নিজস্ব প্রতিবেদক:
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের লিল মিয়ার কন্যা হতদরিদ্র রিনা আক্তারের সাথে ১৮ বছর পূর্বে ওই গ্রামের প্রভাবশালী শহিদুল ইসলাম হুরণ মিয়ার পুত্র মামুন মিয়া জোরপূর্বক দৈহিক মেলামেশা হয়।
পরবর্তীতে ইসলামী শরীয়তের বিধানমতে কাবিনবিহীন বিয়ের নামে প্রতারণার জেরে রিনার গর্ভে মনির হোসেন নামে পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। বর্তমানে ওই সন্তানের বয়স ১৭ বছর। এদিকে স্বামীর অধিকার ও সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের দাবিতে ১৮ বছর ধরে সমাজপতি ও বিভিন্ন মহলের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন হত-দরিদ্র রিনা আক্তার।
একই দাবিতে কুমিল্লার আদালতে মামলা এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগসহ মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট নিজের ও সন্তানের নিরাপত্তার আবেদন দাখিলের পর প্রভাবশালীদের রোষানলের শিকার হয়েছেন রিনা ও তার সন্তান। বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লা প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে জীবনের দুঃসহ স্মৃতি ও প্রতারণার দীর্ঘ কাহিনী তুলে ধরে মা ও ছেলে দু’জন কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
অভিযোগে বলা হয়, রিনা যখন কিশোরী তখন তিনি পার্শ্ববর্তী বাড়ির প্রভাবশালী মামুন মিয়া কর্তৃক জোরপূর্বক ধর্ষণের শিকার হন। ১৩ বছর বয়সে রিনা গর্ভবর্তী হয়ে পড়লে বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়। এতে স্থানীয় মসজিদের ইমামের মাধ্যমে মামুন মিয়ার বন্ধু জাকির ভূঁইয়াসহ স্বাক্ষীদের উপস্থিতিতে ৩ লাখ টাকা দেনমোহরের ধার্য্য করে বিয়ে সম্পন্ন হলেও কাবিন হয়নি। বিয়ের সময় রিনার গর্ভের সন্তানের বয়স ছিল ৭ মাস।
বিয়ের পর একপর্যায়ে মামুন বিদেশে চলে যায় এবং রিনা পুত্র সন্তান জন্ম দেয়। বিদেশে যাওয়ার পর মামুন তার স্ত্রী ও সন্তানের খোঁজখবর নেয়নি। ২০০৭ সালে মামুন দেশে এসে দ্বিতীয় বিয়ে করে এবং রিনাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ না করে এবং সন্তান তার নয় বলে দাবি করে নানা অপবাদ দেয়। রিনা সাংবাদিকদের জানান, যতোবারই স্ত্রীর মর্যাদা ও সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের স্বীকৃতির দাবি নিয়ে স্বামীর (মামুন) বাড়ি গিয়েছি ততোবারই শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছি এবং দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বিচার পাইনি। একই দাবিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নিকট আইনী সহায়তা চেয়ে আবেদন দাখিল করলে ৩০ মে এর মধ্যে বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ওই কমিশন থেকে গত ২২ এপ্রিল মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট পত্র প্রেরণ করা হয়।
এছাড়া রিনা আক্তার স্বামীর স্বীকৃতি ও সন্তানের পিতৃ পরিচয়সহ তার উপর নির্যাতনের অভিযোগে গত ১৪ মে কুমিল্লা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ৩নং বিশেষ আদালতে মামুন মিয়া, ফুল মিয়া ওরফে টুক্কু, দুলাল মিয়া, কামাল ভূঁইয়াসহ ৭জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। আদালত এক আদেশে মুরাদনগর উপজেলার ১০নং যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে ওই অভিযোগ প্রাপ্তির ৭ কার্যদিবসের মধ্যে অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন।
রিনা অভিযোগ করে সাংবাদিকদের বলেন, মামলা ও অভিযোগ করার কারণে মামুন ও তার পক্ষের লোকজন আমাকে ও সন্তানকে প্রাণনাশ ও গুম করাসহ এলাকাছাড়া করার হুমকি দিয়ে আসছে। এতে আমার সন্তান মনির হোসেন স্কুলে যেতে পারছে না এবং আসামিরা মামলাসহ অভিযোগগুলো প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে। সন্তান ও নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে গত ২৬ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট আবেদন করেন। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন রিনার সন্তান মনির হোসেন, স্থানীয় পারভেজ ভূঁইয়া, জুয়েল ভূঁইয়া, জসিম উদ্দিন প্রমুখ।
অভিযোগের বিষয়ে মামুন মিয়া জানান, আমার বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগ ষড়যন্ত্রমূলক। রিনা আক্তার নামে ওই মহিলার সাথে আমার কোনো ধরণের সম্পর্ক কখনো ছিল না এবং তার সাথে আমার কোনো বিয়ে হয়নি এবং কাবিনও দেখাতে পারবে না।
১০নং যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাদী রিনা আক্তার আদালতের আদেশের একটি কপি আমার নিকট হাতে হাতে এনে দিয়েছে, কিন্তু আদালতের মাধ্যমে এখনো কপি পাইনি, পেলে আদালতের আদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এ বিষয়ে মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিতু মরিয়ম জানান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পত্র মোতাবেক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রেরণ করেছি। তদন্তে জেনেছি রিনা আক্তার একসময় মামুন মিয়ার বাড়িতে কাজ করতো। ওই সময় তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। সে এ বিষয়ে একসময় মামুন মিয়া মুচলেকা দিয়েছিল বলে জেনেছি। তবে তার সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া পিতৃ পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব নয়।
Leave a Reply