অনলাইন ডেস্ক:
অপূর্ণাঙ্গ যৌনাঙ্গ নিয়ে জন্ম নেয়া হিজড়া হিসেবে পরিচিত তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলোর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি মানবিক সেটা বলা যাবে না। তবে শৈশব থেকেই নিজেদের অপাংক্তেয় ভাবতে বাধ্য হওয়া মানুষগুলো পড়াশোনা করে স্বাভাবিক মানুষের মতো জীবিকার পথে খুব বেশি আগায় না।
আর আমাদের দেশে জীবিকার সংস্থান না থাকায় মানুষের কাছ থেকে সহায়তা তুলেই বাঁচতে হয় তাদের। আর এই কাজ করতে গিয়ে বাসসহ গণপরিবহন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এমনকি বাসা বাড়িতেও হানা দেয় তারা। আর তাদের আচরণে সাধারণ মানুষও নানা সময় বিরক্তি প্রকাশ করে।
এবার এই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অঙ্গীকার করেছেন, আর তারা পার্ক ও রাস্তাঘাটে চাঁদাবাজি করবে না। তবে শিশুর জন্মের পর বাড়ি থেকে বকশিশ গ্রহণের বিষয়টি তারা আপাতত ছাড়তে পারবেন না।
শুক্রবার (১০ আগস্ট) সকালে হিজড়াদের বিভিন্ন দলের নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় তারা এই অঙ্গীকার করেন।
পরে রাজধানীর তেজকুনি পাড়ার নিজ বাসায় ওই অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সাংবাদিকদের বেশকিছু প্রশ্নের জবাব দেন মন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তারা আমার কাছে শপথ নিয়েছে। তারা পার্ক ও রাস্তাঘাটে চাঁদাবাজি করবে না।’
‘তাদের জন্য আমরা একটা রূপরেখা করেছি। তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চাইলে আমাদের পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতা করা হবে।’
তবে কোনো বাসায় নতুন সন্তান জন্ম নিলে তারা আগের মতোই বকশিশ গ্রহণ করবেন বলে জানান হিজড়া নেতারা। তবে এ ক্ষেত্রে জোর জবরদস্তি করা হবে না বলেও তারা অঙ্গীকার করেন।
বর্তমান সরকার এই মানুষদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে চাইছে। তাদেরকে ভোটাধিকার দেয়া, প্রশিক্ষণ দিয়ে আত্মকর্মসংস্থান ও বিভিন্ন চাকরিতে নিয়োগ দেয়ার উপযোগী করে তুলতে নানা উদ্যোগও নিয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘হিজড়ারা আমাদেরই সন্তান। তারা কীভাবে চলবে, কীভাবে ভবিষ্যতে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে নিজের আয় নিজেই করে একটা ভালো মানুষ, উপযুক্ত নাগরিকের মতন চলবে, সে জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি রূপরেখা আমাদেরকে দিয়েছেন। সে অনুযায়ী কাজও হচ্ছে।’
‘আমাদের হিজড়া সম্প্রদায়, তারাও এ বিষয়ে একাত্মতা প্রকাশ করে তারাও আমাদেরকে সহযোগিতা করছেন।’
‘আমরা আগে দেখেছি তাদের জীবিকার জন্য নানা ধরনের পন্থা তারা অবলম্বন করত। আজকে দেখেছেন এই সমস্ত পন্থা ছেড়ে তারা একটা সুন্দর জীবন যাপনের জন্য তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’
বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সেটাও জানান মন্ত্রী। বলেন, ‘বলেছি, আপনারা কে কী করতে চান, আপানার জানাবেন যাতে করে আমরা এনজিওদের মাধ্যমে আপনাদের সেই জীবিকার সন্ধানে সহযোগিতা করতে পারি।’
মারজান নামে একজন হিজড়াদের মূল ধারায় নিয়ে আসতে কাজ করছেন এবং তার উদ্যোগেই এই বৈঠক হয়। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাকেও ধন্যবাদ জানান।
সরকারের পক্ষ থেকে হিজড়াদের জন্য কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নও ছিল সাংবাদিকদের। জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘এটার জন্য একটা ডিফারেন্ট মিনিস্ট্রি আছে। তারা কাজ করছে। …আমার সম্পূর্ণ জানা নেই কোন পর্যন্ত এগিয়েছে।’
‘আমি সেটা বলেছি যেটা আইনশৃঙ্খলার জন্য প্রয়োজন। তারা আমাদেরকে বলে গেলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য তারা আমাদেরকে সহযোগিতা করবেন।’
Leave a Reply