অনলাইন ডেস্ক:
বায়েজীদ হাসানের বয়স যখন এক বছর তখন হঠাৎ করে তার পাতলা পায়খানা শুরু হয়। এখন তার বয়স আড়াই বছর। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর পরও স্বাস্থ্যের কোনো উন্নতি হয়নি তার। বরং দিন দিন স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে। শুকিয়ে বুকের হাড় বের হয়ে অনেকটা বৃদ্ধের আকার ধারণ করেছে। ঝুলে গেছে শরীরের চামড়াও।
গাজীপুর জেলার শ্রীপুর পৌর এলাকার লোহাগাছ গ্রামের শফিকুল ইসলাম-শেফালী আক্তার দম্পত্তির একমাত্র সন্তান বায়েজীদ। বাবা-মায়ের অনেক আদর সন্তান বায়েজীদের শরীরে এ বয়সেই বাসা বেঁধেছে অজানা রোগ। ছেলের চিকিৎসা করতে ভিটেমাটি ও একটি বসত ঘর বিক্রি করেও সুস্থ করতে পারেননি তার পরিবার।
সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব বায়েজীদের পরিবারের এখন স্থান হয়েছে রেলওয়ের জমিতে। তার পরিবারের ইচ্ছা অন্যান্য শিশুদের মতো বায়েজীদ স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করবে, পড়ালেখা করে মানুষের মতো মানুষ হবে। কিন্তু দরিদ্র এ পরিবারে সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে যাচ্ছে রোগের কারণে। মৃত্যুর পথযাত্রী বায়েজীতকে সুস্থ করতে চিকিৎসার জন্য এখন বিত্তবানদের দিকে তাকিয়ে আছে তার পরিবার।
বায়েজীদের বাবা শফিকুল ইসলাম পৌর এলাকার মাওনা চৌরাস্তার বর্ণমালা কিন্ডার গার্টেনের দপ্তরি। মা শেফালী বেগম স্থানীয় একটি কারখানার আয়া।
বায়েজীদ হাসানের মা শেফালী বেগম জানান, বায়েজীদের বয়স যখন এক বছর তখন হঠাৎ এক বিকেলে তার পাতলা পায়খানা শুরু হয়। পরে তাকে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। তবুও তার স্বাস্থ্যের কোনো উন্নতি না হওয়ায় পরে তাকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। এক পর্যায়ে তার স্বাস্থ্য শুকিয়ে যেতে থাকে। পরে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ঢাকার একাধিক হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হলেও কোনো উন্নতি হয়নি। আর এ দেড় বছর বায়েজীদকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে পরিবারটি। একমাত্র বসবাসের থাকার ভিটেমাটি বিক্রি করে এখন চিকিৎসা করাতে গিয়ে তাদের স্থান হয়েছে রেলওয়ের জমিতে। বাড়ি বিক্রির পর রেলওয়ের জমিতে তৈরি করা একটি টিনসেড ঘরও বিক্রি করতে হয়েছে তাকে। তবুও তার সঠিক চিকিৎসা হয়নি।
শনিবার দুপুরে বায়েজীদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শ্রীপুর-লোহাগাছ সড়কের ভিকার ইলেকট্রনিক্স নামক কারখানার সামনে ভাঙাচোরা একটি বাড়িতে তাদের বসবাস। পেটের তাগিদে প্রতিদিন সকালেই বাবা চলে যান পৌর এলাকার বর্ণমালা কিন্ডার গার্টেন নামক স্কুলে আর মা চলে যান বাড়ির পাশে ভিকার ইলেকট্রনিক্স নামক কারখানায়। সারাদিন দাদি আম্বিয়া খাতুনই লালন পালন করে থাকেন বায়েজীদকে।
দাদি আম্বিয়া খাতুন জানান, খুব সুন্দর ছিল শফিকুলের পরিবার। হঠাৎ এ রোগটি তার পরিবারকে ধ্বংসের দারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছে। সম্বল বলতে যা ছিল তার সবই শেষ করেছে। শেষমেষ মা শেফালী বেগমও সন্তানের চিকিৎসার টাকা যোগাড় করতে স্থানীয় ভিকার ইলেকট্রনিক্সে কাজ নিয়েছেন।
বায়েজীদের বাবা শফিকুল ইসলাম জানান, এ পর্যন্ত প্রায় চার লাখ টাকা খরচ করেছেন। কিন্তু কোনো রোগে আক্রান্ত সেটি এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। যে যেভাবে বলেছেন সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন ছেলেকে সুস্থ করে তুলতে। কিন্তু চিকিৎসা করাতে গিয়ে এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন তিনি। নিজের সন্তানকে বাঁচাতে তিনি দেশের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রোগটির ব্যাপারে এনাম মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু জানান, এ রোগটি সম্ভবত (Severe Acute Malnutrition) যা সাধারণত হতদরিদ্র পরিবারের মধ্যে হয়ে থাকে। আর এখানে শিশুটি পুষ্টির অভাবে এ রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছে। চিকিৎসার মাধ্যমে রোগটি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। অন্যথায় ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হবে শিশুটির জীবন।
Leave a Reply