নিজস্ব প্রতিবেদক
র্যাংগস ইলেক্ট্রনিক্স লিমিটেডের করা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের মামলায় জামিন পেয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কুমিল্লা জোনাল ইনচার্জ মাসুদ ইবনে করিম। হাইকোর্টের বিচারপতি মো: আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
গত ৩১ জুলাই কুমিল্লার কোতয়ালী মডেল থানায় মাসুদ ইবনে করিমের বিরুদ্ধে ১২ কোটি ১৫ লাখ ১৪ হাজার ৮৩০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করে মামলা দায়ের করে র্যাংগস ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড। অভিযোগে বলা হয় ১ জুলাই, ২০১৯ থেকে ২০ জুলাই, ২০২২ সাল পর্যন্ত নগদ টাকা ও গাড়ী সহ তিনি এই অর্থ আত্মসাত করেন। মামলার প্রেক্ষিতে গত ১৭ আগস্ট মাসুদ ইবনে করিমকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পরে কুমিল্লা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নির্দেশে দুই দিনের রিমান্ডে নেয়। রিমান্ড প্রতিবেদনে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেছেন, ডিলারদের কাছে মালামাল না পৌঁছেই অনেক সময় র্যাংগস কর্তৃপক্ষ মাসুদ ইবনে করিমের হিসাবে বকেয়া টাকা জমা দেখিয়েছে। সেসবের ভিত্তিতে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। তা ছাড়া বাদিপক্ষ তাদের অভিযোগের সপক্ষে কোনো কাগজপত্র দাখিল করতে পারেনি বলেও রিমান্ড প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
কুমিল্লা জজ কোর্টের এডভোকেট মোশারফ হোসেন টিটু বলেন, মাসুদ ইবনে করিমের হয়ে হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন তাঁর আইনজীবি এডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও এডভোকেট হুমায়ুন বাশার। গত ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আবুল হাশেম, সহকারি এটর্নি জেনারেল মাহফুজুর রহমান, সৈয়দা জাহিদা সুলতানা ও মির্জা মো. শোয়েব মুহিত। শুনানি শেষে আদালত মাসুদ ইবনে করিমকে জামিন মঞ্জুর করেন।
মাসুদ ইবনে করিম জানান, গত ২২ বছর যাবৎ র্যাংগস ইলেকট্রনিক্স লিমিটেডে কর্মরত আছি। বেশ কয়েক বছরই আমি কোম্পানির সেরা কর্মীর পুরস্কার পেয়েছি। ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির প্রয়াত চেয়ারম্যান আখতার হোসেন তাঁকে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য একটি গাড়ি উপহার দেন আমাকে, যেটির কিস্তির টাকা প্রতিমাসে আমার বেতন থেকে কেটে নেওয়া হয়। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের পর গাড়িটি আমার মালিকানায় চলে যাওয়ার কথা। এ সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণ আইনজীবিরা আদালতে জমা দিয়েছেন। তা ছাড়া ২০১৯ থেকে ২০২২– এই তিন বছর ধরে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটলে র্যাংগসের অডিট প্রতিবেদনে কেন সেটি আরো আগেই ধরা পড়ল না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন আইনজীবিরা।
ওদিকে গত কয়েক মাসে ঢাকা সহ দেশের আরো কয়েকটি স্থানে র্যাংগস ইলেকট্রনিক্সের বিরুদ্ধে নকল পণ্য বিক্রির মামলা হয়েছে। এর আগে মাসুদ ইবনে করিমও কোম্পানীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে নকল পণ্য বিক্রি ও ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণার প্রতিবাদ করেছিলেন। অভিযোগ আছে, এরপর থেকেই ঢাকাস্থ র্যাংগস ইলেকট্রনিক্সের প্রধান কার্যালয় থেকে প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাঁকে বিভিন্ন হুমকি-ধামকি ও মামলার ভয় দেখিয়ে আসছেন। আইনত মাসুদ ইবনে করিম এখনো র্যাংগসে চাকুরিরত হলেও গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে তাঁকে বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটি। কোম্পানীর এরকম অসহযোগিতামূলক আচরণ ও হুমকি-ধামকির কথা উল্লেখ করে মাসুদ ইবনে করিম গত ১৮ মার্চ কুমিল্লার কোতয়ালী সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
Leave a Reply