অনলাইন ডেস্ক:
জঙ্গি সম্পৃক্ততায় কুমিল্লা ও দেশের অন্য অঞ্চল থেকে বাড়ি ছেড়ে যাওয়া চারজনসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকা থেকে বুধবার তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বৃহস্পতিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এক মাসের বেশি সময় ধরে কুমিল্লার সাত শিক্ষার্থী নিখোঁজের মধ্যে এমন তথ্য জানাল র্যাব।
নিখোঁজ শিক্ষার্থীরা হলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ইমরান বিন রহমান ও সামি; কুমিল্লা সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম ও নিহাল; ভিক্টোরিয়া কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ইমতিয়াজ আহমেদ রিফাত, একই কলেজের তৃতীয় বর্ষের আমিনুল ইসলাম আলামিন ও ঢাকা ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে অনার্স শেষ করা নিলয়।
গ্রেপ্তারের বিষয়ে কী জানাল র্যাব
ব্রিফিংয়ে র্যাবের কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গত ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর এলাকা থেকে ৮ তরুণ নিখোঁজ হন। ওই ঘটনায় ২৫ আগস্ট কুমিল্লার কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি হয়।
র্যাব নিখোঁজ তরুণদের উদ্ধার ও জড়িতদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। তদন্তে জানা যায়, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে তরুণরা ঘর ছাড়েন। গত ৬ সেপ্টেম্বর ঘর ছাড়ার প্রস্তুতিকালে চার তরুণকে হেফাজতে নিয়ে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয় র্যাব।
এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১১-এর অভিযানে মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকা থেকে পটুয়াখালীর হোসাইন আহম্মদ, মো. নেছার উদ্দিন ওরফে উমায়ের ও বণি আমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া নিরুদ্দেশ কুমিল্লার তরুণ ইমতিয়াজ আহমেদ রিফাত, মো. হাসিবুল ইসলাম, গোপালগঞ্জের রোমান শিকদার ও পটুয়াখালীর মো. সাবিতকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
বাহিনীর ভাষ্য, নব্য জঙ্গি সংগঠনের তিন ধরনের প্রচারপত্র, বিস্ফোরক তৈরির নির্দেশিকাসংবলিত পুস্তিকা, নব্য জঙ্গি সংগঠনের কর্মপদ্ধতি (খসড়া মানহায), উগ্রবাদী বই ‘নেদায়ে তাওহীদ’-এর ৪ কপি, জিহাদি উগ্রবাদ ভিডিও-সংবলিত একটি ট্যাব উদ্ধার করা হয়।
ঘরছাড়া একজন ফিরে আসায় খোঁজ মিলে বাকিদের
র্যাব জানিয়েছে, কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ ৮ তরুণের মধ্যে শারতাজ ইসলাম নিলয় নামের একজন ১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কল্যাণপুরের নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। র্যাব ফিরে আসা নিলয়কে তার পরিবারের হেফাজতে রেখে বাবি ৭ সদস্য ও জড়িত অন্যদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে।
পরে র্যাব জানতে পারে, গত ২৩ আগস্ট সকাল ১০টায় নিলয়সহ নিখোঁজ ৫ তরুণ নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে কুমিল্লা টাউন হল এলাকায় আসেন। পরবর্তী সময়ে সোহেলের নির্দেশনায় তারা দুই ভাগ হয়ে লাকসাম লেভেলক্রসিংয়ের কাছে হাউজিং এস্টেট এলাকার উদ্দেশে যাত্রা করে। নিলয়, সামি ও নিহাল একত্রে যায়, কিন্তু ভুলবশত তারা চাঁদপুর শহর এলাকায় চলে যায়। তারা ভুল বুঝতে পেরে রাতে একটি মসজিদে অবস্থান করলে কর্তব্যরত পুলিশ তাদের সন্দেহজনক আচরণের কারণে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
পরবর্তী সময়ে দায়িত্বরত পুলিশ তাদের পাশের একটি হোটেলে রেখে যায় এবং পরদিন বাসায় চলে যেতে নির্দেশ দেয়। তারা রাতের বেলা হোটেল থেকে কৌশলে পালিয়ে যান। পূর্ব নির্ধারিত জায়গায় গেলে সোহেল ও অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি তাদের লাকসামের একটি বাড়িতে নিয়ে যান। ওই বাড়িতে আগে থেকেই বাকি তিনজন অবস্থান করছিলেন।
খন্দকার আল মঈন জানান, পরবর্তী সময়ে নিলয়, নিহাল, সামি ও শিথিলকে কুমিল্লা শহরের একটি মাদ্রাসার মালিক নিয়ামত উল্লাহর কাছে পৌঁছে দেয় সোহেল। নিয়ামত উল্লাহর তত্ত্বাবধানে ১ দিন থাকার পর সোহেল চারজনকে নিয়ে ঢাকায় আসে এবং নিহাল, সামি ও শিথিলকে অজ্ঞাত ১ ব্যক্তির কাছে বুঝিয়ে দিয়ে নিলয়কে পটুয়াখালীর একটি লঞ্চের টিকিট কেটে পটুয়াখালীতে পাঠায়।
নিলয়কে গ্রহণ করে স্থানীয় এক মাদ্রাসায় নিয়ে যান পটুয়াখালীতে গ্রেপ্তার বনি আমিন। গ্রেপ্তার হুসাইন ও নেছার ওরফে ওমায়েরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। নিলয়কে ৩ দিন তার বাসায় রাখে বনি আমিন। তার বাসায় অতিথি আসায় পরবর্তী সময়ে নিলয়কে হুসাইনের মাদ্রাসায় রেখে আসে। নিলয় মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর কল্যাণপুরে নিজ বাড়িতে ফিরে আসে।
নিলয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী বনি আমিনকে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। বনি আমিনের তথ্য অনুযায়ী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এলাকা থেকে নেছার উদ্দিন ওরফে উমায়েরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হুসাইন আহমদ, রিফাত, হাসিব, রোমান শিকদার ও সাবিতকে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তার হাসিব ও রিফাত এক বছর আগে কুমিল্লার কোবা মসজিদের ইমাম হাবিবুল্লাহর কাছে সংগঠনের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে ধারণা পান। পরবর্তী সময়ে হাবিবুল্লাহ তাদের উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করে ফাহিম ওরফে হাঞ্জালার কাছে নিয়ে যান।
ফাহিম তাদের কুমিল্লার বিভিন্ন মসজিদে নিয়ে গিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে মুসলমানদের ওপর নির্যাতনসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাত্ত্বিক জ্ঞান দিতেন এবং ভিডিও দেখাতেন। এইভাবে তাদেরকে সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিতে পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়ে আগ্রহী করে তুলে।
র্যাব জানায়, রোমান স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য গত ৪০ দিন আগে নিরুদ্দেশ হন এবং গ্রেপ্তার সাবিত ২ মাস আগে পটুয়াখালী থেকে নিখোঁজ হন।
বাহিনীর ভাষ্য, সোহেল নামক ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া তরুণদের সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতির জন্য প্রশিক্ষণ নিতে পটুয়াখালী ও ভোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়। নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণদের বিভিন্ন সেইফ হাউজে রেখে পটুয়াখালী এলাকার সিরাজ ওরফে রবির তত্ত্বাবধানে পটুয়াখালী ও ভোলার বিভিন্ন চর এলাকায় সশস্ত্র হামলা, বোমা তৈরি, শারীরিক কসরত ও জঙ্গিবাদবিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হতো।
সূত্র: নিউজ বাংলা
Leave a Reply