অনলাইন ডেস্ক:
২০ ওভারের ম্যাচে ২৩৮ রানের লক্ষ্য। খুলনা টাইটান্সকে আসলে ম্যাচটা হারিয়ে দিয়েছেন বোলাররাই। তবে ব্যাটসম্যানদের দিকে হয়তো সমর্থকরা তাকিয়ে ছিলেন, যদি লড়াইটা অন্ততঃপক্ষে করতে পারেন। সেটা আর হলো না।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে খুলনাকে ৮০ রানের বড় ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। এই জয়ে এক লাফে পয়েন্ট তালিকার এক নাম্বারে উঠে এসেছে ইমরুল কায়েসের দল।৯ ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের জয় এখন ৬টি। ১২ পয়েন্ট নিয়ে এখন শীর্ষে তারা। দুই নাম্বারে থাকা মুশফিকুর রহীমের দল চিটাগং ভাইকিংসও সমান ম্যাচে সমান পয়েন্ট পেয়েছে। তবে রানরেটে পিছিয়ে রয়েছে তারা।
বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে খুলনার শুরুটা ভালোই ছিল। ব্রেন্ডন টেলর আর জুনায়েদ সিদ্দিকী ৩৩ বলের উদ্বোধনী জুটিতে তুলেন ৫৫ রান। ২৪ বলে ২৭ করে মেহেদী হাসানের শিকার হন জুনায়েদ। এরপরই ম্যাচ থেকে একেবারে ছিটকে পড়ে খুলনা।
টেলর ৫০ করলেও তার ৩৩ বলের ইনিংসটা আসলে দলের চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না। কার্লোস ব্রেথওয়েটের ১৩ বলে ২২ রানও কাজে আসেনি। শেষ পর্যন্ত ওয়াহাব রিয়াজের দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিকে ৭ বল বাকি থাকতে ১৫৭ রানেই গুটিয়ে যায় খুলনার ইনিংস।
ওয়াহাব ১৪ রান খরচায় নেন ৩টি উইকেট। শহীদ আফ্রিদিও নেন ৩ উইকেট। এছাড়া একটি করে উইকেট নেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মেহেদী হাসান আর থিসারা পেরেরা।
এর আগে, ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান তারকা এভিন লুইসের ঝড়ো ব্যাটে খুলনার বোলারদের তুলোধুনো করে ২৩৭ রানের বিশাল সংগ্রহ তুলে কুমিল্লা। যা কি-না বিপিএল ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ।
হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারণে মাঝের চার ম্যাচ খেলতে পারেননি লুইস। আজ মাঠে ফিরে ইনিংসের তৃতীয় বলেই আবারো পেয়েছিলেন হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট। কিন্তু তাতে দমে যাননি তিনি। এবারের বিপিএলের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসে করেছেন অপরাজিত ১০৯ রান।
টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা রয়ে সয়ে করেন দুই ওপেনার এভিন লুইস এবং তামিম ইকবাল। তবে তামিমের তুলনায় বেশ সাবলীল ছিলেন লুইস। শুরু থেকেই বাউন্ডারি হাকাচ্ছিলেন নিয়মিত বিরতিতে।
ইনিংসের অষ্টম ওভারে পরপর দুই বলে তামিম ইকবাল ও এনামুল হক বিজয়কে ফিরিয়ে কুমিল্লার রানের চাকা ধীর করার কার্যকর প্রয়াস নেন খুলনা অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ২৯ বলে ২৫ রান করেন তামিম, রানের খাতাই খুলতে পারেননি এনামুল।
পরে মাহমুদউল্লাহর ওভার থেকেই ঝড়টা নামান লুইস-ইমরুল। প্রথম ১১ ওভার শেষে কুমিল্লার সংগ্রহ ছিলো ২ উইকেটে ৮৩ রান। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের করা ১২তম ওভার থেকে ১টি করে চার-ছক্কার মারে ১৭ রান নেন লুইস। ডেভিড উইজের করা পরের ওভারেও আসে ১৭ রান। এই ওভারে ২টি চারের সঙ্গে ১টি ছক্কাও হাঁকান ইমরুল।
মোহাম্মদ সাদ্দামের করা ১৪তম ওভারটিতে মূল ঝড় বইয়ে দেন লুইস। ৪টি বিশাল ছক্কার মারে নিয়ে নেন ২৮ রান। শরীফুল ইসলাম করতে আসেন ১৫তম ওভার। প্রথম দুই বলে ১টি করে চার-ছক্কা মেরে ১০ রান নিয়ে পরের বলে আউট হন ইমরুল। তবে শেষে তিন বলে আরও ১টি করে চার-ছক্কা হজম করে মোট ২২ রান খরচ করেন শরীফুল।
১১ ওভার শেষে কুমিল্লার সংগ্রহ যেখানে ছিলো ২ উইকেটে ৮৩, সেখানে ১৫ ওভারে তাদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ১৬৭ রান। অর্থাৎ প্রথম ১১ ওভারে ৮৩ রান নেয়া কুমিল্লা পরের ৪ ওভারেই নেয় ৮৪ রান। ইমরুল ২১ বলে ৩৯ করে আউট হলেও এভিন লুইস ছিলেন নিজের সেঞ্চুরির অপেক্ষায়।
তবে ১৬তম ওভারে থিসারা পেরেরা এবং শহীদ আফ্রিদির উইকেট তুলে নিয়ে খুলনা শিবিরে স্বস্তি ফেরান কার্লোস ব্রাথওয়েট। কিন্তু একপ্রান্তে লুইস ঠিকই খেলতে থাকেন মারমুখী ভঙ্গিতে। পায়ের হ্যামস্ট্রিংয়ের ইনজুরির কারণে খেলতে সমস্যা হলেও ছক্কাবৃষ্টি থামাননি তিনি।
ইনিংসের ১৮তম ওভারেই দলীয় দুইশ পূরণ করে ফেলে কুমিল্লা। আর শেষ ওভারে গিয়ে বিপিএল ক্যারিয়ারে নিজের দ্বিতীয়, চলতি আসরে চতুর্থ এবং সবমিলিয়ে বিপিএলের ১৬তম সেঞ্চুরিটি করেন এভিন লুইস। ৪৭ বলে ৫ চার ও ৯টি বিশাল ছক্কার মারে নিজের শতক পূরণ করেন তিনি।
এর আগে ২০১৫ সালের ১ ডিসেম্বর বরিশাল বুলসের হয়ে এই জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামেই ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে ৬৫ বলে ৭ চার এবং ৬ ছক্কার মারে ১০১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন লুইস। এবার সেই ইনিংসকেও ছাড়িয়ে ৪৯ বলে ৫ চার ও ১০ ছক্কার মারে ১০৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেললেন তিনি।
ষষ্ঠ উইকেটে লুইসকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন শামসুর রহমান। ২৪ বলে ৫৯ রানের এ জুটিতে ১ চার ও ২ ছক্কার মারে ১৫ বল থেকে ২৮ রান করেছেন তিনি। ইনিংসের শেষ তিন বলে মাত্র ২ রান নিতে পারায় রংপুর রাইডার্সের করা ২৩৯ রানের রেকর্ডটি ভাঙতে পারেনি কুমিল্লা।
Leave a Reply