বেশি চাপে থাকি, নতুন কোনো চাপ প্রয়োগ না করার জন্য বিশেষ অনুরোধ করা হলো। আর এই মানসিকতার বাইরে যারা আছেন আমি সর্বদা তাদের পাশে আছি। সবার জন্য আমার তরফ থেকে ভালোবাসা রইল।’
২০১২ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের ৬ বছর পর আবার এই ফরম্যাটে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ। সোমবার (০৬ জুলাই) ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে বৃষ্টি আইনে ১৯ রানে জেতার পাশাপাশি ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয় টাইগাররা। আর এই সিরিজ জয়ে ব্যাট হাতে ১০৩ রান আর বল হাতে ৩ উইকেট নিয়ে সিরিজসেরা হন তারকা এই অলরাউন্ডার সাকিব।
Leave a Reply