নিজস্ব প্রতিবেদক:
স্বেচ্ছায় রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করণে কুমিল্লায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে বেশকিছু সংগঠন, এর মধ্যে খুবই কার্যকর প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টিতে এগিয়ে এসেছেন নগরীর চাঁন্দপুর হাজী বাড়ির ছেলে মো: ফয়সাল আহম্মদ।
তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন “হিউম্যান ব্লাড ডোনার্স ক্লাব, কুমিল্লা” নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। বর্তমানে কুমিল্লা সবকটি থানায় কাজ করছে ‘হিউম্যান ব্লাড ডোনার্স ক্লাব’ এর সক্রিয় টিম। ফয়সাল আহম্মদ স্বেচ্ছায় রক্তদানের কার্যক্রম শুরু করেন নিজ আত্বীয় গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পর রক্তের জন্যে যে কত কষ্ট সহ্য করতে তা থেকে শিক্ষা নিয়ে। তার আত্বীয়ের জন্য বিরল রক্তের গ্রুপের প্রয়োজন হয়। এ সময় তিনি কুমিল্লায় ছিলেন। কোনোভাবেই রক্ত পাওয়া যাচ্ছিল না।
তখন তিনি নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন “রক্ত দরকার, ব্লাড গ্রুপ, ঠিকানা সহ”। এর কিছুক্ষন পরেই পরিচিত একজনের মাধ্যমে রক্ত পেয়ে যান তিনি। তখন ফয়সালের মনে হলো এমন একটি প্ল্যাটফর্ম করা উচিত যেটার মাধ্যমে এধরনের সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। ফয়সাল আহম্মেদ প্রথমে ফেসবুকে সংগঠিত করেন সারাদেশের সংগঠকদের, কথা বলেন দেশের প্রথম সারির স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতা সংগঠন গুলোর সাথে।
জেনে নেন, কে কিভাবে কাজ করছে।
বুঝতে পারলেন সারাদেশে রক্তদান কার্যক্রম নিয়ে তেমন কোনো কাজ হয় না। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন কুমিল্লায় ছড়িয়ে দেবেন হিউম্যান ব্লাড ডোনার্স ক্লাবের কার্যক্রম। অনলাইনের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়েও শুরু করেন বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় ও রক্তদানে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি। তার এই মহৎ কার্যক্রম দেখে কিছু গুণী ব্যাক্তি যুক্ত হলেন তাদের সাথে।
ফয়সাল তাদেরকে জানালেন রক্ত দাতাদের আরো উৎসাহিত করতে অনেক গুলো ফ্রি ক্যাম্পিং আয়োজন করার। শুধু রক্তদান ও রক্তদানে সচেতনতা বা রক্তদাতাদের সংবর্ধিত করার মধ্যে থেমে থাকেনি সংগঠনটির কার্যক্রম। কুমিল্লায় ত্রাণ বিতরণ, দেশের প্রতিকূল অবস্থান বর্ন্যাতদের ত্রাণ বিতরণ, ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প, পরিস্কার পরিছন্ন কর্মসূচি, অসহায়দের আর্থিক সহায়তা প্রদান, বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপনসহ নানা ধরনের সামাজিক ও মানবিক কার্যক্রমে সক্রিয় সংগঠনটি। বর্তমান প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে ফয়সাল আহম্মেদ জানালেন রক্তের প্রয়োজনে ফেসবুকে রোগীর যাবতীয় তথ্য ও ফোন নাম্বার সহ আমরা পোস্ট করে থাকি।
পোস্ট থেকে খুব দ্রুত রক্তদাতার সাড়া পাওয়া যেত কিন্তু এখন একদল দালাল চক্র সেই ফেসবুক পোস্ট থেকে রোগীর নাম্বার নিয়ে রোগীর লোককে রক্ত দিতে বলে এবং গাড়িভাড়া বাবদ বিকাশে টাকা চায়। টাকা পাওয়ার পর ঐ লোক ফোন বন্ধ করে দেয়।
এতে রোগী রক্তদাতার আশায় আশায় আরো মূর্ষূষু অবস্থায় পরে। তাই পোস্টকারী আগে রোগীর লোককে অবশ্যই বলে রাখা উচিত পোস্ট থেকে কেউ রক্ত দিবে বলে টাকা চাইলে বুঝে নিবেন সে দালাল চক্রের সদস্য। ফয়সাল আহম্মেদ তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, সারা কুমিল্লায় রক্তদাতাদের আমাদের ব্লাড ম্যানেজার অ্যাপসের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছি।
এছাড়া প্রত্যেক উপজেলায় কার্যকরি টিম গঠন করে রক্তদানের এই সেবা পৌঁছে দিতে চাই। রক্তের অভাবে যাতে একটি রোগীরও মৃত্যু না হয় সেই স্বপ্ন দেখছেন তিনি। তিনি এটাও মনে করেন এই প্রজন্মই কুমিল্লায় রক্তের চাহিদা সমাধান করবে।
Leave a Reply