পঞ্চগড় বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা। এ জেলার শুরু দেবীগঞ্জ উপজেলা থেকে আর শেষ তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্দায় গিয়ে। আমার কাছে তেঁতুলিয়াকেই এ জেলার সবচেয়ে সমৃদ্ধ উপজেলা মনে হয়েছে। মহানন্দা নদী ঘিরে রেখেছে পুরো উপজেলাকে। এটিই আর ইন্ডিয়ার সীমারেখা। দুই দেশের সীমান্তরক্ষীরা দাঁড়িয়ে আছে অতন্দ্র প্রহরীরর মত। সীমান্ত ঘেঁষা ডাক বাংলোতে উঠলাম আমরা।
বেশ নিরিবিলি আর সাজানো। অনেক পুরাতন আর রাশভারী। সারাদিন ভ্রমণ ক্লান্তি শেষে ঘুমোতে গেলাম, সকালে উঠেতো তাজ্জব!!! অস্ত্রহীন হয়ে শুভ্রতার চোরা আভা নিয়ে তাঁকিয়ে আছে কাঞ্চনজংঘা পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম পর্বত। অজান্তেই গাইতে লাগলাম অঞ্জন দত্তের সেই সুর কাঞ্চনজংঘা, কাঞ্চনমন। যে পর্বত তাঁকে কলকাতার বাহারি জীবন থেকে নিজের কাছে এনেছে প্রবলভাবে।অঞ্জন সেই নাগরিক জীবনকে তুলনা করেছেন সিমেন্টের জংগলের সাথে আর কাঞ্চনের পাদদেশের সুনীল বস্তিতে যাবার তীব্রতা প্রকাশ করেছেন গানের প্রতিটি লাইনে। সকল মানুষকে কাছে টানে কাঞ্চন তার বহুমাত্রিকতা দিয়ে। তার শীতল শুভ্রতায় আমি হারিয়েছি বারবার।
তিনটি তেতুঁল গাছ বেশ জায়গা দখল করে আছে তেঁতুলিয়ার মূল শহরে। এ ত্রয়ী বৃক্ষের জন্য-ই তেঁতুলিয়া নামকরণ। এখানকর রাস্তার দুইধার যেন সবুজ গালিচার সমান্তরাল মালভূমি। দিন দিন বাড়ছে চাষাবাদের পরিধি। এতে করে প্রচলিত কৃষিজমি কমে যাচ্ছে। এভাবে চললে খাদ্যের একটা সংকট হতে পারে। চা পতিরা কিনে নিচ্ছেন ধানের জমি পানির দরে। স্থানীয়রা চা শ্রমিকের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করছেন ক্রমান্বয়ে ভূমিহীন হয়ে। শিল্পপতিদের আয় ক্রমবর্ধমান হলেও অভাবে সমান্তরাল সাধারণের জীবন।
মহানন্দা নদীর পাড়ে জন্মানো দুই বিশেষ প্রজাতির বাঁশ জন্ম নেয়। একটি প্রজাতির কঞ্চি নেই আর একটি কঞ্চিবহুল। কঞ্চিবহুল
বাঁশ চিকন আর হলুদ। নদী শুষ্ক হচ্ছে দ্রুত। হাঁটু পানিতে নূড়ি কুড়িয়ে এ পাড়ে নিয়ে আসছে নূড়ি শ্রমিকরা। বিএসএফ প্রতিনিয়ত তাড়া করলেও তাতে তাদের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। ৩৯/৪০ জনে বিভক্ত এক একটি দল। এখানকার শ্রমে নারী পুরুষের সহঅবস্থান। বর্ষায় জল যৌবনের কারণে পাথর সংগ্রহ দূরহ। নদীর ধারেই পশ্বিমবংগের শিলিগুড়ি জেলা। শুকনো সময়ে এ পাড় হতে ওপাড়ে হেঁটে যেতে ৫/৬মিনিট লাগলেও শ্রমিকদের কেউ জানেনা ওপাড়ে কি আছে। না জানার পথে বাদ সেদেছে কাঁটাতারের বেড়া। এ বেড়াই সীমাবদ্ধ করেছে পদের স্বাধীনতা। খুব খারাপ হলো মন।
লোপা মুদ্রার সুরে গাইতে চাইলাম
“ঠিক যেখানে দিনের শুরু অন্ধকালো রাত্রি শেষ
মন যতদূর চাইছে যেতে ঠিক ততদূর আমার দেশ।
এ কাঁটাতার জংগী বিমান, এ পতাকা রাষ্ট্র নয়
দেশ মানে বুক আকাশ জোড়া ইচ্ছে হাজার সূর্যোদয়।”
এখানে এখনো অভাব আছে, ক্ষুধা আছে, স্বপ্ন চুরমারের গ্লানি আছে তথাপিও জনবাদ্ধব ও লাগসই উন্নয়নের চোখে পড়ার মতো ছোঁয়া নেই
লেখক
মুহিবুল হক ছোটন
সহকারী অধ্যাপক
অর্থনীতি বিভাগ
ফিরোজপুর ভান্ডারিয়া সরকারী কলেজ
Leave a Reply