অনলাইন ডেস্ক:
কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের বেহাল দশা। ৫৯ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ৯০ ভাগ সড়কে গর্ত, খানাখন্দ এবং ধুলাবালির কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। এছাড়া মহাসড়কে ফোর লেনের কাজের ধীরগতি এবং বর্ধিতকরণের কাজে ভোগান্তি আরও বেড়েছে। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু হলেও সড়কের পাশে বড় গাছ এবং বিদ্যুতের খুঁটি থাকায় এ সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ ধীরগতিতে চলছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
মহাসড়কে ফোর লেনের কাজের ধীরগতিতে সবাই ক্ষুব্ধ। স্বয়ং অর্থমন্ত্রীও ধীরগতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। গত (১৯ ডিসেম্বর) বৃহস্পতিবার রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘মহাসড়কের আয়ুষ্কাল: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘রাস্তার খারাপ অবস্থার কারণে নিজের এলাকায় যেতে লজ্জা লাগে। সড়কের বেহাল অবস্থার জন্য লজ্জায় গাড়ির গ্লাস তুলে রাখতে হয়, নামানো যায় না। দ্রুতও যাওয়া যায় না, রাস্তা খারাপ। মানুষ গালমন্দ করে।’
অন্যদিকে (২৩ ডিসেম্বর) সোমবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘নির্মাণ কাজে ধুলা ওড়াটাই স্বাভাবিক। আমি উনাকে (অর্থমন্ত্রী) বলেছি। ওই রাস্তাটি (কুমিল্লা-নোয়াখালী) ফোর লেন করা হচ্ছে। কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কে তো ধুলোবালি উড়বেই, এটাই বাস্তবতা। উনি (অর্থমন্ত্রী) তো ঢাকা থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত ভালোভাবেই যাচ্ছেন।’
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লা পদুয়ারবাজার বিশ্বরোড এলাকার দুই কিলোমিটার সড়কে ৫ মাস ধরে চার লেনের কাজ হচ্ছে। দুই লেনের কাজ কিছুটা শেষ হলেও বাকি আছে আরও দুই লেনের কাজ। এখনও বিদ্যুতের খুঁটিগুলো দাঁড়িয়ে আছে। বর্ধিতকরণের কাজও বাকি আছে। সড়ক উন্নয়নের কাজ ধীরগতিতে হওয়ার কারণে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা থাকে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ কুমিল্লা জানায়, প্রকল্প শুরুর এক বছর পর লাকসাম থেকে লালমাই পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার এলাকার টেন্ডার হয় গত নভেম্বর মাসে। এখন টেন্ডার ওপেন হবে। লাকসাম দৌলতগঞ্জ বাজার বাইপাস ও লালমাই উপজেলার বাগমারা বাজার এলাকার বাইপাসের জমি এখনও অধিগ্রহণ বাকি আছে। এই দুই বাজারেই বেশি যানজট সৃষ্টি হয়।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ কুমিল্লা সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা নগরীর টমছম ব্রিজ থেকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ পর্যন্ত ৫৯ কিলোমিটার ফোর লেন উন্নীতকরণের কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর জেলাসহ সারা দেশের মানুষ উপকৃত হবে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হওয়া কাজ ২০২০ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ১৭০ কোটি টাকা।
এই রুটে চলাচলকারী উপকূল বাস সার্ভিসের পরিচালক অধ্যাপক কবির আহমেদ ও শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কাজী মোতাহের হোসেন জানান, এই সড়কের গর্ত, খানাখন্দ এবং ভাঙা রাস্তার কারণে প্রতিদিন গাড়ি নষ্ট হয়। যা আয় করি তা গাড়ি মেরামতেই চলে যায়।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মো. আহাদ উল্লাহ বলেন, ‘৫৯ কিলোমিটার কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে চার লেনের কাজ চলছে। খাল, বিল, গর্ত ভর্তি করা ও সড়কের পাশের বিদ্যুতের খুঁটি সরানোসহ বর্ধিতকরণের কাজ নিয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। সড়কের অনেক অংশের কাজ মোটামুটি শেষ পর্যায়ে। এছাড়া বাকি থাকা প্রকল্পের ১৭ কিলোমিটার এলাকার টেন্ডার চলতি সপ্তাহে ওপেন করা হবে। ভূমি অধিগ্রহণ করে আমরা দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা করবো।’
Leave a Reply