অনলাইন ডেস্ক:
আলোচিত ওয়ান-ইলেভেনে বিএনপিতে যে ভাঙন ধরেছিল, আবারো তেমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে কি না, তা নিয়ে চিন্তিত বিএনপির শীর্ষ নেতারা৷ বেশ কিছুদিন ধরেই দলটির অনেক নেতাকর্মীর ওপর চলছে নজরদারি।পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বেশ কয়েকজনের গতিবিধিকেও সন্দেহের চোখে দেখছে বিএনপি।
এরই মধ্যে দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে দলের দুই ভাইস-চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও শওকত মাহমুদকে বিএনপির শোকজ করার ঘটনায় নানামুখী জল্পনা-কল্পনা চলছে খোদ দলটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে।
জানা যায়, সাংগঠনিক বিষয়ে দলীয় শৃঙ্খলা না মানার কারণে হাফিজ উদ্দিন ও শওকত মাহমুদকে শোকজ করা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও সেটা পালনে অপারগতা প্রকাশ করেন হাফিজ উদ্দিন। বিশেষ করে, জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হলেও তিনি তা করতে সরাসরি অস্বীকৃতি জানান।
এছাড়া সমপ্রতি একাধিকবার প্রকাশ্যে দলের হাইকমান্ডের বিরুদ্ধে সমালোচনামূলক বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। একারণে তাকে শোকজ করা হয়েছে। আর বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সাবেক সভাপতি ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের প্রাক্তন সভাপতি শওকত মাহমুদকে শোকজ করা হয়েছে কুমিল্লায় নিজ এলাকায় দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কাজ করায়।
দলের নাম ব্যবহারের মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের বিভ্রান্ত করে শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে রাজধানীর পল্টনে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালনের অভিযোগে রয়েছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও শওকত মাহমুদের বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে না, সে বিষয়ে শওকত মাহমুদকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এবং হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে পাঁচ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে।
বিএনপির একাধিক নেতা নিশ্চিত করেন, ওই বিক্ষোভের কথা জানতে পেরে, সঙ্গে সঙ্গে সেখানে লোক পাঠিয়ে সবাইকে সরে যেতে বলা হয়েছে। এমনকি লন্ডনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানও উদ্বিগ্ন হয়েছেন। কারা এসব করছেন, সেটা খতিয়ে দেখতে বলেছেন।
গত ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের স্বাক্ষরে দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী কার্মকাণ্ডের অভিযোগ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিনকে ৫ দিন ও শওকত মাহমুদকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়।
এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, দলের শোকজের চিঠি পেয়েছি। চিঠির উত্তর প্রস্তুত করছি। শনিবার সংবাদ সম্মেলনে নিজের অবস্থান তুলে ধরব।
শোকজের কারণ সম্পর্কে জানা যায়, সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব নূর হোসাইন কাসেমীর নামাজে জানাজার পরপরই রাজধানীর গুলিস্তান ও পল্টন এলাকায় সরকারের পদত্যাগ দাবিতে পেশাজীবী পরিষদের ব্যানারে হঠাৎ বিক্ষোভ ও অবস্থানের কারণেই এই শোকজ করা হয়। হঠাৎ এই বিক্ষোভ ও অবস্থানের বিষয়ে আগে থেকে কিছুই জানতো না বিএনপির হাইকমান্ড। এই বিক্ষোভের বিষয়ে নানা মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে নেপথ্যের কিছু তথ্য জেনে হাইকমান্ড ক্ষুব্ধ হন।
এই তথ্যের সত্যতা মেলে শোকজ নোটিশে স্বাক্ষর করা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্যেও। রিজভী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, দলের নাম ব্যবহার করে নেতা-কর্মীদের বিভ্রান্ত করে সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে কেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না- সে বিষয়ে শওকত মাহমুদকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এবং হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে পাঁচ দিনের মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে লিখিত জবাব জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
২০ দল শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব নূর হোসাইন কাসেমীর জানাজা হয় সোমবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এলাকায়। জানাজায় লক্ষাধিক লোক অংশ নেন। জানাজার পর দুপুরে রাজধানীর গুলিস্তান ও পল্টন এলাকায় হঠাৎ করে পেশাজীবী পরিষদের ব্যানারে বিএনপির কয়েক হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থক অবস্থান নেন। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন শওকত মাহমুদ, সাদেক খান ও কল্যাণ পার্টির সভাপতি সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। পরে লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাস ছুঁড়ে নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট এলাকায়ও রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন অবস্থান নেওয়া নেতাকর্মীরা।
এসময় তারা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। জানা গেছে, পেশাজীবী পরিষদের এই বিক্ষোভ কর্মসূচিটি হওয়ার কথা ছিল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে। কিন্তু হঠাৎ স্থান বদল করে সেটি করা হয় পল্টন-জিরো পয়েন্ট এলাকায়। এই কর্মসূচিতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীরও উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কর্মসূচিতে যোগ দিতে তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবেও গিয়েছিলেন। বিএনপির সূত্রমতে, হাফিজ উদ্দিন ওই বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচিতে না গেলেও এসম্পর্কে তিনি জানতেন।
এদিকে শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়ায় ক্ষুব্ধ দলের দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতা।
এতে ক্ষুব্ধ মেজর (অব.) হাফিজ আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করার ঘোষণা দিয়েছেন। এতে তিনি তার বিরুদ্ধে দেওয়া শোকজের উত্তর জানাবেন। এ ছাড়া দল ও নেতা সম্পর্কে তার মতামত তুলে ধরে পুরো রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে মনে করছেন বিএনপির অনেক নেতা।
দলে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা নিয়ে জ্যেষ্ঠ নেতারা আপনাকে ঘিরে সন্দেহ করছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে মেজর হাফিজ বলেন, ‘দেখুন, আমি বলছি যে আমি আনুষ্ঠানিকভাবে জবাব দেব৷ এখন ব্যাখ্যা দেব না।’
দল থেকে পদত্যাগের কথা ভাবছেন কি না- এমন প্রশ্নে বিএনপির সাবেক মন্ত্রী বলেন, ‘শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে জানাব সব।’
অন্যদিকে শওকত মাহমুদ কারণ দর্শানোর নোটিশের (শোকজ) জবাব দিয়েছেন। বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) রাতে তার একান্ত সহকারি আবদুল মতিন খামের ভেতর জবাবের চিঠি নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পৌঁছে দেন।- পূর্ব-পশ্চিম
Leave a Reply